আন্তর্জাতিক
খাদ্য-পণ্য জ্বালানি সঙ্কটে জেরবার শ্রীলঙ্কা, পরিস্থিতি সামাল দিতে চরম সিদ্ধান্ত নিলেন প্রেসিডেন্ট

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: প্রবল অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছে ভারতের প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র SriLanka। অর্থনৈতিক দিক থেকে পুরোপুরি দেউলিয়া হয়ে পড়েছে দেশটি। চিনের থেকে ঋণ নিয়ে দেউলিয়া অবস্থা কলম্বোর। একদিকে ঋণের বোঝা অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে জর্জরিত শ্রীলঙ্কার জনগণ।
এই অবস্থায় দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজপাক্ষে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনার হাতে ক্ষমতাভার তুলে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। শুধু তাই নয়, একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অন্যদিকে জ্বালানি সঙ্কটে ভুগছে শ্রীলঙ্কা। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিনে ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা লোডশেডিং করে রাখা হচ্ছে। এই অবস্থায় প্রেসিডেন্টে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন শ্রীলঙ্কার বাসিন্দারা।
অন্যদিকে, প্রতিবেশী দেশের এই তেলের সঙ্কট মেটাতে ইতিমধ্যে ভারত থেকে ৪০ টন তৈল্যবাহী জাহাজ এই দ্বীপরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। এছাড়াও চালের চাহিদা মেটাতে ইতিমধ্যে ৪০ হাজার টন চালও পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে ভারত সরকারের তরফ থেকে। এদিকে রফতানি কমে যাওয়া,বৈদেশিক মুদ্রার জোগানে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় চরম সমস্যার মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে শ্রীলঙ্কানদের। নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল-ডাল,দুধ থেকে শুরু করে ওষুধ সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া।
উল্লেখ্য, ভারত হল বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ। গত মাসে জ্বালানি, খাদ্য এবং ওষুধ সহ প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির পঙ্গুত্বপূর্ণ ঘাটতি কমাতে সাহায্য করার জন্য $১ বিলিয়ন ক্রেডিট লাইন প্রদান করতে সম্মত হয়েছে। চালের চালান কলম্বোকে চালের দাম কমিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে, যা এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়াও গোটা শ্রীলঙ্কাজুড়ে পেট্রলপাম্পগুলিতে ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে জ্বালানি তেল।
আরও পড়ুন: তীব্র হচ্ছে অর্থনৈতিক সঙ্কট, ১০ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখবে শ্রীলঙ্কা
এদিকে গত ১৯৪৮ সালের পর ২০২২ সালে এসে ফের ব্যাপক অর্থনৈতিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ। একদিকে ঋণ নিয়ে দেউলিয়া অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে ক্রমাগত দৈনন্দিন জিনিসের দাম বৃদ্ধিতে বিপর্যস্ত প্রায় ২২ মিলিয়ন শ্রীলঙ্কান নাগরিক। যদিও টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার বিষয়ে মুখ খুলেছেন রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সংস্থার আধিকারিক। তিনি জানিয়েছেন, জেনারেটরগুলিতে কোনও তেল নেই। এই অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁরা দিনে অন্তত ১০ ঘণ্টা বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার কাটছাঁট করতে চলেছে। এটি আগামী মাসের শুরু থেকেই করা হবে বলে জানা গিয়েছে। শ্রীলঙ্কার ৪০ শতাংশেরও বেশি বিদ্যুত হাইড্রো থেকে উত্পাদিত হয়। তবে এবছর সেভাবে বৃষ্টি না হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে পর্যাপ্ত জলের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় কয়লা ও তেল থেকে। উভয়ই আমদানি করা হয়। কিন্তু সরবরাহের জন্য দেশের কাছে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা নেই বলে সরবরাহ কম রয়েছে এখন।
আরও পড়ুন: তালিবানের নয়া ফরমান, পুরুষসঙ্গী বিনা মিলবে না বিমান সফরের অনুমতি
এদিকে, প্রধান জ্বালানি খুচরা বিক্রেতা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিলন পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (সিপিসি) জানিয়েছে, কমপক্ষে দুই দিনের জন্য দেশে কোনও ডিজেল থাকবে না। সিপিসি পেট্রোল স্টেশনগুলিতে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষারত গাড়ি চালকদের আমদানিকৃত ডিজেল আনলোড এবং বিতরণ করার পরই তেল শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে বছরের শুরু থেকে পেট্রল ৯২ শতাংশ এবং ডিজেলের ৭৬ শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানির দামও ক্রমাগত বাড়ানো হয়েছে। সরকার এলপি গ্যাস এবং কেরোসিনের সর্বশেষ চালানের জন্য ৪৪ মিলিয়ন ডলার পেতে ১২ দিন সময় নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।