খেলা-ধূলা
২২ বছর ধরে বিনামূল্যে অ্যাথলেটিক্সের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন বাঁকুড়ার গৃহবধূ
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: কথায় আছে ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’। সেই প্রবাদটাকে আরও একবার প্রমাণ করে দেখালেন বাঁকুড়ার গৃহবধূ রীতা মুখোপাধ্যায়। ২০০০ সালে মাত্র দু’জনকে নিয়ে শুরু করেছিলেন বাঁকুড়া অ্যাথলেটিক কোচিং সেন্টার। ২২ বছর পর বর্তমানে সেই বাঁকুড়া অ্যাথলেটিক কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় আড়াইশো। বাঁকুড়ার চাঁদমারিঙ্গার গুরুদাস মুখোপাধ্যায়ের পুত্রবধূ রীতা মুখোপাধ্যায় গত ২২ বছর ধরে বিনামূল্যেই অ্যাথলেটিক্সের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন এলাকার কচিকাঁচাদের। তাঁর কাছেই প্রশিক্ষণ নিয়ে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে অ্যাথলেটিক্সে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী সাফল্য পেয়েছেন।
প্রাক্তন অ্যাথলিট রীতা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বাঁকুড়ায় প্রচুর প্রতিভা রয়েছে। তাঁদের তুলে এনে সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়াটা খুবই জরুরী। সেই সঙ্গে তাঁর কোচিং সেন্টার থেকে ট্রেনিং নিয়ে জাতীয় স্তরে ভালো ফলাফল করেও অলিম্পিক্সের মতো প্রতিযোগিতায় সুযোগ না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। আর এই বিষয়ে সরকারি উদাসীনতাকেও দায়ী করেছেন বাঁকুড়া অ্যাথলেটিক কোচিং সেন্টারের সম্পাদিকা রীতা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘বাঁকুড়ায় প্রচুর প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে। তাদের তুলে এনে সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়াটা খুবই জরুরী। আমি সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি। আমার সেন্টারের অনেক ছাত্র-ছাত্রী রাজ্য ও জাতীয় স্তরে সাফল্য পেয়েছে। আমার কোচিং সেন্টারেই ছাত্র অনিমেষ মুখোপাধ্যায় জাতীয় স্তরের জ্যাভলিন প্রতিযোগিতায় প্রথম ছয়ের মধ্যে ছিল। ও সৎপাল সিঙের মতো খেলোয়াড়দের তিনবার হিট করলেও অলিম্পিক্সে যাওয়া তো দূরের কথা, আমার সেন্টারের কেউ দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করারই সুযোগ পাচ্ছে না।’
রীতা মুখোপাধ্যায়ের কৃতি ছাত্র অনিমেষ মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘অ্যাথলেটিক্সে বর্তমান প্রজন্মের আগ্রহ ক্রমশই কমছে। রাজ্য সরকার চেষ্টা করলেও সেইভাবে অ্যাথলিটদের চাকরির সুযোগ নেই।’ রীতা মুখোপাধ্যায়ের আর এক কৃতি ছাত্রীর স্বামী জানিয়েছেন, ‘আমার স্ত্রী রীতা মুখোপাধ্যায়ের কাছে অ্যাথলেটিক্সের ট্রেনিং নিয়ে ২০০০ সালে রাজ্যস্তরে পৌঁছেছিল। এখন আমার ছেলেও এখানে প্রশিক্ষণ নেয়। বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে সরকার এবং আমাদের অবশ্যই দাঁড়ানো উচিত বলেই মনে হয়।’
বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা বাঁকুড়া অ্যাথলেটিক কোচিং সেন্টারের সদস্য তরুণ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘বাঁকুড়ায় ফুটবল, ক্রিকেটের চল থাকলেও অ্যাথলেটিক্সের চর্চা সেই ভাবে ছিল না। বিয়ের পর বাঁকুড়ায় এসে অ্যাথলেটিক্সের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেন রীতা মুখোপাধ্যায়। তিনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এখান থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী বর্তমানে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে প্রতিষ্ঠিত।’