বাংলার খবর
ফুরিয়ে যায়নি কদর, গরমে চাহিদা বাড়ছে মাটির হাঁড়ি-কলসির
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: এখনও ফুরিয়ে যায়নি আমাদের অতীত ঐতিহ্য। এক সময় মানুষ পাত্র বলতে মাটির পাত্রই চিনত। মাটির পাত্র পরিবেশবান্ধব ও শরীরের জন্যও উপকারী। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে আমাদের চাহিদা আর বদলেছে দুনিয়া। তাইতো ‘মাটির পাত্র’ যেন এখন আমাদের কাছে বড্ড সেকেলে ব্যাপার লাগে।
তবে ব্যাপারটা ভাবতে যতটা সেকেলে লাগে ঠিক ততটাও সেকেলে নয়। বরং একবিংশ শতকের দোরগোড়ায় এসে এই তীব্র গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে চাহিদা বাড়ছে মাটির হাঁড়ি, কলসির। জঙ্গলমহলের শালবনি, কুকড়াকুপি, রোহিনী সহ বিভিন্ন হাটে জল ঠান্ডা রাখার জন্য মাটির বড় হাঁড়ি, কলসি বিক্রি হচ্ছে। এখন মাটির প্রদীপ, মালসা, সরার থেকেও বড় বড় হাঁড়ি, কলসি বেশি তৈরি করছেন কুমোররা।
অনেকে এসব জিনিস বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আবার হাট থেকেও কিনছেন। ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া এলাকার পেটবিঁন্ধি গ্রামের মৃৎশিল্পী সুদর্শন বেরা, শ্রীকান্ত বেরা এবং সুদর্শনরা বলেন, ”বছরের আট মাস আমরা এই হাঁড়ি, কলসি সহ মাটির নানান জিনিস তৈরি করি। এখন গরমে হাঁড়ি, কলসির চাহিদা বেশি। গ্রামে ফেরি করি। হাটে নিয়ে যাই।”
আরও পড়ুন: ডুয়ার্সে অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ১৫
শ্রীকান্ত বলেন,”এখন বড় বড় হাঁড়ি কলসির চাহিদা বেশি। তাই স্থানীয় বল্লাবাঁধ থেকে মাটি এনে জল দিয়ে তাকে ভেজাতে হয়। সঙ্গে পার্শ্ববর্তী সুবর্ণরেখার নদীর বালি এনে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে মাখাতে হয়। এরপর ওই মাটি দিয়ে জল রাখার বড় বড় হাঁড়ি কলসির কাঠামো তৈরি করা হয়। তাকে ৩-৪ দিন রোদে শুকাতে হয়। এরপর মাটির কলসি, হাঁড়ি সহ তাঁদের তৈরি অন্যান্য জিনিসপত্র প্রায় এক দেড়শো কাঠামোকে কুমোরের ভাটিতে কাঠ জ্বালিয়ে পোড়ানো হয়। প্রায় চার ঘণ্টা ভাটির আগুনে পোড়ার পর পোড়া মাটির হাঁড়ি, কলসি তৈরি হয়। এসব আগুনে পুড়ে প্রায় লাল হয়ে যাওয়া পোড়া মাটির জিনিসপত্রকে ঠান্ডা হতে দেওয়া হয়। এরপর হাঁড়ি, কলসি বিক্রির উপযোগী হলেও প্রদীপ, সরায় অনেকেই লালমাটির রঙ করে বিক্রি করেন।”
আরও পড়ুন: গরমে নাজেহাল দক্ষিণবঙ্গ, সোয়েটার পরে স্কুলে যেতে হচ্ছে পড়ুয়াদের
শ্রীকান্ত আরও জানান, এইসব হাঁড়ি, কলসি তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ২০ টাকা। সঙ্গে নিজেদের পরিশ্রম রয়েছে। হাটে নিয়ে গেলে বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। পারিশ্রমিক ঠিক মতো মেলে না বলে অনেকে এই পেশা এখন ছেড়ে দিচ্ছেন।