বাংলার খবর
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতিকে অপসারণের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় গত সপ্তাহেই বেআইনিভাবে চাকরি পাওয়া ২৬৯ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এবার সেই মামলাতেই প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির পদ থেকে মানিক ভট্টাচার্যকে অপসারিত করার নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার দুপুর দুটোর মধ্যে তাঁকে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যতদিন না সংসদের নতুন সভাপতি নিযুক্ত হচ্ছেন, ততদিন পর্যন্ত সেই দায়িত্ব সংসদের সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচী সামলাবেন বলেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। তবে নতুন সভাপতি নিয়োগের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের হাতেই তুলে দিয়েছেন বিচারপতি।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তৃণমূল বিধায়ক তথা সংসদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে আগেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল সিবিআই। গত সোমবার তিনি নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরে হাজিরাও দিয়ে আসেন। তার এক সপ্তাহের মধ্যেই এবার তাঁকে অপসারিত করার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে টেট দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার দুপুর দুটোর মধ্যে তাঁকে সশরীরে আদালতে উপস্থিত হতেও বলা হয়েছে। টেট দুর্নীতি মামলার তদন্তভার ইতিমধ্যেই সিবিআই-এর হাতে তুলে দিয়েছে আদালত। সেইসঙ্গে মামলাসংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য মানিক ভট্টাচার্যের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছিল আদালত। সোমবার আদালতে বিচারপতির অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, সংসদ সভাপতি যেভাবে সেই তথ্যগুলো আদালতকে দিয়েছিলেন, তা আদালতকে বিভ্রান্ত করার শামিল। সেইসঙ্গে ২০১৭ সালের সমস্ত নথিপত্র ঠিক কিনা, তা যাচাই করে সিবিআই-কে জানানোরও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেইমতো ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়। প্রায় ২৩ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী সেই পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ওই বছরই প্রথম মেধা তালিকা প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ।তার মধ্যে ৪২ হাজার প্রার্থীকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। এরপর ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর আবারও অতিরিক্ত দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়। সংসদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এক নম্বর বাড়ানোয় এই দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কারণ হিসাবে বলা হয়, প্রশ্নপত্রে ভুল থাকার কারণে ২৭৩ জনকে অতিরিক্ত এক নম্বর দেওয়া হয়েছে। যদিও মামলাকারীর অভিযোগ, বেআইনিভাবে নিয়োগ করতেই দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল।
এরপরই আদালত সংসদকে প্রশ্ন করে ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২৭৩ জনকেই কেন বাড়তি এক নম্বর দেওয়া হল? সকলকে নয় কেন? দ্বিতীয় প্যানেল প্রকাশের কারণ কী? নতুন প্যানেল প্রকাশের জন্য কেন কোনও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি? সংসদ এই প্রশ্নগুলোর কোনও সদুত্তর দিতে না পারায়, এই মামলার তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।