খেলা-ধূলা
শতবর্ষের ডার্বির রং সবুজ-মেরুন, এসসি ইস্টবেঙ্গলকে ৩ গোলে হারাল এটিকেএমবি
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: এসসি ইস্টবেঙ্গল রয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গলেই। মান্ডবীর তীরে শতবর্ষের ডার্বির রং আবারও সবুজ-মেরুন। শনিবার এবারের আইএসএল-এর প্রথম ডার্বিতে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দিল এটিকে মোহনবাগান।
১২ থেকে ২৩ মিনিট। ম্যাচে ১১ মিনিটের ক্ষণিকের সবুজ-মেরুন ঝড়। আর তাতেই দপ করে নিভে গেল মশাল। রয় কৃষ্ণ, মনবীর সিং ও লিস্টন কোলাসোর গোলে পেরোসেভিচদের হারিয়ে দিল লোপেজ অ্যান্টনিও হাবাসের দল। মানুয়েল দিয়াজের টিম যে এখনও তৈরি হয়নি, তা আরও একবার পরিষ্কার হয়ে গেল। আইএসএলে এখনও পযর্ন্ত তিনবার ডার্বি ম্যাচে মুখোমুখি হল এটিকে মোহনবাগান ও এসসি ইস্টবেঙ্গল। তিনবারই জিতল এটিকে মোহনবাগান। আর এই তিনটি ম্যাচেই গোল করলেন ফিজির স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণ। এদিন কৃষ্ণ, বুমোস, লিস্টনরা যখনই বল নিয়ে দৌড়লেন তখনই দিশাহারা দেখাল এসসি ইস্টবেঙ্গলকে। শনিবার প্রথমার্ধেই তিন গোল করে ফেলেছিল এটিকে মোহনবাগান।
দ্বিতীয়ার্ধে হাবাস তাঁর দলকে রক্ষনাত্মক না খেলালে হয়তো পাঁচ গোলের মধুর প্রতিশোধ ২৭ নভেম্বরই নিয়ে ফেলতে পারতো সবুজ-মেরুন শিবির। শনিবার ৩-৪-৩ ফর্ম্যাটে দল সাজিয়ে সবুজ-মেরুনকে রুখে দেওয়ার ছক কষেছিলেন স্প্যানিশ কোচ দিয়াজ। অপর দিকে এটিকে মোহনবাগান কোচ হাবাস ৪-৩-৩ ছকে দল সাজিয়েছিলেন। জনি কাউকোকে ফরোয়ার্ডে রেখে লিস্টন কোলাসোকে পিছন থেকে খেলান। এদিনও অনবদ্য কাউকো। ম্যাচের সেরাও হয়েছেন তিনি। তবে গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি সবুজ মেরুন শিবিরকে। ম্যাচের ১২ মিনিটে ডান দিক থেকে প্রীতম কোটালের বাড়ানো বল বক্সের মধ্যে পেয়ে যান রয় কৃষ্ণ। দুরন্ত ভলিতে ১-০ করতে ভুল করেননি সবুজ মেরুনের গোল মেশিন।
তার দু’মিনিটের মধ্যেই বাগানের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করে যান মনবীর সিং। ২৩ মিনিটে এটিকে এমবির তৃতীয় গোল। লিস্টন কোলাসো ৩-০ এগিয়ে দিলেন টিমকে। মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো থ্রু ক্লিয়ার করতে গিয়ে লাল-হলুদ কিপার অরিন্দম বল তুলে দেন লিস্টনের পায়ে। অরিন্দমের ভুলেই গোল পেলেন লিস্টন। ইস্টবেঙ্গল কোচ দিয়াজের তিন ডিফেন্সে ডার্বি ম্যাচ খেলা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। রাজু-টমিসলাভ-পর্চেদের মধ্যে ফাঁক থেকে যাচ্ছে। যার পূর্ণ সুযোগ তোলার চেষ্টা করছে মোহনবাগান ফুটবলাররা। কৃষ্ণ, হুগো, মনবীর, লিস্টনরা ফাঁকা জমি ব্যবহার করে লাল-হলুদ রক্ষণকে চাপে ফেলে দিয়েছে বারবার। তবে এদিনের ম্যাচের ভিলেন অবশ্যই লাল-হলুদ গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্য্য। পুরনো দলের বিরুদ্ধে ডাহা ব্যর্থ তিনি। ৩৩ মিনিটের মাথায় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।
কিন্তু তার আগেই যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গিয়েছিল। ৩৩ মিনিট মাঠে থেকে ৩ গোল খেলেন অরিন্দম। তিনটি গোলের ক্ষেত্রেই কমবেশি তিনি দায়ী। কৃষ্ণর গোলের সময় কিছুই করার ছিল না তাঁর। কৃষ্ণর দুরন্ত শট অরিন্দম কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল জালে জড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মনবীর সিঙের গোলের সময় প্রথম পোস্টে অরিন্দম দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও সেখান থেকেই গোল খেল ইস্টবেঙ্গল। শরীর ছুঁড়েও নাগাল পেলেন না। তৃতীয় গোলের দায়ও নিতে হবে অরিন্দমকে। হুগো বুমোসের লম্বা থ্রু যখন লিস্টন কোলাসো ধরলেন, তাঁকে আটকাতে গোল ছেড়ে উঠে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু বলটা ধরতেই পারলেন না। অরক্ষিত গোলে বল ঠেললেন কোলাসো। অরিন্দমই সহজ করে দিয়েছিলেন কোলাসোর কাজ। কোলাসোর পা থেকে বল কাড়তে গিয়েই চোট পান অরিন্দম। বড় ম্যাচে ৩৩ মিনিটের মাথায় প্রধান প্রহরীকে হারায় লাল-হলুদ। তাঁর বদলে মাঠে নামেন শুভম সেন।
তবে বাকি ম্যাচে তাঁকে আর কোনও গোল হজম করতে হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধেও একই রকম চাপ বজায় রেখেছিলেন কৃষ্ণরা। কিন্তু আক্রমণের ঝাঁঝ কমিয়েছিল মোহনগানান। খেলাটা একটু স্লো করে দিয়ছিল তারা। প্রথমার্ধে যে খেলাটা খেলছিল সেটা খেলতে পারলে শনিবার পাঁচ গোল করেই ফেলতে পারত এটিকে মোহনগাগান। সেই সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করল হাবাসের দল। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে সেইভাবে সুযোগ তৈরি করতে না পারলেও শনিবার মোহনবাগান আরও বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল। সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে ৫ গোলের যন্ত্রণা ভুলতে পারত সবুজ-মেরুন সর্মথকরা।