বাংলার খবর
দ্বিতীয়বার মেয়ে হওয়ায় ঢাকঢোল পিটিয়ে শোভাযাত্রা করে সদ্যজাতকে বাড়িতে আনলেন বাবা
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: আধুনিক যুগে এভারেস্টের শিখরে, মহাকাশে পৌঁছে যাচ্ছেন মহিলারা। রাজনীতি, বিনোদন, প্রযুক্তি, ক্রীড়াক্ষেত্রেও নারীদের জয়জয়কার। তবুও কন্যা সন্তান নিয়ে আমাদের সমাজের ভ্রু কোঁচকানোর স্বভাব যায়নি। সেই কারণে ভ্রুণ হত্যার মতো জঘন্য ব্যাধি এখনও রয়ে গিয়েছে আমাদের সমাজে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে উলটপুরাণ হুগলির চুঁচুড়ায়। দ্বিতীয়বার কন্যা সন্তান হওয়ায় উৎফুল্ল হুগলি জেলার চুঁচুড়ার বাসিন্দা সুজয় চন্দ। আর দ্বিতীয় কন্যা সন্তানকে পরিবারে স্বাগত জানাতে অভিনব উদ্যোগ নিলেন তিনি। শুক্রবার ব্যান্ড বাজিয়ে, ঢাক পিটিয়ে সুসজ্জিত চার চাকা গাড়িতে শোভাযাত্রা করে নার্সিংহোম থেকে নবজাতককে বাড়িতে নিয়ে এলেন সুজয় চন্দ।
পেশায় ব্যবসায়ী সুজয় চন্দের বাড়ি চুঁচুড়ার কারবালা মোড়ের শুভপল্লি এলাকায়। বাড়ির কাছেই তাঁর হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট রয়েছে। ৬ বছর আগে প্রথম কন্যাসন্তান হয় তাঁর। তার পরই তিনি ব্যবসা শুরু করেন। গত রবিবার তাঁর স্ত্রী ত্রিমা চন্দের স্থানীয় এক নার্সিংহোমে দ্বিতীয় কন্যাসন্তান হয়। আর তাতেই উৎফুল্ল হয়ে সুজয়বাবু পরিকল্পনা করে ফেলেন, মেয়েকে সুসজ্জিত গাড়িতে করে ব্যান্ড বাজিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসবেন৷ শুক্রবারই তাঁর স্ত্রী ত্রিমা ও সন্তানকে ছুটি দেয় নার্সিংহোম। এই দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে সুজয়বাবু পরিকল্পনা মাফিক আত্নীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের নিয়ে নাচতে-নাচতে শোভাযাত্রা করে চলে আসেন নার্সিংহোমে। এবং শোভাযাত্রা সহকারেই স্ত্রী ও ঘরের লক্ষ্মী-কে বাড়িতে নিয়ে যান।
সুজয়বাবুর এই উদ্যোগ ও মানসিকতাকে সাধুবাদ জানিয়েছে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। নার্সিংহোমের অন্যতম কর্ণধার মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমিও একজন নারী। কন্যাসন্তানকে যেভাবে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে তার পরিবার, তা সমাজের কাছে একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’ এই খবর পেয়েই সেখানে চলে আসেন হুগলি-চুঁচুড়া পৌরসভার পৌরপ্রধান অমিত রায়। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান সময়ে এই ঘটনা যথেষ্ট ব্যতিক্রমী। আজকের দিনে সচারাচর এরকম ঘটনা দেখা যায় না। এর জন্য নবজাতকের বাবা সুজয় চন্দকে আমি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
কেন এই অভিনব উদ্যোগের ভাবনা তাঁর মাথায় এল, তা জানিয়েছেন সুজয়বাবু নিজেই। বলেছেন, ‘কন্যাসন্তান হলে অনেকেই ভ্রু কোঁচকায়। কিন্তু নারীই এই সমাজ-সংসারের সৃষ্টিকর্তা। তাই পুত্র এবং কন্যা, সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখা উচিত। আমি সমাজকে এই বার্তাই দিতে চাই। কন্যা মানেই সে অবহেলার বস্তু নয়। আমি গর্বের সঙ্গেই আমার লক্ষ্মীকে ঘরে নিয়ে যাচ্ছি।’ তবে তাঁর এক পুত্র সন্তান রয়েছে বলেও জানিয়েছেন সুজয়বাবু। বলেছেন, ‘একবার পুরী বেড়াতে গিয়ে সমুদ্রে স্নান করার সময় আমি জগন্নাথদেবের একটি মূর্তি পেয়েছিলেন। সেই মূর্তি বাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করেছি। ওই আমার সন্তান। আমি আমার পুত্রসন্তান তো পেয়েই গিয়েছি। তাই পুত্র সন্তান না থাকার কোনও অভাব বা আফসোসবোধ আমার মধ্যে নেই।’