দেশের খবর
হাসপাতাল থেকেই আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার বার্তা সোনিয়ার
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত কয়েকদিন ধরেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। গতকালই তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর মধ্যেও হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই অগ্নিপথ নিয়ে দেশে আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন সোনিয়া গান্ধী। শনিবার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে অসুস্থ শরীর নিয়েই একটি চিঠি দিয়েছেন সোনিয়া। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, তাঁর দল আন্দোলনকারীদের পাশের দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে। কারণ তাঁরা বিতর্কিত এই প্রকল্পটি প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে। সেইসঙ্গে তিনি হিংসা দূরে রেখে শান্তিপূর্ণভাবে অহিংস পথে আন্দোলন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
সোনিয়া গান্ধী চিঠিতে হিন্দিতে লিখেছেন, ‘নতুন সামরিক নিয়োগের পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণ দিশাহীন। এবং সেনাবাহিনীর চাকরি প্রার্থীদের স্বার্থকে মাথায় না রেখেই এই প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘আমি হতাশ যে সরকার আপনার বক্তব্যকে উপেক্ষা করেছে এবং নতুন সামরিক নিয়োগ প্রকল্প ঘোষণা করেছে। যা দিশাহীন। অনেক প্রাক্তন সেনা আধিকারিক নতুন এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ ব্যাপারে সরকার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কোনও আগাম আলোচনাও করেনি।’ চিঠিতে সোনিয়া গান্ধী আরও লেখেন, ‘আপনারা সেনাবাহিনীতে কাজ করার জন্য সকলেই উৎসাহী। কিন্তু গত ৩ বছর ধরে সেনাবাহিনীতে কোনও নিয়োগ হয়নি। প্রায় এক লক্ষ পদ এই মুহূর্তে সেনাবাহিনীতে খালি রয়েছে। বায়ুসেনায় নিয়োগের জন্য পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে, কিন্তু এখনও তার ফল বেরোয়নি। হাজার হাজার যুবক নিয়োগের জন্য অপেক্ষা করছেন। এইসব যুবকের পাশে থেকে কংগ্রেস সহানুভূতি জানাচ্ছে।’
সোনিয়া গান্ধীর এই চিঠিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। সোনিয়া গান্ধী আরও লিখেছেন, ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আপনাদের স্বার্থরক্ষা করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি মতো দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হিসেবে আমরা হিংসা ছাড়া ধৈর্য এবং শান্তি বজায় রেখেই এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজ তুলব। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করুন কংগ্রেস পাশে থাকবে।’
অগ্নিপথের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই দেশের ১৩ রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আন্দোলন। ইতিমধ্যেই সেকেন্দ্রাবাদে পুলিশের গুলিতে এক আন্দোলনকারী মৃত্যুও হয়েছে। প্রায় ৬০০ জন বিক্ষোভকারীকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে রাহুল গান্ধীও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আন্দোলনকারীদের এই দাবি মেনে নেওয়ার পাশাপাশি কৃষি আইনের মতোই এই প্রতিরক্ষা নিয়োগ প্রকল্পটি প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। রাহুল গান্ধী টুইটারে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেও বলেছিলাম যে প্রধানমন্ত্রীকে কালা কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে। একইভাবে তাঁকে ‘মাফিবীর’ হয়ে দেশের তরুণদের দাবি মেনে নিতে হবে এবং অগ্নিপথ প্রকল্প ফিরিয়ে নিতে হবে।’
গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ঘোষণা করেন দেশের তিন প্রতিরক্ষা বাহিনী- সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বায়ুসেনাতে চার বছরের চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করা হবে। আর সেই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় অগ্নিপথ। আর এই প্রকল্পে যাঁরা নিযুক্ত হবেন তাঁদের বলা হবে অগ্নিবীর। ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন। চার বছরের কর্মজীবনের শেষে তাদেরকে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা নগদ দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীহ। কেন্দ্রের এই ঘোষণার পরই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গোটা দেশ। কংগ্রেসের দাবি, এই প্রকল্পটি বিতর্কিত, ঝুঁকিবহুল ও সেনাবাহিনীর দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহ্যকে বিপর্যস্ত করবে।