স্বাধীনতার পর ৭৫ বছরের ধারা অব্যাহত, ২৯ বার নতুন প্রধানমন্ত্রী পেলেন পাকিস্তানবাসী
Connect with us

আন্তর্জাতিক

স্বাধীনতার পর ৭৫ বছরের ধারা অব্যাহত, ২৯ বার নতুন প্রধানমন্ত্রী পেলেন পাকিস্তানবাসী

Parama Majumder

Published

on

Rate this post

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: দেশ স্বাধীনের ৭৫ বছর ধরে বিশ্বের ইতিহাসে একমাত্র নিজেদের অতীত ঐতিহ্য এখনও বজায় রেখেছে ভারতের প্রতিবেশী দেশ Pakistan। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের শাসনভার নিজেরদের কাঁধে তুলে নিলেও নানা কারণে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রধানমন্ত্রীই মন্ত্রী হিসেবে নিজেদের পাঁচবছরের মেয়াদ পূর্ন করতে পারেননি।

অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যাবে, ১৯৪৭ সালের পর পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী বদল হয়েছে ২৯ বার। যারফলে গত ৭৫ বছরে মোট ২৯ জন নতুন-নতুন প্রধানমন্ত্রীদের মুখ দেখেছেন পাকিস্তানবাসী। তবে কেউই নিজেদের রেকর্ড ভাঙতে পারেননি। এমনকি ব্যাতিক্রম নয়, শনিবার মধ্যরাতে গদিচ্যুত হওয়া Imran Khan ও। আস্থাভোটে হেরে গিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে ইতিমধ্যে ইসলামাবাদও ছেড়েছেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী। যদিও তিনি এখন কোথায় রয়েছেন সেই ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি সেভাবে।

এদিকে পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে কখনও দুর্নীতির অভিযোগে, কখনও সরাসরি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে, এমনকী ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে জোর করে পদত্যাগ করানো হয় ২৯ জন প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত মেয়াদ দুই সপ্তাহ, আর দীর্ঘতম মেয়াদ চার বছর দুই মাস। সবচেয়ে বেশি, তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মিয়া মুহাম্মদ নওয়াজ শরিফ, ১৯৯০ সালে, ১৯৯৭ সালে এবং ২০১৩ সালে। যদিও বর্তমানে পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন বিরোধি নেতা শাহবাজ শরিফ। যার অন্য একটি পরিচয় হল, তিনি প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই।

Advertisement

একনজরে দেখে নিন ৭৫ বছরের ইতিহাসে কারা-কারা ছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে: 

লিয়াকৎ আলি খান: পাকিস্তানের মসনদের এই অধরা যাত্রার সূচনা ঘটে লিয়াকৎ আলি খানের হাত ধরেই। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু মসনদে মাত্র চার বছর দু’মাসই ছিলেন। মুসলিম লিগের হয়ে লহৌরে প্রচারের সময় রাওয়ালপিন্ডিতে খুন হন তিনি।

স্যর খোয়াজা নিজামউদ্দিন: দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসবে ১৯৫১ সালের ১৭ অক্টোবর দায়িত্বগ্রহণ করেন। কিন্তু দু’বছরেরও কম সময় মসনদে টেকেন তিনি। তাঁর আমলে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে দাঙ্গা চরম আকার ধারণ করে। তার জেরে গভর্নর জেনারেল গোলাম মহম্মদ পদত্যাগের নির্দেশ দেন। অমান্য করায় ১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল তাঁকে অপসারণ করা হয়।

Advertisement

মহম্মদ আলি বোগরা: ১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল দায়িত্বগ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালের ১২ অগস্ট তাঁকে অপসারণ করেন তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ইস্কান্দর মির্জা। আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে মতানৈক্য ঘিরে বিরোধ বাধে। দেশের অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারান তিনি।
চৌধরি মহম্মদ আলি: ১৯৫৫ সালের ১২ অগস্ট পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। তাঁর হাতেই পাকিস্তানের সংবিধানের নীল নকশার সূচনা। দলের সদস্যদের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন তিনি। মাত্র এক বছর এক মাস ক্ষমতায় ছিলেন।

হুসেন শাহিদ সোহরাবর্দি: ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইস্কান্দর মির্জার সঙ্গে মতবিরোধের জেরে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয় ১৯৫৭ সালের ১৭ অক্টোবর।

আরও পড়ুন: রুশ সেনার নির্মম অত্যাচার, প্রাণে বাঁচতে দুঃসাহসিক কাজ ইউক্রেনীয় তরুণীদের

Advertisement

ইব্রাহিম ইসমাইল চান্দ্রিগড়: দু’মাসেরও কম সময় মসনদে ছিলেন। ১৯৫৭ সালের ১৭ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।৫৫ দিনের মাথায় অ্যাসেম্বলিতে আস্থাভোটে হেরে যান। তার জেরে পদত্যাগ করতে হয়।

ফিরোজ খান নুন: ইস্কান্দর মির্জা নিজে তাঁকে মনোনীত করেছিলেন। ১৯৫৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর শপথ নেন। কিন্তু দু’জনের সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে তলানিতে এসে ঠেকে।১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর তাঁকে অপসারণ করা হয়। তাঁর পতনের পরই জেনারেল আয়ুব খান চিফ মার্শাল ল’র প্রশাসক নিযুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনীত হন আয়ুব। পরব্রতী কালে প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং প্রেসিডেন্টের দফতরে মিলিয়ে দিয়ে সেনা অভ্যুত্থান ঘটান আয়ুব। তবে বার বার প্রধানমন্ত্রী বদলের চেয়ে আয়ুবের হাতে কিছুটা হলেও স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেছিল পাকিস্তান।

নুরুল আমিন: মাত্র ১৩ দিন মসনদে ছিলেন। ১৩ বছরের মার্শাল ল’ অতিক্রান্ত হওয়ার পর স্বৈরাচারী ইহাইয়া খানের প্রশাসনে প্রধানমন্ত্রী হন আমিন। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই সময় বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ঘটেছে। পাকিস্তানের পরাজয়ের পর ১৩ দিনের মাথায় তল্পিতল্পা গুটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বেরিয়ে যেতে হয় তাঁকে।

Advertisement

জুলফিকর আলি ভুট্টো: ১৯৭৩ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে ফের নির্বাচনে জয়ী হন। কিন্তু স্বৈরাচারী সেনা প্রধান জেনারেল মহম্মদ জিয়া উল-হক তাঁকে বন্দি করেন। ১৯৭৯ সালে ফাঁসি হয় ভুট্টোর।

মহম্মদ খান জুনেজো: ১৯৮৫ সালের ২৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী হন। সেই সময় দেশে সেনা কর্তৃত্ব চলছে। ১৯৮৮ সালের ২৯ মে তাঁর সরকারে অবলুপ্তি ঘটে। জিয়া উলের সঙ্গে মতানৈক্যের জেরেই মসনদ খোয়াতে হয় তাঁকে।

বেনজির ভুট্টো: দেশের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বেনজির। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তাঁর হাত ধরেই সেনা শাসনের অবসান ঘটে পাকিস্তানে।১৯৮৮ সালের ৯ ডিসেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন বেনজির। কিন্তু তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এতই বৃদ্ধি পায় যে ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট তাঁকে ইমপিচ করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোলাম ইশাক খান।

Advertisement

নওয়াজ শরিফ: প্রথম বার ১৯৯০ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শরিফ। তিন বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তাঁর সরকার ভেঙে যায়, ১৯৯৩ সালের ১৮ এপ্রিল। সে বছর জুলাই মাসে ইস্তফা দেন।

বেনজির ভুট্টো: দ্বিতীয় বার ১৯৯৩ সালের ১৯ অক্টোবর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন বেনজির। প্রথম দফার থেকে কিছু দিন বেশি টিকলেও, ১৯৯৬ সালের ৫ নভেম্বর দুর্নীতির অভিযোগেই তাঁর সরকার ভেঙে দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফারুখ লেঘরি।

নওয়াজ শরিফ: ১৯৯৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতে ক্ষমতায় ফেরেন। জেনারেল পারভেজ মুশারফকে তিনিই তুলে আনেন। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কে ভাঁটা পড়ে। ১৯৯৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সেনা অভ্যুত্থান ঘটলে শরিফ সরকার ভেঙে যায়। দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন মুশারফ।

Advertisement

মীর জাফরউল্লা খান জামালি: দীর্ঘ দিন প্রধানমন্ত্রী পদ খালি পড়ে থাকার পর ২০০২ সালের ২১ নভেম্বর নিযুক্ত হন জামালি। কিন্তু প্রশাসকের চেয়ে মুশারফের অনুগত হিসেবেই কটাক্ষ শুনতে হত তাঁকে। মুশারফের সঙ্গে মতানৈক্যেরই খেসারত দিতে হয়। ২০০৪ সালের ২৬ জুন তাঁকে অপসরাণ করেন মুশারফ।

চৌধরি সুজাত হুসেন: সংসদীয় নির্বাচনে জিতে ২০০৪ সালের ৩০ জুন ক্ষমতায় আসেন। সে বছর ২৭ আগস্টই শওকত আজিজকে আসন ছেড়ে দেন।

শওকত আজিজ: ২০০৪ সালের ২৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পদে ছিলেন ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন। সংসদীয় মেয়াদ শেষ হতে আসন ছেড়ে দেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: ইতিহাস অক্ষুণ্ণ পাকিস্তানের! মধ্যরাতেই গদিচ্যুত হলেন ইমরান খান

ইউসুফ রজা গিলানি: ২০০৮ সালের ২৫ মার্চ থেকে ২০১২ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। ত্রিশঙ্কু অ্যাসেম্বলিতে তাঁকে জোট সরকারের মাথা করা হয়। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ হন। শেষমেশ তাঁর পদ বাতিল করে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্তও হন।

রজা পারভেজ আশরফ: ২০১২ সালের ২২ জুন থেকে ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। পাকিস্তান পিপলস পার্টি তাঁকে মনোনীত করে। কিন্তু বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন।

Advertisement

নওয়াজ শরিফ: ২০১৩ সালের ৫ জুন থেকে ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই পর্যন্ত তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু পানামা পেপারস দুর্নীতি মামলায় তাঁকে ইমপিচ করে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। আজীবন নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার উপরও নিষেধাজ্ঞা চাপে। ২০১৮ সালে হিসেব বহির্ভূত আয় মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন শরিফ। কিন্তু চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে আর দেশে ফেরেননি।

শাহিদ খাকান আব্বাসি: শরিফের বাকি পড়ে থাকা মেয়াদ পূর্ণ করতে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আব্বাসি। দেশের ২১তম প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। নতুন করে নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ৩১ মে অ্যাসেম্বলি ভেঙে যায়।

আরও পড়ুন: ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয়েছে বাণিজ্যচুক্তি, মোদির মন পসন্দ খিচুড়ি রান্না অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর

Advertisement

ইমরান খান: প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ইমরান। ২০২৩ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। শনিবার আস্থাভোটে পরাজিত হয়ে ক্ষমতাচ্যূত হলেন তিনি।

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.