বাংলার খবর
স্কুলে ছাত্র সংখ্যা শূন্য, শিক্ষিকা তিনজন, জঙ্গল না স্কুল দেখে বোঝার উপায় নেই
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: চারিদিকে বড় বড় গাছ আর জঙ্গলে ভর্তি। রয়েছে সাপের আতঙ্ক। স্কুল না অন্য কিছু, দেখে বোঝার উপায় নেই।আর রাত বাড়লেই সমাজবিরোধীদের আখড়া তৈরি হয়। দেওয়ালের বিভিন্ন জায়গা থেকে খসে পড়ছে চুন, বালি। স্কুলের জানলা দিয়ে উঁকি দিলে দেখা যাবে বেঞ্চে পড়েছে ধুলো। তার মধ্যে ক্লাসঘর গুলো রয়েছে তালা বন্ধ। হুগলির চন্দননগরের পরিচিত স্কুল সাধুচরণ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। এই জুনিয়র হাই স্কুলের গত ১৫ বছরে স্কুলের ছাত্রী সংখ্যা শূন্য! শিক্ষিকা মাত্র দু’জন। এই স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে শিক্ষক রয়েছেন ৩ জন। কয়েক বছর ধরে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে।
শহরের আনাচে কানাচে কান পাতলেই শোনা যায় সাধুচরণ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ স্কুলের কথা। জিটি রোড সংলগ্ন রথেরসড়ক এলাকায় স্কুলে খেলার মাঠ সহ সব পরিকাঠামো থাকলেও বর্তমানে শিক্ষা দফতরের উদাসীনতায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেহাল অবস্থা বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
দীর্ঘদিন ধরেই এই স্কুলে নিচের তলায় প্রাথমিক ও দোতলায় জুনিয়র হাই (বালিকা) বিভাগ চলত। অথচ স্কুলে রয়েছেন মাত্র দু’জন শিক্ষিকা। কোনও পড়াশোনার বালাই নেই। তাই মাঝে মাঝে শিক্ষিকাদের দেখাও পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, প্রাইমারি বিভাগে বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা মাত্র পাঁচ। স্কুলে শিক্ষক রয়েছে তিনজন। প্রাথমিক স্কুলটি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে। শহরের এই অন্যতম পুরনো স্কুলের এই পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা নানান অভিযোগ তুলেছেন।
সাধুচরণ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ স্কুলটি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৪১ সালে। সরকারি অনুমোদন পায় ১৯৬৪ সালে। চন্দননগর পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের জিটি রোডের পাশে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ হয়। এই জুনিয়র হাইস্কুলে কর্মরত দুই শিক্ষিকা রয়েছেন। একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ও অন্যজন সহ শিক্ষিকা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ১৯৯৭ ও সহ শিক্ষিকা ২০০৩ সালে স্কুলে যোগ দেন। ২০০৭ সাল থেকে স্কুল ছাত্রী শূন্য হয়ে যায়। ২০১৩ তাঁদের দূরের দু’টি স্কুলে বদলি করা হয়। কিন্তু, সমস্যার কথা জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন শিক্ষিকারা। আদালত তাঁদের বদলির ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। বর্তমানে তাঁরা চন্দননগরের ইস্কুলেরই শিক্ষিকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্কুল চত্বর জঙ্গলে ভরে গিয়েছে। রাতে সমাজ বিরোধীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘অবিলম্বে জুনিয়র হাই স্কুলটিকে মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করার ব্যবস্থা করুক শিক্ষা দফতর। তাহলে, এই স্কুলের প্রাথমিক স্তরের উত্তীর্ণ হওয়ার পর মেয়েরা এই স্কুলেই ভর্তি হতে পারবে। তাদেরকে অন্যত্রে যেতে হবে না। এতে স্কুলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বাড়বে। বাঁচবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।’
স্থানীয় এক অভিভাবকের কথায়, ‘যে যতই কম রোজগার করুক না কেন বর্তমানে ছেলে-মেয়েদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তির প্রবণতা বেড়েছে। সরকারি স্কুলে সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের ভর্তি করাতে চায় না। এর ফলেই সরকারি প্রাথমিক ও জুনিয়র হাই স্কুলগুলোর এই পরিস্থিতি।’ তাঁদের দাবি, শিক্ষা দফতর থেকে এলাকায় নতুন করে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অনুমতি দেওয়া বন্ধ করা দরকার। সব রকম পরিকাঠামো যুক্ত এই ধরণের স্কুলকে সরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পরিণত করলে তবেই স্কুলের হাল ফিরবে।
চন্দননগরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও এই স্কুলের পরিদর্শক অভিজিৎ সেন বলেছেন, ‘হুগলি জেলার শিক্ষা পরিদর্শকের নজরে রয়েছে এই স্কুল। স্কুলে তিন জন শিক্ষক আছেন। জুনিয়র হাই স্কুলের দু’জন শিক্ষিকা আছে। কোনও পড়ুয়া নেই। সংশ্লিষ্ট দফতরে বারংবার জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। ছাত্র-ছাত্রীদের সংখা বাড়াতে অভিযান চালানো হয়েছিল। দুই বছরের মধ্যে আমাদের স্কুলে যাতে ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায় তার চেষ্টা করব। শিক্ষা দফতরেরও নজর রয়েছে বিষয়টি।’
জেলা শিক্ষা দফতরের এক পরিদর্শক জানান, ‘২০১৪ সাল থেকে এই ভাবেই পড়ে রয়েছে স্কুলটি। শিক্ষিকারা দূরে বদলি যাতে না হন, তার জন্য আদালতেও যান। দূরে যাতে সামান্তরিত না করা হয়, তার নির্দেশ দেয় আদালত। তাই এখনও শিক্ষিকারা ওখানেই আছেন। জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও আলোচনায় বসা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন যেভাবে নির্দেশ দেবে সেই অনুযায়ী কাজ হবে।’