দেশের খবর
উদয়পুরে দর্জিকে গলা কেটে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার ২, জারি ১৪৪ ধারা
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: রাজস্থানের উদয়পুরে মঙ্গলবার এক দর্জিকে নিশংসভাবে গলাকেটে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই অপরাধীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে উদয়পুরের পার্শ্ববর্তী জেলা রাজসমন্দের ভিম এলাকা থেকে ওই দুই খুনি মহম্মদ রিয়াজ আখতার ও গাউস মহম্মদকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে জানা গিয়েছে।
সম্প্রতি নবিকে নিয়ে কটূক্তি করা বিজেপির প্রাক্তন মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে সমর্থন জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছিলেন উদয়পুরের ধানমন্ডির বাসিন্দা কট্টর হিন্দুত্ববাদী হিসেবেই পরিচিত এবং পেশায় দর্জি কানাহাইয়া লাল। সেই কারণেই মঙ্গলবার দুপুরে আচমকাই খদ্দের সেজে কানাহাইয়া লালের দোকানে চড়াও হয় উয়পুরের সুরাজপোলের বাসিন্দা মহম্মদ রিয়াজ আখতার এবং গাউস মহম্মদ। তারপরই আচমকাই কানহাইয়া লালকে আক্রমণ করে তারা। এবং নৃশংসভাবে গলা কেটে কানহাইয়া লালকে খুন করে। শুধু তাই নয়, পুরো খুনের ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিংও করা হয়। এবং খুনের পরে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেয় তারা।
অপরাধীরা তিনটি ভিডিও পোস্ট করে। একটি ভিডিওতে কিভাবে তারা খুন করেছে তার বর্ণনা দিয়েছে। অপর একটি ভিডিওতে তাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও হুমকি দিতে শোনা যায়। আর তৃতীয় ভিডিওতে তারা তাদের উদ্দেশ্যের কথা জানিয়েছে। এই ভিডিওটি গত ১৭ জুন রেকর্ড করা হয়েছিল।
প্রকাশ্য দিবালোকে খুনের সেই ভিডিও এবং ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই গোটা উদয়পুর শহরজুড়েই উত্তেজনা এবং অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোটা জেলাতেই মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাতে ধানমন্ডি, ঘন্টাঘর-সহ উদয়পুরের সাত থানা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। গোটা রাজ্যে হাই এলার্ট জারি করেছে প্রশাসন। রাজস্থান পুলিশের পক্ষ থেকেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, যারা আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তাদের কোনোভাবেই ছাড়া হবে না।
গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই অপরাধীদের দ্রুত ধরার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। সেইমতো মঙ্গলবার রাতেই ২ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে রাজস্থান পুলিশ। অপরাধীদের কড়া শাস্তি হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে, রাজ্যবাসীকে শান্ত থাকারও অনুরোধ করেছেন তিনি। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি উদয়পুরে যুবকের জঘন্য হত্যার নিন্দা করছি। এ ঘটনায় জড়িত সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং পুলিশ অপরাধের গভীরে যাবে। আমি সব পক্ষকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানাই। এ ধরনের জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তিকে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে। উদয়পুরে যুবক খুনে অভিযুক্ত দুজনকেই রাজসমন্দ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই মামলার তদন্ত, কেস অফিসার স্কিমের অধীনে করা হবে এবং দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। আমি আবারও সকলের কাছে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য ইতিমধ্যেই সন্ত্রাস দমন সংস্থা এনআইএ-এর চার সদস্যের এক প্রতিনিধি দলকে রাজস্থানে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় বৃহত্তর কোনও ষড়যন্ত্রের যোগ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে এনআইএ-এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (আইবি) আধিকারিকরাও যৌথভাবে তদন্ত করবে। এই ঘটনার সঙ্গে জিহাদি গোষ্ঠীর যোগ রয়েছে বলেই প্রাথমিক অনুমান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার।
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা। গোটা ঘটনার জন্যই বিজেপি অশোক গেহলট এবং কংগ্রেসের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছে। রাজস্থান বিজেপির প্রধান সতীশ পুনিয়া রাজ্যের অশোক গেহলটের নেতৃত্বাধীন সরকারকে আক্রমণ করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন, ঘটনাটি মুখ্যমন্ত্রী এবং কংগ্রেসের তুষ্টি নীতির ফল।
উদয়পুরের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও। তিনি বলেছেন, ‘উদয়পুরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। ধর্মের নামে নৃশংসতা সহ্য করা যায় না। যারা এই নিষ্ঠুরতার কারণে সন্ত্রাস ছড়িয়েছে তাদের অবিলম্বে শাস্তি হওয়া উচিত। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে ঘৃণাকে পরাজিত করতে হবে। আমি সবার কাছে আবেদন করছি, দয়া করে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখুন।’ এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি’ও গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করে রাজস্থান সরকারকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।