বাংলার খবর
রাজ্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে জানতে হবে বাংলা! ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, কৃষক বন্ধু প্রকল্পে ৭৭ লক্ষ কৃষকে ২২০০ কোটি টাকা

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: এবার রাজ্য সরকারি চাকরি পেতে বা করতে হলে বাংলা ভাষা অবশ্যই জানতে হবে। এবং বাংলায় চাকরির ক্ষেত্রে রাজ্যের ছেলেমেয়েদেরই অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে বুধবার মালদহের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন মালদহের প্রশাসনিক বৈঠকে এই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি চাই, যে রাজ্যের চাকরি, সে রাজ্যের ছেলেমেয়েরাই যেন চাকরিটা পায়। বাংলায় যারাই বসবাস করুক, ভাষায় সে রাজবংশী হতে পারে, কামতাপুরী হতে পারে, হিন্দি হতে পারে। আমার কোনও আপত্তি নেই। বাংলা ভাষাটা জানতে হবে। বাংলা ভাষাটাকে বুঝতে হবে। বিহার, ইউপি-এর লোকরা তারা তাদের রাজ্যে চাকরি পাক। আর আমাদের ছেলেমেয়েরা আমাদের রাজ্যে চাকরি পাবে। স্টেট সার্ভিসে যে কমিশনগুলো আছে তারা নম্বরের ভিত্তিতে চাকরিতে নেয়। কেউ ভালো রেজাল্ট করেছে। কিন্তু, অন্য জায়গা থেকে এসেছে। চাকরিটা সে পেয়ে গেল। কিন্তু স্থানীয় ছেলেটা পেল না। কারণ, তার নম্বরটা কম।
ফলে কী হচ্ছে সে যখন গর্ভমেন্টের ভাল জায়গায় গিয়ে কাজ করছে, সে কিন্তু ভাষাটা জানে না। ফলে একটা মানুষ যখন একটা বিডিও-র কাছে যাচ্ছে বা এসডিও-র কাছে যাচ্ছে বা একটা কোনও স্থানীয় প্রশাসকের কাছে যাচ্ছে, সে বাংলায় কথা বলছে। কিন্তু সেই প্রশাসক বা অফিসার বাংলাটা বোঝেই না। ফলে সে না পারে চিঠিটা পড়তে না পারে উত্তর দিতে। তাই স্থানীয় ভাষাটা জন্য অত্যন্ত আবশ্যক। তা না হলে কিন্তু জেলা, ব্লকে কাজ করা যাবে না।’ এদিনের বৈঠক থেকেই ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের এই বৈঠকের পরই এই প্রকল্পের আওতায় থাকা ৭৭ লক্ষ কৃষকের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলেও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা খরচ হবে রাজ্য সরকারের। রাজ্যে তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, কৃষক বন্ধু প্রকল্পে কৃষক ও ভাগচাষিদের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণ করা হবে। এদিন সেই প্রতিশ্রুতি রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। আগে খরিফ ও রবি মরসুমের শুরুতে বছরে দু’টি সমান কিস্তিতে পাঁচ ও দুই হাজার টাকা সরাসরি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যেত। এবার থেকে চাষিরা পাবেন ১০ ও ৪ হাজার টাকা করে। এক একর জমি থাকলে বছরে ১০ হাজার এবং তার কম জমি থাকলে চার হাজার টাকা পাবেন কৃষকরা। এই প্রকল্পের অধীনে থাকা ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে কোনও চাষির মৃত্যু হলে তাঁর পরিবার দু’লক্ষ টাকা করে পাবেন। এদিনের সভায থেকে মালদহর ৫৯ প্রকল্পের শিলান্যাস করার পাশাপাশি ৩৭ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
১০ নম্বর রাজ্য সড়কেরও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া ১৬ একর জমিতে পোল্ট্রি ফার্ম করার পাশাপাশি টেক্সটাইল ও সিল্ক ফার্ম তৈরির অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। সঠিকভাবে সমস্ত প্রকল্প রূপায়ণ করতে হবে বলেও জানিয়ে দেন তিনি। এদিনের বৈঠক থেকে সমবায়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুর্শিদাবাদ, নদিয়া সহ মালদহর সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে নদী ভাঙ্গন। এদিনের বৈঠকে নদী ভাঙ্গন নিয়ে একাধিকবার কেন্দ্রের উদাসীনতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং ভাঙ্গন নিয়ে অল্টারনেটিভ প্লান অফ অ্যাকশন বা মাস্টার প্ল্যান তৈরি নিয়ে রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এবং মালদহ মিউনিসিপ্যালিটির ক্যাম্পাসের মধ্যে একটি ‘আম হাব’ তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সভা চলাকালীনই দেশের প্রতিরক্ষা প্রধান বিপিন রাওয়াতের তামিলনাড়ুতে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার খবর পেতেই ঘটনার দুঃখ প্রকাশ করে তখনই সভা শেষ করে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘খবরটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।’