বাংলার খবর
জানালার পাশেই উঁকি দিচ্ছে গঙ্গা, তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে স্কুল ছাড়ছে পড়ুয়ারা
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: নদী বাঁধের উপরে স্কুল। জানালার পাশেই উঁকি দিচ্ছে গঙ্গা। ভাঙনের আতঙ্ক ও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলছে স্কুল। ব্লক প্রশাসন বলছে ভয়ের কিছু নেই! সত্যিই কি তাই?
হুগলির জিরাট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় চর খয়রামারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। গঙ্গার পারে অবস্থিত স্কুলে ৫১ জন পড়ুয়া। রোজই স্কুলে আসে। কিন্তু সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকেন অভিভাবকরা। অভিভাবক গোপাল মজুমদার, বিমল মন্ডলরা বলেন, স্কুলটিকে যত তারাতাড়ি সম্ভব অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া উচিত। অনেকেই ভয়ে স্কুল ছেড়ে দিচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা রোজ স্কুলে যায়, ঝুঁকি নিয়ে দোতলার ঘরে ক্লাস করে।এবিষয়ে অবিলম্বে ভাবা উচিত প্রশাসনের।
চর খয়রামারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে এভাবেই চলছে। নতুন স্কুল বাড়ি তৈরি করার তৎপরতা নেই প্রশাসনের। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ওই পঞ্চায়েতের দুর্লভপুর, রাণীনগর ও গৌরনগর এলাকায় ভাঙ্গনের কবলে। তার মধ্যে গৌরনগর মৌজা গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে। দুর্লভপুর মৌজার দুই গ্রাম চর খয়রামারী ও খাসের চরও ভাঙ্গনের মুখে। তারমধ্যেই এই স্কুল রয়েছে। করোনার জন্য দু’বছর এবং ভাঙ্গনের ফলে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। গত ফেব্রুয়ারী মাসেই স্কুল খুলেছে। খাসেরচরের স্থায়ী ত্রান শিবির গঙ্গার জলে তলিয়ে গিয়েছে।
সরকারিভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বালির বস্তা ও পাইলিং করে স্কুলটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। স্থানীয় মানুষ জানান, আগে বহুবার নদী ভাঙন রোধ করার চেষ্টা হয়েছিল।
১৯৪৯ সালে চর খয়রামারী প্রাথমিক স্কুল তৈরি হওয়ার সময় গঙ্গার দূরত্ব ছিল দুই কিলোমিটার। সেই দূরত্ব এখন দু’ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। এই প্রাথমিক স্কুলে ৬২ জনের বেশি ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করত। সেই পড়ুয়ার সংখ্যা বর্তমানে এসে ঠেকেছে ৫১ জনে। যেভাবে নদী ভাঙ্গন হচ্ছে, তাতে যে কোনও মুহূর্তে গঙ্গাবক্ষে তলিয়ে যেতে পারে এই স্কুল। তাই অধিকাংশ পড়ুয়া এই আতঙ্কে এই স্কুল ছেড়ে অন্য স্কুলে ভর্তি হচ্ছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার মন্ডল বলেন, ‘দু’বছর স্কুল বন্ধ ছিল। চলতি বছরের ফ্রেব্রুরারী মাস থেকে স্কুল চালু হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দোতলার ঘরে ক্লাস নিচ্ছি।সামনে গঙ্গার জন্য আতঙ্কে আছি। মিডে ডে মিল চালু রয়েছে। সরকারের তরফ থেকে গঙ্গা বাঁধানো হচ্ছে শাল বল্লা দিয়ে। তাও আতঙ্ক রয়েছে।’ বিডিও-কে জমি দেখানো হয়েছিলো। সেই জমি বিধায়ক সহ জেলার আধিকারিকরা এসে দেখে গিয়েছেন। নতুন স্কুল ভবন তৈরির কাজ দ্রুত শুরু হবে বলে আশ্বাসও দিয়েছেন তাঁরা।
বলাগড়ের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক নীলাদ্রি সরকার বলেন, ‘ওই স্কুল নতুন করে তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে।গঙ্গা তীর থেকে অনেক দূরে গ্রামে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্কুলটি। টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে। এখন ভয়ের কিছু নেই। ইঞ্জিনিয়ারা এসে দেখে গিয়েছেন।’