খেলা-ধূলা
বাটলারের ‘বিরাট’ কীর্তিতে স্বপ্নভঙ্গ বিরাটদের, ফাইনালে গুজরাতের সামনে রাজস্থান
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: আইপিএলের মঞ্চে আবারও স্বপ্নভঙ্গ বিরাট কোহলিদের। এবারও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ‘রয়্যাল’ স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের। শুক্রবার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বাটলারের শতরানের ঝড়ে আরসিবি-কে ৭ উইকেটে হারিয়ে আইপিএল ফাইনালে জায়গা করে নিল প্রথমবারের চ্যাম্পিয়ন রজস্থান রয়্যালস। ২৯ মে এই নরেন্দ্র মোদির স্টেডিয়ামেই দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ১৩ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে গুজরাতের বিরুদ্ধে নামবেন সঞ্জু স্যামসনরা। গত বুধবার ইডেনে এই গুজরাতের কাছেই প্রথম কোয়ালিফায়ারে হারতে হয়েছিল ২০০৮ সালের চ্যাম্পিয়নদের। তাই এবার রাজস্থানের কাছে খেতাব জিতে মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার পালা।
শুক্রবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে টসে জিতে আরসিবি-কে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন রাজস্থানের অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আবারও ব্যর্থ আরসিবি-এর ওপেনিং জুটি। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলেই বিরাট কোহলিকে (৭) ফিরিয়ে দেন গত ম্যাচের ভিলেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। এরপর অধিনায়ক ফাফ ডু’প্লেসির সঙ্গে প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে ওঠার কাজটা সুন্দরভাবে করেন গত ম্যাচে দুরন্ত শতরান করা রজত পাতিদার। দ্বিতীয় উইকেটে দু’জনের জুটিতে ওঠে ৭০ রান। ৭৯ রানের মাথায় ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটিকে ভাঙেন ম্যাকয়। ২৫ রান করে ফেরন ফাফ। এরপর ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে স্কোরবোর্ডে রানের সংখ্যা বাড়ানোয় মন দেন পাতিদার। কিন্তু এদিন ম্যাক্সওয়েলও বেশিদূর এগোতে পারেননি। ১৩ বলে ২৪ রান করে বোল্টের শিকার হন। এলিমিনেটরে লখনৌয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো দুরন্ত ১১২ রানের ইনিংস খেলার পর এদিনও হাফ সেঞ্চুরি করলেন পাতিদার। কিন্তু তারপর আর বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি। অশ্বিনের বলে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে বাটলারের হাতে জমা পড়েনি। তাঁর ৪২ বলে ৫৮ রানের ইনিংসটি সাজান ছিল চারটি বাউন্ডারি ও তিনটি ওভার বাউন্ডারি দিয়ে। পাতিদার যখন আউট হন তখন আরসিবি’র রান ৪ উইকেটে ১৪০। এরপর ম্যাকয় ও কৃষ্ণর দাপটে আর কোনও ব্যাটসম্যানই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। লোমরোর (৮), দীনেশ কার্তিক (৬), হাসারাঙ্গা (০), হর্সল প্যাটেল (১) এলেন আর গেলেন। ফলে ৮ উইকেটে ১৫৭ রানেই শেষ হয় আরসিবি’র ইনিংস। তিনটি করে উইকেট নিলেন ম্যাকয় ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। গত বুধবার ইডেনে প্রথম কোয়ালিফায়ারে তাঁর শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে গুজরাতকে ফাইনালে তুলেছিলেন মিলার। এদিন ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে তারই যেন শাপমোচন করলেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ।
ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে রাজস্থানের দরকার ছিল ১৫৮ রান। কিন্তু শুরু থেকেই জস বাটলারের ঝড়ো ব্যাটিং রাজস্থানের দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নটাকে উজ্জ্বল করে দিল। তবে বাটলারের সঙ্গে শুরুটা দুরন্ত করেছিলেন যশস্বী জয়সওয়ালও। যদিও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ১৩ বলে ২১ রান করে হ্যাজেলউডের শিকার হন। অধিনায়ক সঞ্জুও ২১ বলে ২৩ রান করে হাসারাঙ্গার শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। দেবদত্ত পারিক্কালও (৯) হ্যাজেলউডের শিকার হয়ে দ্রুত ফিরে যান। কিন্তু এদিন রাজস্থানকে ফাইনালে তোলার গোটা দায়িত্ব একা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বাটলার। ঝোড়ো শতরান করে ১৩ বছর পর রাজস্থানকে ফাইনালে তুলে মাঠ ছাড়লেন। এদিন তাঁর সামনে আরসিবি বোলারদের কোনও অস্ত্রই কাজে আসেনি। ১১ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটে জিতে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে নেয় রাজস্থান। ৬০ বলে ১০ বাউন্ডারি ও হাফ ডজন ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ১০৬ রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়েন ম্যাচের সেরা বাটলার।
এবারের আইপিএলে এই নিয়ে চতুর্থ শতরান করলেন বাটলার। সেইসঙ্গে বিরাটদের বিরুদ্ধেই বিরাটের ‘বিরাট’ কীর্তিকে স্পর্শ করলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান। ২০১৬ সালের আইপিএলে ৪ শতরান করেছিলেন বিরাট। এবার তাঁর দলের বিরুদ্ধেই এবারের আইপিএলে চতুর্থ শতরানটা করে সেই রেকর্ডকে স্পর্শ করলেন বাটলার। এ বারের আইপিএলে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে দু’টি এবং কলকাতার বিরুদ্ধে একটি শতরান করেছিলেন বাটলার। আইপিএলে বিরাটের মোট শতরানের সংখ্যা পাঁচ। শুক্রবার সেই সংখ্যাকেও ছুঁয়ে ফেললেন বাটলার।