বাংলার খবর
চরম ডামাডোলের মধ্যেই আজ বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক নাড্ডার
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: রাজ্য বিজেপির চরম ডামাডোলের মধ্যেই মঙ্গলবার দু’দিনের বাংলা সফরে এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। একাধিক দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার কথাও রয়েছে তাঁর। বুধবার নবগঠিত রাজ্য কমিটির সদস্যদের সঙ্গেও বসবেন তিনি।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ার পর থেকেই রাজ্য বিজেপি তে শক্তিক্ষরণ অব্যাহত রয়েছে। একের পর এক বিধায়ক, সাংসদ দল ছেড়েছেন। হাতছাড়া হয়েছে একের পর এক পঞ্চায়েত। রাজ্যের সম্প্রতি প্রত্যেকটা নির্বাচনেই শোচনীয় ফলাফল হয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে
বাবুল সুপ্রিয়, জয়প্রকাশ মজুমদার, অর্জুন সিঙের মতো হেভিওয়েটরা দল ছেড়েছেন। আরও অনেক সাংসদ, বিধায়ক দল ছাড়ার জন্য পা বাড়িয়ে রয়েছেন বলেই বিজেপির অন্দরের খবর। গত সপ্তাহে হলদিয়ার থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তৃণমূল যদি দরজা খুলে দেয়, তাহলে বিজেপি দলটাই উঠে যাবে। তার ওপর দলের গোষ্ঠী কোন্দল তো রয়েছেই। রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর নিচু তলার কর্মীদের ক্ষোভ মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্যে চলে আসছে। সোমবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে জেপি নাড্ডাকে স্বাগত জানানো নিয়েও বচসায় জড়িয়ে পড়ে বিজেপির দুই গোষ্ঠী। তাই দলের ভাঙ্গন ও গোষ্ঠী কোন্দল রুখতে বঙ্গ বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে দাবি জানিয়েছিল, যেন অমিত শাহা বা জেপি নাড্ডাকে বাংলায় পাঠানো হয়। সামনেই লোকসভায় বাদল অধিবেশন রয়েছে। সেই নিয়ে অমিত শাহ ব্যস্ত থাকায় জেপি আড্ডাই বঙ্গ সফরে এসেছেন।
বিজিপির একটা অংশের দাবি, যেহেতু সামনেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন রয়েছে, সেখানে বাংলা থেকে নির্বাচিত দলের বিধায়ক ও সাংসদদের ভোট নিশ্চিত করতেই নাড্ডার এই বঙ্গ সফর। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলের বাংলার সাংসদ ও বিধায়করা যাতে ক্রস ভোট না দেন, তা নিশ্চিত করতেই এসেছেন নাড্ডা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভাবনা ও পরিকল্পনাকে বঙ্গ বিজেপির কাছে তুলে ধরবেন তিনি। কিছুদিন আগেই বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উদাসীনতাই বঙ্গ বিজেপি-র উৎসাহ হারানোর অন্যতম বড় কারণ। ঘটনাচক্রে গত সপ্তাহেই দিলীপ ঘোষের প্রকাশ্যে মন্তব্য করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বঙ্গ বিজেপির এক নেতার দাবি, ২০২৪এর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা ববলতেই নাড্ডার এই বাংলা সফর। ইতিমধ্যেই গোটা দেশে ২৪ এর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ১৮টি আসন জিতে অভাবনীয় ফল করেছিল বিজেপি। ২০২৪এ অন্তত ২৪টি আসনের টার্গেট নিয়ে মাঠে নামছে বিজেপি। আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর রণকৌশল নিয়ে আলোচনা করতেই নাড্ডা এসেছেন বলে দাবি রাজ্য বিজেপির একাংশের। তাই নাড্ডার বাংলা সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় হুগলির চুঁচুড়ায় বন্দেমাতরম ভবন পরিদর্শন দিয়েই বাংলা সকল শুরু করেছেন নাড্ডা। সেখান থেকে দুপুর ১২টা নাগাদ চন্দননগরে রাসবিহারী বসু রিসার্চ ইন্সটিটিউটেও যান তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। হুগলি সফর শেষ করেই দুপুরে কলকাতায় ফিরবেন তিনি। তারপরই বিকেল তিনটের সময় ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে রাজ্য বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন তিনি। এরপর হোটেলে বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর। রাজ্যে দলের শক্তিক্ষয়, গোষ্ঠী কোন্দল, নিচু তলার কর্মী ও নেতৃত্বদের অভিযোগ নিয়ে সেই বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার জেপি নাড্ডার সকাল সাড়ে ন’টায় বেলুড় মঠ পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখান থেকে ফিরেই হোটেলে রাজ্যে দলের সাংসদ, বিধায়ক ও শীর্ষ নেতৃত্বদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। রাজ্যে দলের সংগঠন, সামনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং ২৪এর লোকসভা নির্বাচন নিয়ে সেই বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এরপর দুপুর দু’টোর সময় সায়েন্সসিটি অডিটরিয়ামে দলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। বিকেল চারটে পনেরো মিনিটে কলামন্দিরে একটি নাগরিক সম্মেলনেও যোগ দেবেন তিনি। সেই নাগরিক সম্মেলন শেষ করে সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ দিল্লি উড়ে যাবেন তিনি। এই রাজ্য সফরে বিজেপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নাড্ডা কী বার্তা দেন, সেটাই এখন দেখার।