খেলা-ধূলা
ভোম্বল হীন ময়দান! ৭২ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ সুভাষ ভৌমিক

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ‘ভোম্বল হীন ময়দান’। প্রয়াত হলেন প্রাক্তন ফুটবলার সুভাষ ভৌমিক। শনিবার সকাল ৭.৩০ নাগাদ কলকাতার একবালপুরে এক বেসরকারি নার্সিংহোমে প্রয়াত হন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই সুগার এবং কিডনির অসুখে ভুগছিলেন তিনি।
গত সাড়ে তিন মাস ধরে তাঁর ডায়ালিসিস চলছিল। ২৩ বছর আগে তাঁর বাইপাস সার্জারিও হয়েছিল। কিছুদিন আগেই বুকে সংক্রমণ নিয়ে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন একবালপুরের নার্সিংহোমে। সেখানেই তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। শেষ পর্যন্ত করোনার কাছে হার মানলেন ময়দানের ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ ফুটবলার। শুক্রবারই অসুস্থ সুভাষ ভৌমিকের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান, মোহনবাগান এবং আইএফএ। শুক্রবার বিকেলে নব মহাকরণে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীর ঘরে সুভাষ ভৌমিকের চিকিৎসার পরিকল্পনা নিয়ে একটি জরুরী সভা হয়। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, বিকাশ পাঁজি, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, বিদেশ বসু, মানস ভট্টাচার্য প্রমুখ।
ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের কর্তা দেবব্রত সরকার, মোহনবাগানের দেবাশিস দত্ত, মহমেডানের কামরুদ্দিন ও আইএফএ সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন সুভাষ ভৌমিকের পুত্র অর্জুন ভৌমিক। সেই সভায় ঠিক হয়েছিল, কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠলে মেডিকা হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা করানো হবে। স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মাধ্যমে তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তারপরও অর্থের প্রয়োজন হলে, তা রাজ্য সরকার, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান এবং আইএফএ সাহায্য করবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু সেই সুযোগ আর দিলেন না সুভাষ ভৌমিক। আগামীকালই তাঁর পুত্রের বিবাহের অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে সকালেই নার্সিংহোমে পৌঁছে যান ক্রীড়ামন্ত্রী সহ সমস্ত ক্লাবের কর্মকর্তা এবং প্রাক্তন ফুটবলাররা।
রাজ্যে যেহেতু করোনার বিধি-নিষেধ জারি রয়েছে সেই কারণে কোভিড বিধি মেনেই দুপুরে নিমতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তাঁর শেষ যাত্রায় পরিবারের ৫ জন সদস্য উপস্থিত থাকতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রী। নার্সিংহোমে তাঁর মরদেহতে ক্লাবের পতাকা এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার এবং মোহনবাগান কর্তা দেবাশিস দত্ত। শ্রদ্ধা জানান ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ও। প্রাক্তন ফুটবলারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, রহিম নবিদের মতো প্রাক্তন ফুটবলার কথা তাঁর ছাত্ররাও। ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের হয়ে খেলার পাশাপাশি ময়দানের তিন প্রধানেই সাফল্যের সঙ্গে কোচিং করিয়েছেন তিনি। সালগাঁওকার এবং চার্চিল ব্রাদার্সেও কোচিং করিয়েছে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে ময়দানে অভিষেক হয় সুভাষ ভৌমিকের।
১৯৬৯ সালে ইস্টবেঙ্গলে খেলার পর ১৯৭০ সালে তিনি যোগ দেন মোহনবাগানে। তিন বছর সবুজ-মেরুনের হয়ে খেলার পর ১৯৭৩ সালে আবার ফেরেন ইস্টবেঙ্গলে। তিন বছর পর ১৯৭৬ সালে আবার যোগ দেন মোহনবাগানে। ১৯৭৮ সালে আবার ফিরে আসেন ইস্টবেঙ্গলে। লাল-হলুদের হয়ে খেলেই ১৯৭৯ সালে অবসর নেন ময়দানের প্রিয় ভোম্বল দা। মোহনবাগানের হয়ে ছ’বছরে মোট ৮২ গোল করেছিলেন। তার মধ্যে চারটি হ্যাটট্রিক ছিল। লাল-হলুদের হয়ে পাঁচ বছরে ৮৩ গোল করেছিলেন। গোলের নিরিখে তাঁর সেরা দু’বছর ১৯৭০ এবং ১৯৭৬। ১৯৭০ সালে ২৭ এবং ১৯৭৬ সালে ১৯ গোল করেছিলেন তিনি। ক্লাব কেরিয়ারে মোট ২৭ ট্রফি জিতেছিলেন সুভাষ ভৌমিক। মোহনবাগানের হয়ে ১৬ ও ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ১১ ট্রফি জিতেছেন।
কলকাতা লিগ জিতেছেন পাঁচ বার (১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ এবং ১৯৭৮)। আইএফএ শিল্ড জিতেছেন ছ’বার (১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮)। আট বার জিতেছেন রোভার্স কাপ (১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ এবং ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭)। দু’বার জিতেছেন বরদলই ট্রফি (১৯৭৬ এবং ১৯৭৭)। দু’বার জিতেছেন ডিসিএম ট্রফি (১৯৭৩ এবং ১৯৭৪)। এক বার করে ছিতেছেন ফেডারেশন কাপ (১৯৭৮), ডুরান্ড কাপ (১৯৭৭), দার্জিলিং গোল্ড কাপ (১৯৭৬) এবং নাগজি ট্রফি (১৯৭৮)। বাংলার সন্তোষ ট্রফি জয়ী দলেরও সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালে এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ জয়ী ভারতীয় দলেরও সদস্য ছিলেন এই ডাকাবুকো স্ট্রাইকার। খেলোয়াড় জীবনের পাশাপাশি কোচিং জীবনেও ছিলেন চূড়ান্ত সফল। ১৯৮৬ সালে জর্জ টেলিগ্রাফের কোচ হিসেবে সুভাষ ভৌমিক কোচিং কেরিয়ার শুরু করেন। ১৯৯১ সালে মোহনবাগানের কোচ হন। তবে তাঁর কোচিং কেরিয়ারের সিংহভাগ সাফল্যই এসেছে …