ধর্ম
পুণ্য স্নান পিঠেপুলি সহ নানান উপাচারের মধ্য দিয়ে পৌষ সংক্রান্তি
শীতের হিমেল ছোঁয়ায় বাঙালি মেতে ওঠে পৌষ পার্বণ বা মকর সংক্রান্তির আনন্দে৷ বাংলা পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডারে পৌষের শেষ। কৃষিজ সভ্যতায় পৌষমাসে ডালাভর্তি ফসল উঠত কৃষকদের ঘরে
বেঙ্গল এক্সপ্রেসঃ পুণ্য স্নান পিঠেপুলি সহ নানান উপাচারের মধ্য দিয়ে পৌষ সংক্রান্তি, তবে শীতের প্রকোপে ভোর কিংবা সকালে ভিড় নেই স্নানের ঘাট গুলিতে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই ঠান্ডার আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতা-সহ বাংলায়৷ বাঙালির তো বারো মাসে তেরো পার্বণ৷ ব্যতিক্রম নয় শীতকালও৷
শীতের হিমেল ছোঁয়ায় বাঙালি মেতে ওঠে পৌষ পার্বণ বা মকর সংক্রান্তির আনন্দে৷ বাংলা পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডারে পৌষের শেষ। কৃষিজ সভ্যতায় পৌষমাসে ডালাভর্তি ফসল উঠত কৃষকদের ঘরে৷ সেই আবাহন থেকেই কৃষিকাজের উদযাপনে পালিত হয়ে আসছে মকর সংক্রান্তি৷মকর সংক্রান্তিতে স্নানের পুণ্যসময় হল সকাল ৭.১৪ থেকে দুপুর ১২.৩৬ পর্যন্ত৷ পুণ্য সময় হল সকাল ৭.১৪ থেকে ৯.০২ পর্যন্ত৷ সংক্রান্তি মুহূর্ত হল ১৫ জানুয়ারি রাত ২.৪৫ মিনিটে৷
বাংলা ১৪৩০ সনের মকর সংক্রান্তি পড়েছে আজ ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪৷ বাংলা ক্যালেন্ডারে এই দিনই পৌষের শেষ দিন৷এই তিথিতে ব্রহ্ম মুহূর্ত বা শুভ ক্ষণে পুণ্যস্নান অত্যন্ত পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়৷ এই উপলক্ষে গঙ্গাসাগরে লক্ষ লক্ষ ভক্তবৃন্দদের সমাগম হলেও জেলা কিংবা অন্যত্রও রাতের অন্ধকার কাটতেই পুণ্য স্নানের ধুম লেগে যায়। তবে শীতের কারণে হয়তো এবার ভোর কিংবা সকালে দেখা মিলল না স্নান যাত্রীদের। বেলা বাড়লে কিছু মানুষজন আসে তবে তাও খুব বেশি নয়।
আরও পড়ুন-মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গা স্নানের হিড়িক
তবে ঘরে ঘরে এদিন তৈরি হয় সুবাসিত পিঠেপুলি৷ নতুন ধানের চাল থেকে প্রস্তুত পায়েস সহ দুধ নারকেল সন্দেশ ক্ষীর তিল নতুন খেজুরের গুড় এ ধরনের নানান খাদ্য উপকরণে তৈরি হয় নানান ধরনের পিঠে পৌষ সংক্রান্তির প্রধান বিষয়। তবে একান্নবর্তী পরিবার এখন অতীত! সময় অভাবে কর্মব্যস্ত গৃহীনরা এসব ঝামেলা ঝঞ্ঝাট এ জান না। তবে বাংলার এই সনাতনের রীতির আবেগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁ চালু করেছে অতীতের স্মৃতি রোমন্থনে পিঠেপুলির আয়োজন। একান্তই যদি সময়ের অভাবে সেই দোকানেও কৌশল না যায় তাহলেও হোম ডেবিলিভারির ব্যবস্থা রেখেছেন তারা । পাটিসাপটা গোকুল পিঠে সরুচুক কিংবা মালসাপিঠে বা অন্য কিছু। বাঙালির পরম্পরার মধ্যে অন্যতম বিষয় হলো পিঠে, গঙ্গা থেকে পুণ্য স্থান সেরে, এসে রোদে পিঠ দিয়ে পিঠে খাওয়া। তবে আজকে সূর্যোদয়ের পর থেকেই আদিবাসী সমাজের টুসু পুজো। নতুন ধান ওঠার আনন্দে মশগুল সমগ্র সমাজ। নতুন ধানের চাল বেটে মহিলারা মাটির নিকানো উঠানে আলপনা দিয়ে খুশির উৎসবের সূচনা করেন। অনেকে আজকের দিনে লক্ষ্মীপুজোও করে থাকেন।
তবে সূর্যোদয়ের সাথে স্নানযাত্রা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ বলেই মনে করেন ধর্মীয় বিধানদাতারা। তাইতো বিভিন্ন স্থানের ঘাটে পহেলা বৈশাখ কিংবা মহালয়ার মতোই পুণ্যস্থান যাত্রায় লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম । যেমন গঙ্গার মোহনা গঙ্গাসাগরে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে মানুষের ঢল নামে তেমনই ধর্মপ্রাণ নদীয়ার গঙ্গা এবং ভাগীরথী তীরবর্তী বিভিন্ন স্নানের ঘাটে পূণ্যার্থীদের ভিড় থাকে তবে শীতের কারণেই হয়তো এবার সে ভিড় খুব বেশি লক্ষ্য করা যায়নি আজ। কুয়াশার দাপটে দৃশ্যমানতা কমার কারণে সকাল দশটার পরে কিছু কিছু ঘাটে সামান্য কিছু মানুষজনের দেখা মেলে।