বাংলার খবর
আচার্য বিল নিয়ে রাজ্য সরকারকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি রাজ্যপালের
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: গত সপ্তাহে রাজভবনে গিয়ে নিজের আঁকা ছবি সই করে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরকে উপহার দিয়ে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছিল, অবশেষে দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের বরফ হতে চলেছে। কিন্তু সে গুড়ে বালি! মঙ্গলবার বিকালে রাজভবনে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির প্রতিনিধিদল আচার্য বিলের প্রতিবাদ জানাতেই আবারও চেনা মূর্তি ধারণ করলেন জগদীপ ধনকর।
চলতি অধিবেশনেই আচার্য বিল সহজে একাধিক বিল রাজ্য সরকার পাশ করিয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করতেই মঙ্গলবার রাজভবনে গিয়েছিল বিজেপির প্রতিনিধিদল। তারপরই একাধিক ইস্যু নিয়ে রাজ্য সরকারকে আবারও নিশানা করলেন রাজ্যপাল। তৃণমূলের বিরুদ্ধে রীতিমতো তোপ দেগে এবং আবারও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা এবং হিংসার ঘটনা নিয়ে আমি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা চলছে। সিন্ডিকেট ও মাফিয়া রাজ চলছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা হচ্ছে। যারা ভাঙছে তারা ভারতীয় নয়। কিন্তু সরকার এখনও যথাযথ কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। গণতন্ত্রে হিংসার কোনও স্থান নেই। রাজ্যে গণতন্ত্র ধুঁকছে। পুলিস প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক। আমি জানি কী ভাবে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হয়। রাজ্য যদি সঠিক পথে চলতে না পারে তা হলে আমি দেখব কী ভাবে সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য গণতান্ত্রিক পথে চলে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। রাজ্যপালও নন, মুখ্যমন্ত্রীও নন। রাজ্য প্রশাসনকে আইনের শাসন বলবৎ করতে হবে। যদি সেটা না হয় তা হলে সংবিধান অনুযায়ী আমি যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেব।’
এসএসসি ও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা নিয় এদিন রাজ্য সরকারকে নিশানা করতে ছাড়েননি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। তিনি বলেছেন, ‘যাদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে তারা কোনওদিন পরীক্ষাই দেয়নি। যুবক-যুবতীদের কর্ম জীবন শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা এইসব যুবক-যুবতীদের জীবন নিয়ে ছেলে খেলা করতে দিতে পারি না। তারা পরীক্ষা দিল, ইন্টারভিউ হল। তারপর তারা কী দেখল, তাদের চাকরি নিশ্চিত নয়। সেসব বাদ দিয়ে রাজ্যপালকে অপসারণের তৎপরতা চলছে। আচার্য পদ থেকে অপসারণের তৎপরতা চলছে।’ তারপরই রাজ্যপাল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, ইউজিসি এর নিয়ম মেনে সমস্ত বিল খতিয়ে দেখব।কোনও পক্ষপাতিত্ব করব না। যদি গ্রহণ করার মতো হয় তবে করব। না হলে করব না। কিন্তু কোনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব না। কোথাও সংবিধানকে উপেক্ষা করে এই বিল আনা হয়েছে কি না খতিয়ে দেখব। আমাদের সংবিধান খুব শক্তিশালী। যদি দেখি সংবিধানকে উপেক্ষা করে বিল আনা হয়েছে, তারপর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
উল্লেখ্য, এই বাদল অধিবেশনেই রাজ্যের সমস্ত সরকারি এবং সরকারি দফতর অধীনস্থ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে করার বিল পাস হয়েছে বিধানসভায়। কিন্তু যতক্ষণ না রাজ্যপাল চূড়ান্ত অনুমোদন দিচ্ছেন, ততক্ষণ সেই বিল কার্যকর হবে না। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য এবং রাজ্যপালের মধ্যে যে সম্পর্ক, তাতে এই সমস্ত বিলে জগদীপ ধনকর সই করবেন কিনা, তা নিয়ে প্রথম থেকেই যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। এদিন রাজ্যপালের এই বক্তব্যে সেই আশঙ্কা আরও জোরালো হল।