বাংলার খবর
হাতে-পায়ে শিকল বেঁধেই চলছে দিন, মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের চিকিৎসা করাতে না পেরে অথৈ জলে বৃদ্ধ বাবা-মা
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। বদল এসেছে আমাদের জীবনেও। কিন্তু এখন বদল আসেনি মানবিকতার। দীর্ঘ দু’বছর ধরে পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে বছর ৩০-এর এক যুবককে।
এমনই অমানবিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয়েছে বাঁকুড়া জেলার খাতরা মহাকুমার ধারগ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দা মিঠুন দুলে দীর্ঘ ২ বছর ধরে বাড়িতেই পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থাতেই পড়ে রয়েছেন। কোনও উপায় না থাকার জন্যই এই অবস্থা বলে জানিয়েছেন মিঠুন দুলের হতদরিদ্র বাবা, মা। তাঁরা বলেন, ”ছেলের হঠাৎ করে মাথার গোলমাল হয়ে গিয়েছে। এদিক-ওদিক মাথা ঠুকছে, ভাঙচুর করছে”। তাঁদের পক্ষে ছেলেকে সবসময় দেখাশোনা করা সম্ভব নয়। অন্যের জমিতে কাজ করতে যান। তাই বাধ্য হয়ে ছেলের হাত-পায়ে শিকল বেঁধে রাখেন দিনমজুর দম্পতি জানকী দুলে ও ভারতী দুলে।
জানা গিয়েছে, ছোটো থেকে সুস্থই ছিলেন মিঠুন। টাকার অভাবে বেশি দূর পড়াশোনা করতে না পারলেও একদমই সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন তিনি। বেশকিছু বছর আগে পাড়ার কয়েকজন বন্ধুদের সঙ্গে দিল্লিতে কাজ করতে গিয়েছিল মিঠুন। সেখানে গিয়ে জ্বরে পড়ে সে। এরপর অনেক টাকাপয়সা খরচ করে দিল্লি থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন ছেলেকে। তারপর থেকেই মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে সে।
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে প্রশাসন
মিঠুনের মা-বাবা জানিয়েছেন, ছেলেকে ডাক্তার দেখালেও চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন তাঁর ব্রেনে কিছু সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। গরীবের সংসারে অতটাকা দিয়ে ডাক্তার দেখানো তাঁদের কাছে যে বিলাসিতা সে কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।
এখন এই অবস্থায় প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা। গ্রামবাসী অজিত কুমার দুলে বলেন, ওই পরিবারটি অত্যন্ত গরীব। বাবা, মায়েরও যথেষ্ট বয়স হয়েছে। তাঁরা চাইলেও ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেন না। যদি মিঠুনের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য প্রশাসন সাহায্য করে তাহলে পরিবারটি উপকৃত হবে। যদিও সবরকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা খাতড়া ব্লক সভাপতি।
আরও পড়ুন: নিমন্ত্রণ বাড়ি থেকে ফেরার পথে হামলা, মহিলাদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ
তিনি বলেন, “বিষয়টি আগে জানতাম না। তবে খবর পেয়েই পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, বরিষ্ঠ নেতার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেভাবেই হোক ছেলেটিকে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।”