লাইফ স্টাইল
করণাকালে শিশুদের মোবাইলের প্রতি আসক্তি ও তা থেকে মুক্তির উপায়।
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : সুষ্ঠ ও সুন্দর ছন্দে চলা আমাদের পৃথিবী হটাৎই থমকে যায় দুবছর আগে করোনা অতিমারীর কারণে। তার চলার ছন্দে ঘটে ছন্দপতন। করোনা অতিমারীর ভয়াল প্রকোপ সারা বিশ্বকে গ্রাস করে নেয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে আজও পর্যন্ত করোনা আমাদের পিছন ছাড়েনি। তার ছায়া আজও আমাদের জীবনের সঙ্গী হয়ে আছে।
বিশ্বের বহু মানুষ এই রোগে প্রাণ হারিয়েছে। কত মানুষ নিজেদের প্রিয়জনকে আর ফিরে পাবেন না এই করোনার কারণে। কত শত তাজা প্রাণ নিঃশেষিত হয়েছে এই করোনারই কারণে। বিশ্ব এগোচ্ছিল দ্রুত গতিতে ,কারোর জন্য বা কোনো কিছুর জন্যই সময় ছিল না আমাদের কাছে। কিন্তু এই করোনা কোথাও আবার আমাদের এক সঙ্গে থাকার শিক্ষা দিয়েছে। পরিবার -পরিজনের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করতে শিখিয়েছে। কিন্তু এই ইতিবাচক দিকটি থাকলেও এই অতিমারী অনেক কিছু ছিনিয়েও নিয়েছে। করোনার অনেক নেতিবাচক দিকের অন্যতম হলো বাচ্ছাদের হাতে মোবাইল বা ট্যাব তুলে দিতে আরো বেশি করে বাধ্য করেছে।
বাচ্ছারা এমনিতেই মোবাইল দেখতে বেশ পছন্দ করতই। অনেক অবিভাবকও সন্তানদের হাতে এই মোবাইল নামক গেজেডটি স্বইচ্ছায় তুলে দিয়ে থাকেন যাতে বাচ্ছারা নিজেদের মতো করে সময় কাটাতে পারে। এখন বেশিরভাগ মায়েরাও ওয়ার্কিং। তাই বাড়িতে অনেকটা সময় একা কাটাতে হয় বাচ্ছাদের। এই বাবা – মা ছাড়া সময়টা তারা এই মোবাইল দেখেই কাটাতে পছন্দ করে ,এক্ষেত্রে তাদের দোষ দেওয়া যায় না। কারণ আজকাল আর সেভাবে মাঠে গিয়ে খেলা বা পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে বিকেলে বেরিয়ে পড়া নেই। আর করোনার সময় তো এমনিতেই ঘরবন্দি জীবন কাটিয়েছি আমরা প্রায় প্রত্যেকেই। এই ঘরবন্দি অবস্থায় আমরা বড়োরা নিজেদের মতো করে কাটালেও বাচ্ছারা তাদের স্কুল -টিউশন এর বন্ধুদের থেকেও দূরে চলে যায়। বন্ধুহীন এই সময়ে তারা তাদের বেস্ট ফ্রেইন্ড করে নেয় মোবাইলকেই। অনেক অভিভাবক ভাবেন যে মোবাইল দেখলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে যে কি ক্ষতি হতে চলেছে সেটা কল্পনা অনেক সময়ই করা যায় না। তাই অবিলম্বে মোবাইল থেকে দূরে রাখতে হবে আমাদের।
শিশুদের এ আসক্তি থেকে মুক্ত করতে না পারলে ভবিষ্যতে বহু কুফল বয়ে আনবে। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে শিশুর মস্তিষ্ক এবং চোখের ওপর চাপ পড়ছে। শারীরিক ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা। তাদের মানসিক বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ইলেকট্রনিক ডিভাইস। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক নানা রোগের সূচনা ঘটে, বিশেষ করে মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের নানা সমস্যা সৃষ্টি হয় ইলেকট্রনিক ডিভাইসের আসক্তির কারণে।
শিশুরা দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকায় এমনিতেই তাদের সমাজে মেলামেশা করার ইচ্ছে বা প্রবণতা কমে যাচ্ছে। কমছে মানবিক গুণাবলিও আর এই স্মার্ট ডিভাইসের ব্যবহারই এগুলির কারণ। বড়রা এটা ব্যবহার করলেও শিশুদের দূরে রাখতে হবে। বড়দের এই রেডিয়েশন সহ্য করার একধরনের ক্ষমতা তৈরি হলেও শিশুদের সেটা নেই। ফলে ক্ষতিটা বেশি হচ্ছে শিশুদেরই।
স্মার্টফোনের অধিক ব্যবহারে শিশুর চোখের রেটিনা, কর্নিয়া এবং অন্যান্য অংশের ক্ষতি হওয়ার বিপুল সম্ভবনার রয়েছে। এছাড়াও অধিক সময় ধরে মোবাইল ব্যবহারে একদিকে যেমন শিশুরা পড়াশোনায় মনোসংযোগ হারাচ্ছে, পাশাপাশি তাদের মেজাজও হয়ে উঠছে খিটখিটে।
মোবাইল আসক্তি থেকে শিশুদের মুক্ত করতে হবে পরিবারের লোকদেরই। তাদের সামনে মোবাইল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকা উচিত, পাশাপাশি শিশুদেরও মোবাইল হাতে নেওয়াকে নিরুৎসাহিত করা দরকার। যেহেতু তারা এখন বাইরে খেলাধুলা করতে পারছে না, তাই এই সময়ে পরিবারের বড়দের উচিত শিশুদের বেশি বেশি সময় দেওয়া; দিনের একটা অংশে তাদের সাথে খেলাধুলা করা, তাদের শিক্ষণীয় গল্প শোনানো, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। অনুকরণপ্রিয় বাচ্ছাদের সামনে আমাদের সেটাই করতে হবে যা তারা অনুকরণ করে নিজেদের ভবিষ্যৎকে সুস্থ ও সুন্দর করে তুলতে পারবে।