বাংলার খবর
বাম হাতে সই করেই চাকরিতে যোগ দিলেন রেণু
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি পাওয়ায় গত ৪ জুন কব্জি থেকে ডান হাত কেটে নিয়েছিলেন স্বামী। পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের গৃহবধূ রেণু খাতুনের এই ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল গোটা রাজ্য। হাসপাতলে দীর্ঘ লড়াই চালানোর পরও কাটা হাত আর জোড়া লাগাতে পারেননি চিকিৎসকরা। গতসপ্তাহেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। আর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার আট দিনের মাথায় অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও জেদকে হাতিয়ার করে নতুন লড়াইয়ে নেমে পড়লেন রেণু। মঙ্গলবার দুপুরে পূর্ব বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে গ্রেড-টু নার্স হিসেবে কাজে যোগ দিলেন রেণু। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে নতুন কোনও নির্দেশ না আসা পর্যন্ত রেণু এই অফিসে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য মুখ্য আধিকারিক প্রণব কুমার রায়। এদিন কাজে যোগ দিতেই রেণুকে সংবর্ধনা জানান স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা।
হাসপাতালে থাকাকালীনই বাঁ হাতে লেখা অনুশীলন করেছিলেন। মঙ্গলবার সেই বাঁহাতে সই করেই কাজে যোগ দিলেন কেতুগ্রামের গৃহবধূ। কাজে যোগ দিয়েই এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে তাঁকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান রেণু। আগামী ২৭ জুন পূর্ব বর্ধমানে যাওয়ার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। তখন তাঁর সঙ্গে দেখা করারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন রেণু। তিনি বলেছেন, ‘অনেক কঠিন লড়াইয়ের পর আজ আমি কাজে যোগ দিলাম। যে কাজে যোগ দিয়েছি, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করব। আমার যে একটা হাত নেই, তা আমি ভাবছিই না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মায়ের মতো বারবার অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁকে ধন্যবাদ জানানোর কোনও ভাষা আমার কাছে নেই। আমি কৃতজ্ঞ। তিনি এখানে এলে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাই। যাঁরা আমার মতো নিগ্রহের শিকার হয়েছেন, তাঁদের দিকে আমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চাই।’
উল্লেখ্য, সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি পাওয়ায় স্ত্রী ছেড়ে চলে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় গত ৪ জুন পয়সা দিয়ে সুপারি কিলার ভাড়া করে বন্ধু সাজিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসে ঘুমন্ত অবস্থায় রেণুর কব্জি থেকে ডান হাত কেটে বাদ দেওয়ার ছক কষেন তাঁর স্বামী শেখ মহম্মদ। তারপর দীর্ঘদিন, দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত সপ্তাহে বাড়ি ফেরেন রেণু। কিন্তু এক হাত কাটা পড়ায় তিনি কী ভাবে চাকরি করবেন, তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে চাকরির ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। একহাত নিয়ে রেণু যে চাকরি করতে পারবেন, সেই রকম চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে প্লাস্টিক সার্জারি করে রেণুর কৃত্রিম হাত লাগানোর ব্যাপারেও আশ্বস্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।