বাংলার খবর
চাকরির আশায় ও চাপমুক্ত হতে মেখলিগঞ্জের মানুষ পুজো করেন টেনশন দেবতার!
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: দেশে ১০৮ কোটি দেব-দেবী রয়েছেন। প্রতিদিনই আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা, আরাধনা হয়ে থাকে। এক একটা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ এক এক দেব-দেবীকে পুজো করে থাকেন। এবার টেনশন থেকে মুক্তি পেতে পুজো করা হল টেনশন দেবতার! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। পুরোহিত রেখে রীতিমতো কলা, সন্দেশ, নারকোল সহযোগে পুজো করা হল টেনশন দেবতার। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ ব্লকের ৭৬ নিজতরফ গ্রামের বাসিন্দারা বছরের পর বছর ধরে এই পুজো করে আসছেন। মূলত জ্যৈষ্ঠ মাসের সংক্রান্তি ও আষাঢ় মাসের শুরুতেই এই টেনশন দেবতার পুজো হয় ৭৬ নিজতরফ গ্রামে।
বহু ধর্মের ভারতে একাধিক দেব-দেবী পূজিত হন। যেমন, বিদ্যার জন্য সরস্বতী পুজো, ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করতে লক্ষ্মী, গনেশের পুজো, বিপন্মুক্ত হতে কালী বা তারা, আবার বজরংবলির পুজোও হয়। কিন্তু টেনশন থেকে মুক্তি পেতে বিশেষ কোনও দেবতার পূজার কথা ভূ-ভারত আগে কেউ কখনও শুনেছে বলে মনে হয় না। কিন্তু আমাদের রাজ্যেই এই পুজো বছরের পর বছর ধরে যে চলে আসছে, তাও কারও জানা ছিল না। মেখলিগঞ্জের নিজতরফ গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭৬ নিজতরফ গ্রামে এই টেনশন দেবতার পুজো হয়। যে কোনওরকম টেনশন, উদ্বেগ দূর করতেই চালু হয়েছে টেনশন দেবতার পুজো। মূলত টেনশন থেকে মুক্তি পেতেই গ্রামের বেকার শিক্ষিত যুবকেরা থেকে শুরু করে গ্রামের মহিলারাও ভক্তি-শ্রদ্ধা সহকারে রাস্তার ধারে এই টেনশন দেবতার আরাধনা করে আসছেন। টেনশন দূর করার পাশাপাশি চাকরির জন্যও তারা মানত করেন দেবতার কাছে।
টেনশন দেবতার পুজো শুরুর একটা ইতিহাসও আছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাকরির চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল মেখলিগঞ্জের নিজতরফ গ্রামের যুবকদের। সমস্ত দেব-দেবীর পায়ে মাথা ঠুকেও কোনও সুরাহা হচ্ছিল না। তাই বছর দুয়েক আগে এলাকার বেকার যুবকদের মাথায় আসে যে, এবার তারা টেনশন দেবতার পুজো করবেন। কিন্তু সেই দাবি নিয়ে তারা পুরোহিতের কাছে যেতেই বাধে বিপত্তি। সেই দেবতাকে দেখতে কেমন হবে, কিভাবেই বা তার পুজো হবে, তার মন্ত্রই বা কী, তা পুরোহিতেরও জানা ছিল না। কিন্তু গ্রামের বেকার যুবকরাও টেনশন দেবতার পুজো করার সিদ্ধান্তে অনড়। তাই তারা নিজেরাই মনে মনে কল্পনা করে ফেলেন টেনশন দেবতার রূপ ও আকৃতি। একটি বড় পাথরকে রং করে তার মধ্যে চোখ-মুখে এঁকে রূপ দেন টেনশন দেবতার। তারপর সেই মূর্তিকে রাস্তার ধারে একটি গাছের তলায় বসিয়ে, বেদি বানিয়ে শুরু হয় টেনশন দেবতার পুজো। তারপর থেকেই এলাকার পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড়, বেকার যুবক- সকলেই টেনশনে পড়লেই টেনশন দেবতার দ্বারস্থ হন।