দেশের খবর
ভারতের এই গ্রামে এখনও চালু আছে বহুবিবাহ প্রথা!

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: আমাদের দেশ থেকে বহুবিবাহ প্রথা বহুকাল আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। একজন স্ত্রী বা স্বামী থাকাকালীন আরেকজনকে বিয়ে করাটা আমাদের দেশে দণ্ডনীয় অপরাধ বলেই আমরা সকলে জানি। কিন্তু আমাদের এই দেশেই এখনও বহুবিবাহ প্রথা চালু আছে। অবাক হচ্ছেন তো।
কিন্তু এটাই বাস্তব। রাজস্থানের বাড়মের জেলায় ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে একটি ছোট্ট গ্রাম দেরাসর। গ্রামে ৬০০ জনের মতো মানুষের বাস। আর এই গ্রামের প্রতিটি পুরুষেরই কম করে দু’জন স্ত্রী রয়েছে! এই অদ্ভুত রীতির জন্যই গোটা দেশের কাছে অন্য পরিচিতি পেয়েছে দেরাসর। তবে এই গ্রামের পুরুষদের বহুবিবাহের পিছনে একটি অন্য কারণ রয়েছে। এখনও গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, প্রথম স্ত্রীরা সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম হন। তাই সন্তানের পিতা হতে গেলে দ্বিতীয়বার বিয়ে করতেই হবে। আর এই অদ্ভুত কারণের জন্যই এই গ্রামের পুরুষরা দ্বিতীয় বা তার বেশিবার বিবাহ করে থাকেন।
দ্বিতীয় স্ত্রীও যদি সন্তানধারণ করতে না পারেন সে ক্ষেত্রে স্বামীকে আরও একটি বিবাহ করতে হয়। এবং প্রত্যেক স্ত্রীর দায়িত্বই নিতে হয় স্বামীকে। গ্রামবাসীদের কথা অনুযায়ী অতীতের একটি ঘটনার পর থেকেই গ্রামে এই রীতি চলে আসছে। একবার গ্রামের এক ব্যক্তির কিছুতেই নাকি সন্তান হচ্ছিল না। হাজার চেষ্টা করেও বাবা হতে না পারায় ওই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন এবং সন্তানের বাবা হন। তারপর থেকেই গ্রামের কোনও পুরুষের এই সমস্যা দেখা দিলে তাদের দ্বিতীয়বার বিবাহ দেওয়া হত। আর তাতেই ফল মিলত হাতেনাতে। এইভাবে বহুবিবাহ প্রথা এই গ্রামে একটি রীতিতে পরিণত হয়। তবে এটাই শুধু একমাত্র কারণ নয়। আরও একটি কারণে এই গ্রামের পুরুষরা একাধিক বিবাহ করে থাকেন। মরুভূমির মাঝে গ্রাম হওয়ায় প্রথম থেকেই দেরাসরে পানীয় জলের সংকট তীব্র। তাই প্রতিদিনই ৫-৬ কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে জল আনতে হয় এই গ্রামের মহিলাদের। কিন্তু কোনও মহিলা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তাঁর পক্ষে এই এতটা পথ রোজ হেঁটে গিয়ে জল আনা সম্ভব হয় না।
সেই কারণে এই গ্রামের পুরুষরা একাধিক বিবাহ করেন। তবে এই রীতিকে ঘিরে একাধিক করুন কাহিনীও রয়েছে। এই গ্রামের প্রথম স্ত্রীদের কোনদিনই সন্তান ধারণের অধিকার নেই। এমনকি স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সংসারে প্রথম স্ত্রীর কোনও অধিকারই নেই। তিনি ঘর সংসার সামলানো, জল আনার কাজ করেন। বলতে গেলে সারা জীবন বাড়ির পরিচারিকার কাজ করেই কাটিয়ে দিতে হয়। সেই কারণে এই গ্রামের প্রথম স্ত্রীদের ‘জল স্ত্রী’ বলা হয়। যদি কোনও পুরুষ এই রীতি অমান্য করেন বা ভাঙ্গেন তাহলে তাঁকেও কঠোর শাস্তি পেতে হয়। তাঁর পরিবারও তাঁকে পরিত্যাগ করে এবং গ্রাম থেকে ওই পুরুষকে বিতাড়িত করা হয়।