বাংলার খবর
সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল ছেলেরা!
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ছেলেদের সম্পত্তির লোভ। তাই বৃদ্ধ বাবা-মাকে মারধরের অভিযোগ উঠল দুই ছেলের বিরুদ্ধে। বাধ্য হয়ে থানার দারস্থ হলেন অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া রাজবাড়ী পাড়ায় দুই ছেলে এবং বৌমাদের নিয়ে থাকেন ভক্তিরানী ভৌমিক ও উংপল ভৌমিক। তাঁদের অভিযোগ, সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় ছেলে এবং বৌমারা অত্যাচার করতো তাঁদের। শনিবার বাড়ি থেকে ছেলেরা তাঁদের বের করে দিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে শনিবার সকালে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশের দ্বারস্থ হন ওই বৃদ্ধ দম্পতি।
ভক্তিরানী ভৌমিকের দাবি, কয়েক বছর আগে বড় ছেলে বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে মালবাজারে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। সেই সময় তাঁদের থেকে প্রচুর সম্পত্তি নিয়ে মালবাজারে চলে যায় তারা। ছোট ছেলেও বিবাহিত। প্রতিদিন নেশা করে বাড়ি ফেরেন। ভক্তিরানী এবং উদয় শঙ্করের এক সময় প্রচুর সম্পত্তি ছিল। জলপাইগুড়ি শহরের ওপর ছিল দোকান। ছিল ছোট চারচাকা গাড়ি। কিন্তু সবটাই ছেলেদের দিতে চলে যায়। বর্তমানে ভিটেবাড়ি ও একটি বেসরকারি বাস রয়েছে তাঁদের। অভিযোগ, ছোট ছেলে বেকার। কাজ করতে চান না। মদ্যপ অবস্থায় থাকেন সারাক্ষণ। অনেক চেষ্টা করেও ছেলেকে মানুষ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও আক্ষেপ ভৌমিক দম্পতির। তাঁদের দাবি, বড় ছেলে মাল বাজারে থাকলেও বাবা-মায়ের উপার্জনের টাকায় চলেন। এখন দুই ছেলেরই দাবি বাড়ি এবং মিনিবাসটি তাঁদের নামে লিখে দিতে হবে। বাবা-মা রাজি না হওয়ায় মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
ওই বৃদ্ধ দম্পতির আরও অভিযোগ, শুধু দুই ছেলেই নয়, সঙ্গে দুই বউমার অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে তাঁদের। ছেলেরা মদ্যপ অবস্থায় বাড়িতে এসে খুনের হুমকি দিচ্ছে প্রায়শই।
যদিও বৃদ্ধ দম্পতির এই অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন দুই ছেলেই। বড় ছেলে উদয় শঙ্কর ভৌমিকের দাবি, তাঁরা বাবা-মাকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে চান। কিন্তু ওই বৃদ্ধ দম্পতি ইচ্ছাকৃতভাবে অশান্তি করছেন। অশান্তির জন্য বাবা-মার কী দোষ চাপিয়ে তিনি বলেছেন, ‘গত দশ-পনেরো বছর ধরে আমরা পরিশ্রম করে বাড়িটা তৈরি করেছে। যেহেতু বাড়িটা বাবা-মায়ের নামে তাই তাঁরা বলছেন এই বাড়ি তাঁদের। আমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেছেন। পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছেও আমাদের নামে মিথ্যে বদনাম করেছে। তাই লজ্জায় আমি পাঁচ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। স্ত্রীকে নিয়ে মালবাজারে বাড়ি ভাড়া করে থাকতাম। তারপর বাবা-মা আমাদের বাড়িতে ফিরে আসতে বলে এবং মিলেমিশে থাকার কথা বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই কথামতো আমরা বাড়িতে ফিরে এসেছি। আবার গত একমাস ধরে একই রকমের অশান্তি শুরু করেছে বাবা মা। বাবা-মার এই আচরণে প্রতিবেশীরাও অত্যন্ত বিরক্ত। কাউন্সিলর সবকিছু জানেন। তিনিও ক্ষুব্ধ। আমরা একসঙ্গেই থাকতে চাই। মারধর এবং অত্যাচারের যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’ ছোটো ছেলে অর্ণব ভৌমিকেরও একই অভিযোগ। বলেছেন, ‘ মাকে আমরা কেন মারধর করতে যাব। উল্টে মা আমার স্ত্রীকে মারধর করেছে। তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। কী অসুবিধা বুঝতে পারছি না। আমরা একসঙ্গেই থাকতে চাই। আমাদের দোষটা কী সেটাই বুঝতে পারছি না।’ অভিযোগ পেয়ে ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে যায় কোতওয়ালি থানার পুলিশ।