বাংলার খবর
না ফেরার দেশে তরুণ মজুমদার, শোকের ছায়া বিনোদন জগতে
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: আজ আকাশ অংশত মেঘলা৷ চলে গেলেন তরুণ মজুমদার৷ একটা আপাদমস্তক প্রচারমুখর শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থেকেও প্রচারবিমুখভাবে চলে গেলেন৷ অবশ্য বেঁচে থাকাকালীনও ছিলেন প্রচারধর্মী হতে চাননি৷ তিনি আজীবন বিশ্বাস করেছেন একটাই কথা, ‘আমার তো গল্প বলা কাজ৷’গল্পই তিনি বলেছেন৷
বর্ষীয়ান এই পরিচালকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিনোদন জগতে। এদিন সকালে টুইট করে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি শোক প্রকাশ করে বলেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন।
সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেনের ছবির বাজারে সেই ঘরানার মধ্যে থেকেও তাঁর যাত্রা ছিল স্বতন্ত্র যেখানে সবটাই কথার কথা৷ আবার তার ব্যপ্তিও সমুদ্রের মতো৷ শুধু বিনোদনের কথা তিনি ভাবেননি৷ শুধু ব্যবসাও না৷ বরং গল্প থেকে বানিয়েছেন অন্য এক নতুন গল্প৷ পরিচালনায় তাঁর অভিষেক ‘যাত্রিক’-এর হাত ধরে ৷
আরও পড়ুন: বৃদ্ধ বাবাকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মার গুণধর ছেলের, নিন্দার ঝড়
১৯৬৩ পর্যন্ত শচীন মুখোপাধ্যায়, দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘যাত্রিক’-এর মাধ্যমেই ছবি পরিচালনা করেন তরুণ মজুমদার ৷ এর পর ১৯৬৩ সালে তিনি একক পরিচালক হিসবে কাজ শুরু৷ ১৯৬৫ সালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নায়ক করে ‘একটুকু বাসা’এবং ‘আলোর পিপাসা’পরিচালনা করেন বসন্ত চৌধুরীকে নায়কের ভূমিকায় রেখে ৷ এর পর টালিগঞ্জে তাঁর যাত্রা ক্রমশই মজবুত হয়ে ওঠে। তাঁর সিনেমায় মূলত নায়িকার চরিত্রে দেখা যেত শতাব্দী রায়, ঋতুপর্না সেনগুপ্ত। তাঁর বেশির ভাগ ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন শিবাজী চট্টোপাধ্যায় ও অরুন্ধুতী হোমচৌধুরী। রবীন্দ্র সঙ্গীত যে সিনেমার গান হয়ে উঠতে পারে সেটা তরুণ মজুমদার প্রমাণ করে দিয়েছেন।
তরুণ মজুমদারের সিনেমা মানেই একটা সহজ সরল অনাবিল সুখ। যা দেয় চোখের আরাম। তাঁর ছবির প্রতিটা গল্পই যেন আমার আপনার প্রত্যেকের ঘরের কথা। ১৯৬৫ সালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নায়ক করে ‘একটুকু বাসা’এবং ‘আলোর পিপাসা’পরিচালনা করেন বসন্ত চৌধুরীকে নায়কের ভূমিকায় রেখে ৷
এর পর টালিগঞ্জে তাঁর যাত্রা ক্রমশই মজবুত হয়ে ওঠে …
প্রথমেই মনে পড়ে গেল আদরের কাঙাল সেই নরম মেয়েটির গল্প৷ যাকে দেখে ভুরু কুঁচকে ছিল সবাই৷ আর যে সবাইকে দিয়েছিল আঁজলা ভরা ভালবাসা৷ দিনের শেষে যে বিশ্বাস করেছিল একটাই কথা, “আমরা ফুরায়ে যাই, প্রেম তুমি হয়ো না আহত৷” বিভূতিভূষণ কিন্নরদলে লিখেছিলেন, “গরিব বলেই এরা বেশি কুচুটে ও হিংসুক, কেউ কারও ভাল দেখতে পারে না বা কেউ কাউকে বিশ্বাসও করে না।” অথচ এই ‘গরিব’ আর ‘কুচুটে’ মানুষগুলোই কী নিবিড় ভালবেসে ফেলেছিল তাকে৷
আরও পড়ুন: দেশে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক! জলপাইগুড়িতে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র
“শান্তি একটা গন্ধরাজ আর টগরের মালা গেঁথে এনেছিল বৌদিদিকে পরাবে বলে—গান গাইবার সময়ে সে আবার সেটা বৌয়ের গলায় আলগোছে পরিয়ে দিল—সেই জ্যোৎস্নায় সাদা সুগন্ধি ফুলের মালা গলায় রূপসী বৌয়ের মুখে ভজন শুনতে শুনতে মন্টুর মায়ের মনে হলো এই মেয়েটিই সেই মীরাবাই, অনেককাল পরে পৃথিবীতে আবার নেমে এসেছে, আবার সবাইকে ভক্তির গান গেয়ে শোনাচ্ছে।”
লাইনগুলো বিভূতিভূষণেরই, আর এঁকেছিলেন তরুণ মজুমদার৷ ‘শ্রীপতির বউ’ হয়ে উঠেছিল তাদের আপনজন৷ “ঐ মেয়েটি কোথা থেকে দুদিনের জন্যে এসে তার গানের সুরের প্রভাবে সকলের অকরুণ, কুটিলভাবে পরিবর্তন এনে দিয়েছিল, সে পরিবর্তন যে কতখানি,” তা বোঝা গিয়েছিল সেদিনই যেদিন আচমকাই ফুরিয়েছিল তার রাত৷ আলো চলে গিয়েছিল, থেকে গিয়েছিল তার কিন্নরদল৷ আজ আরও এক আলো নিভল৷