বাংলার খবর
ঠাকুমা ঘুমোচ্ছে ভেবে দু’দিন মৃতদেহ আগলে বসে রইল বিশেষভাবে সক্ষম নাতনি!
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: দু’দিন আগেই মারা গিয়েছে ঠাকুমা। কিন্তু অবুঝ নাতনি তা বুঝতেই পারেনি। ভেবেছিল ঠাকুমা ঘুমোচ্ছে। একটু পরেই উঠে পড়বে। এবং তাকে খেতে দেবে। এই করেই কেটে গিয়েছে দু’দিন। খাবারের অপেক্ষায় এই ভাবেই ঠাকুমার পাশে বসে ছিল নাতনি। কিন্তু ঠাকুমা আর ঘুম থেকে ওঠেনি। উঠবেই বা কী করে! ঠাকুমা যে দু’দিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন। বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ায় ওই ছোট্ট মেয়েটি পাড়া-প্রতিবেশীদের সেই কথা জানাতে পারেনি। কথা বলা তো দূর, রানি চৌধুরী নামে ওই ছোট্ট মেয়েটি ঠিক করে হাঁটাচলাও করতে পারেনা। ঘটনার দু’দিন পর, গত বৃহস্পতিবার অবশেষে জানতে পারেন প্রতিবেশীরা। তাঁরাই খবর দেন থানায়। তারপর পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ফরেস্ট এলাকায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই বৃদ্ধার নাম সন্ধ্যারানী ঝাঁ (৭২)।
গত মঙ্গলবার বিকালে ঘুমের মধ্যেই মারা যান সন্ধ্যারানী। এরপর গত বৃহস্পতিবার সেই কথা জানতে পারেন প্রতিবেশীরা। তাঁরাই কুমারগঞ্জ থানায় খবর দেন। পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয়রাই মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট হাসপাতালে পাঠায়। শুক্রবার বিকালে ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ প্রতিবেশীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারপর দেহ সৎকার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যারানী ঝাঁয়ের স্বামী অনেকদিন আগেই মারা গিয়েছেন। তাঁর একমাত্র মেয়ে ও জামাইও মারা গিয়েছেন। এক ছেলে থাকলেও সে দীর্ঘদিন ধরেই নিখোঁজ। তাই বিশেষভাবে সক্ষম ওই নাতনিকে নিয়েই একা থাকতেন সন্ধ্যারানী। পাড়া-প্রতিবেশী এবং স্বহৃদয় ব্যক্তিদের সাহায্যে কোনরকমে কেটে যেত তাঁদের দিন। বয়সজনিত কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। পয়সার অভাবে নাতনিরও ঠিক করে চিকিৎসা করাতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এলাকায় পচা গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। কিন্তু সেই গন্ধ কোথা থেকে আসছিল তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না প্রতিবেশীরা। তারপরই তাদের সন্দেহ হয় সন্ধ্যারানীর বাড়ির ওপর। বাড়ির সামনে যেতেই তাঁরা বুঝতে পারেন সন্ধ্যারানীর ঘর থেকেই বের হচ্ছে সেই দুর্গন্ধ। ঘরের ভিতরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, বিছানায় মৃত অবস্থায় শুয়ে রয়েছেন সন্ধ্যারানী। আর ঠিক পাশেই বসে রয়েছে তাঁর নাতনি রানি। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খবর পেয়েই ছুটে আসে কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ। সবকিছু খতিয়ে দেখার পর পুলিশ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার বিকালেই মৃত্যু হয়েছে সন্ধ্যারানীর। মৃত্যুর পর দু’দিন কেটে যাওয়াতেই মৃতদেহ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করেছিল।
পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পর ছোট্ট রানির খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেন প্রতিবেশীরাই। রানির থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য পুলিশের কাছেও আবেদন করেছেন তাঁরা।