আমব্রেলা বানান ভুল বলায় তছনছ সুদীপ্তার জীবন, আতঙ্কে পরিবার
Connect with us

বাংলার খবর

আমব্রেলা বানান ভুল বলায় তছনছ সুদীপ্তার জীবন, আতঙ্কে পরিবার

Raju Dhara

Published

on

Rate this post

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: একটা ভাইরাল ভিডিওতে তছনছ হয়ে গিয়েছে জীবন। মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না ‘আমব্রেলা’ বানান বলতে না পারা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে গোটা রাজ্য ডুবে সেই ভাইরাল ভিডিওতে। ফলে এখন বেঁচে থাকাই দায় হয়ে গিয়েছে ওই তরুণীর কাছে। ওই তরুণী তো বটেই, তাঁর গোটা পরিবারের থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সমাজ। নদীয়ার সেই সুদীপ্তা বিশ্বাস এখন সর্বত্র ‘আমব্রেলা দিদি’ নামেই পরিচিত। টোন টিটকারি,লাঞ্ছনা-গঞ্জনার হাত থেকে বাঁচতে সুদীপ্তা বেশ কয়েকবার আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলা ট্রোল, মিম ও চুলচেরা বিশ্লেষণে সুদীপ্তার জীবন এখন কোন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, তা এই সমস্ত ভিডিও দেখে মজা পাওয়া মানুষরা বুঝতে পারছেন! এই প্রশ্নও তুলেছেন সুদীপ্তার বাবা সুকুমার বিশ্বাস।

উল্লেখ্য, উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরই নদীয়ার একটি স্কুলের সামনে পাস করানোর দাবিতে বিক্ষোভে বসেছিলেন অনুর্ত্তীন্ন ছাত্রীরা। সেই বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন সুদীপ্তাও। তখন এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে সুদীপ্তা জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে লেটার পাওয়া সত্ত্বেও তাঁদের স্কুলের সাত জনকে ইংরাজিতে ফেল করানো হয়েছে। তাঁরা এই বিষয়টি কিছুতেই মানতে পারছেন না। তাই পাশ করানোর দাবিতেই তাঁরা প্রতিবাদ আন্দোলন করছেন। এরপরই ওই সাংবাদিক তাঁকে আমব্রেলা বানান জিজ্ঞাসা করেন। এই প্রশ্ন করায় প্রথমে প্রতিবাদ করলেও পরে আমব্রেলা বানান ভুল বলেন তিনি। আর নিমেষের মধ্যে সেই ভুল বানানের ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই নিয়ে ঠাট্টার রোল ওঠে। আবার কেউ কেউ তো তাই নিয়ে রিমিক্স গানও বেঁধে ফেলেছেন। যদিও সুশীল ও বুদ্ধিজীবী সমাজ গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। একটি ভিডিও বা বানানের ভিত্তিতে কারও মেধা এভাবে যাচাই করা যায় না বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরা। সুদীপ্তাকে নিয়ে চলা ট্রোলের বন্যায় যখন উদ্বিগ্ন গোটা সুশীল সমাজ, তখনই সুদীপ্তার বাবা সুকুমার বিশ্বাস জানালেন, তাঁর মেয়ে ভালো নেই।

সুদীপ্তার বাবা সুকুমার বিশ্বাস বলেছেন, ‘এই অপমান সহ্য করতে না পেরে মেয়ে দুই-তিনবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে। সব সময় আমরা একটা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। ওকে সব সময় চোখে চোখে রাখছি। যাতে কোনও অঘটন না ঘটিয়ে ফেলে। পাড়া-প্রতিবেশী যে ধরনের মন্তব্য করছে, তাতে আমরা বাড়ি থেকে কেউ বের হতে পারছি না। এই সমস্ত কথা আমরা আর সহ্য করতে পারছি না। যারা এইসব সর্বত্র ছড়াচ্ছেন, তাদের কাছে অনুরোধ করছি দয়া করে আপনারা আর এরকম করবেন না।’ সুদীপ্তার বাবা আরও বলেন, ‘শুধু পাড়া-প্রতিবেশী কেন আত্মীয়-স্বজনরাও খারাপ মন্তব্য করছেন। তারা অভিযোগ করছে কেন আমরা ঠিক করে মেয়েকে লেখাপড়া শেখাইনি।’ তারপরই সুদীপ্তার বাবা দাবি করেছেন, ‘আমি ওই ভিডিওটা দেখেছি। আমার মেয়েকে আমবেলা বানান জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তাই ও ওই বানান বলেছে। ওকে যদি আমাব্রেলা বানান জিজ্ঞাসা করা হতো, তাহলে ও ঠিক বানানই বলতো।’

Advertisement

গোটা বিষয়টায় সুদীপ্তার পাশে দাঁড়িয়েছে নদীয়ার মতুয়া মহাসংঘ। সংঘের সম্পাদক জয় মিত্র বলেছেন, ‘আমরা ওর পাশে আছি। সাংবাদিক ওকে ভুল প্রশ্ন করেছিল। ওকে নিয়ে যেভাবে ট্রোল করা হচ্ছে তাতে ওর বেঁচে থাকাটাই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সমাজের কিছু অসুস্থ মানসিকতার লোক ওর জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে। নদিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের পক্ষ থেকে আমরা ওর দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। ওকে নিয়ে যারা এইসব ট্রোল করছেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা খুব শীঘ্রই সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ জানাবো।’

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.