বাংলার খবর
বিএলআরও অফিসের দালাল চক্র ফাঁস করে প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর প্রথমবার পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই বৈঠক থেকেই ব্লক ভূমি রাজস্ব অফিসের দুর্নীতি নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্লক ভূমি রাজস্ব অফিসকে ঘুঘুর বাসা বলেও আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, বিএলআরও অফিসে কোনও কাজ হচ্ছে না। কর্মীরাই সাধারণ মানুষকে ঘোরান। ঘুষ না দিলে এবং দালাল মারফত না এলে কোনও কাজ হয় না। তাই পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ভুক্তভোগীদের নাম ধরে ধরে কত টাকা ঘুষ চাওয়া হচ্ছে তা ফাঁস করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ভুক্তভোগীদের রীতিমতো মঞ্চে তুলে তাঁদের মুখ থেকেই অভিযোগ শুনলেন মুখ্যমন্ত্রী।এ দিন বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, পুরুলিয়ার বহু আদিবাসী মানুষ জমির মিউটেশন করতে গিয়েও পারছেন না৷ পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লকের বিএলআরও অফিসের দালাল চক্র নিয়ে প্রথমে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী৷ জমির মিউটেশন করাতে গিয়ে যাঁদের কাছে ঘুষ চাওয়া হয়েছে, সেরকম বেশ কয়েকটি আদিবাসী পরিবারের সদস্যদের মঞ্চে হাজির করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সেই অভিযোগকারীদের দাবি, ঘুষ না দিলে ব্লক ভূমি রাজস্ব অফিসে কোনও কাজ হচ্ছে না। কোনও কাজ করাতে গেলে ঘুষ চাওয়া হয়। না দিলে অফিসের কর্মীরা তাদের ঘোরান।
এই অভিযোগ শোনার পরই রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর তিনি নিজেই ‘করালি কিঙ্কর’ এবং ‘প্রিয়াঙ্কা ভ্যারাইটিস’- স্থানীয় দু’টি দোকানের নাম উল্লেখ করে বলেন, বিএলআরও অফিসে কেউ জমির মিউটেশন করাতে গেলেই ওই দুই দোকানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আইসি-কে দাঁড় করিয়ে বলেন, ‘বলরামপুরের বিএলআরও অফিস চেনেন? সেই অফিসের উল্টো দিকে দু’টো দোকান আছে৷ করালি কিঙ্কর এবং প্রিয়াঙ্কা ভ্যারাইটিস৷ বিএলআরও অফিসে জমির মিউটেশন করাতে গেলেই ওই দুটো দোকানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ পড়াশোনা না জানা মানুষকে বলা হচ্ছে জমির মিউটেশনের কাজের রেট চালু হয়েছে৷ ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার, ১ হাজার থেকে ২ হাজার৷ জমির মাপ দেখে তিরিশ হাজার টাকা পর্যন্ত চাওয়া হয়েছে৷ যারা পড়াশোনা জানে তারা করে নিচ্ছে৷ কিন্তু এখন কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সুবিধা পেতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেকেই জমির মিউটেশন করাতে চাইছে৷ কিন্তু তারা গেলেই টাকা চাওয়া হচ্ছে৷’
শুধু বলরামপুর নয়, হুদার বিএলআরও অফিসের দুর্নীতি নিয়েও এদিন সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাজেন হেমব্রম নামে এক ভুক্তভোগীকে মঞ্চে ডেকে তাঁর কাছ থেকে সমস্ত নথি দেখে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জমির মিউটেশন করাতে যাওয়ায় ওই ব্যক্তির থেকে প্রতি পাতা পিছু একশো টাকা করে চেয়েছে দালাল৷ মাধব মাহাতো এবং যাদব মাহাতো নামে দুই ভাইয়ের থেকেও মিউটেশন করতে মোটা টাকা চাওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসনকেও কড়া নির্দেশ দেন তিনি। শুধু তাই নয়, এই অভিযোগকারীরা বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর তাঁদের যদি কোনও ভাবে কোনও রকম হুমকি দেওয়া হয়, যাঁরা হুমকি দেবেন, তাঁদেরই প্রথমে গ্রেফতার করার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।