রাজনীতি
কৃষকদের আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে অবশেষে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ মানেই বড় ‘চমক’। গত কয়েক বছরে এটা দেশ ও বাসি ভালো করেই বুঝে গিয়েছে। তাই শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ নিয়ে গোটা দেশেই তৈরি হয়েছিল আগ্রহ। গুরুনানক জয়ন্তীতে দেশবাসীর উদ্দেশে বড় ঘোষণাই করলেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় বিতর্কিত ও বহুচর্চিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী। গত বছর এই বিতর্কিত কৃষি বিল সংসদের দুই কক্ষে পাশ হয়েছিল। তার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন রাজ্য বিতর্কিত এই তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষকদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে। পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান সহ সমস্ত রাজ্যেই আন্দলনের ঢেউ ওঠে। প্রধানত পঞ্জাব এবং উত্তর প্রদেশে আন্দোলনের তীব্রতা ছিল বেশি। রাস্তা অবরোধ, রেল রোক, গাড়িতে আগুন দেওয়া, সবই হয়েছিল। বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের আনা এইল তিন আইন নিয়ে বারবর সরগরম হয়েছে জাতীয় রাজনীতি। উত্তর হয়েছে রাজ্যসভা ও লোকসভা। কৃষকদের আন্দোলনের সমর্থনে প্রতিবাদ, আন্দোলনে শামিল হয়েছে দেশের সমস্ত অবিজেপি রাজনৈতিক দল। প্রজাতন্ত্র দিবসে লালকেল্লা সহ দিল্লির রাজপথ কৃষকদের আন্দোলনে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল।
দীর্ঘদিন ধরেই আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন কৃষকরা। সরকার আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেও আইন প্রত্যাহার নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন কৃষকরা। অবশেষে কৃষকদের সেই আন্দোলনের কাছেই পিছু হটতে বাধ্য হল কেন্দ্রীয় সরকার। শুক্রবার সকালে গুরু নানকের জন্মদিনের পুণ্য তিথিতে জাতীর উদ্দ্যেশে ভাষণ দিয়ে কৃষি বিল বাতিল করলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে কাউকে দোষারোপ করেননি। নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের সরকার কৃষকদের কল্যাণের কথা ভেবেই, দেশের উন্নতির কথা ভেবেই এই আইন এনেছিল। আমাদের উদ্দেশ্য পবিত্র হলেও কিছু কৃষকদের এই কথা বোঝাতে পারিনি। কৃষকদের এক অংশই এর বিরোধিতা করলেও, তা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দেশের কৃষিবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, কৃষি বিশেষজ্ঞরা কৃষকদের নতুন তিন কৃষি আইনের সুবিধা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। আমরা দুই বছরের জন্য আইন স্থগিত রাখার প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। আইনের যে অংশ গুলো নিয়ে তাদের সমস্যা ছিল, তা সংশোধনের প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টেও পৌঁছয়।
এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমরা দেশের কৃষকদের হয়তো বোঝাতে পারিনি। এটা দোষারোপের সময় নয়। আগামী শীতকালীন অধিবেশনে এই বিল বাতিল বলে ঘোষণা করা হবে।’ এছাড়া প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনরত কৃষকদের বাড়ি ফিরে গিয়ে কৃষি কাজে মনোযোগ দিতে অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার ফলে দেশে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল তা আগামি দিনে থেমে যাবে কি না, সেটা ভবিষ্যতেই জানা যাবে। তবে শুধু আইন প্রত্যাহারই নয়, কৃষকদের জন্য জিরো বাজেট কৃষিকাজ প্রকল্পের ঘোষণাও করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কৃষক কল্যাণের জন্য একটি কমিটি গঠনের কথাও বলেছেন তিনি।
এই বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি, চাষের সময়কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বদল আনা সহ একাধিক বিষয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যেই একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা থাকবেন। কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী সহ বিভিন্ন গবেষকরা থাকবেন।’ প্রধানমন্ত্রীর এদিনের এই সাহসী সিদ্ধান্তে বিরোধীদের আন্দোলন অনেকটাই ভোঁতা হয়ে গেল বলেই মনে করছে দেশের রাজনৈতিক মহল। সামনেই উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। সেটাকে মাথায় রেখেই নরেন্দ্র মোদি সরকারের এটা মাস্টার স্ট্রোক বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।