বাংলার খবর
এবার বাংলার পুকুরে জাল ফেললেই উঠবে ইলিশ! নয়া উদ্যোগ নবান্নের
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ভোজন রসিক বাঙ্গালি সারাবছর বর্ষার এই দুই-এক মাসের দিকেই তাকিয়ে থাকে। না, বৃষ্টির জন্য নয়। ইলিশের জন্য। খাবার পাতে দু-এক পিস ইলিশ না পড়লে যে রসনা তৃপ্তিই হয় না। তবে সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে ইলিশের যা দাম, তাতে অনেককেই শুধু চোখে দেখেই মনের স্বাদ পূরণ করতে হচ্ছে। তবে সেই দুঃখ এবার ঘুঁচতে চলেছে। এবার পুকুরে জাল ফেললেই উঠবে সাগরের রুপোলী শস্য! অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন গল্প কথা? একে বারেই না। এবার বারো মাসই পাওয়া যাবে ইলিশ। পুকুরে ইলিশ চাষ করতে উদ্যোগী হল নবান্ন। জানা গিয়েছে, স্যামন চাষে সাফল্য পাওয়া ‘নরওয়েন ইনস্টিটিউট অফ ফুড, ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকোয়াকালচার রিসার্চ’ এর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে রাজ্য মৎস্য দফতর। এই মাসেই ওই সংস্থার সঙ্গে ভার্চুয়ালি আলোচনায় বসতে চলেছে রাজ্য মৎস্য দফতর। সেই আলোচনাতেই ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি হবে। তারপরই ওই সংস্থা রাজ্যে এসে সরোজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি। মন্ত্রী জানিয়েছেন, ইলিশের পোনা সংগ্রহ থেকে প্রতিপালন, সবকিছুতেই প্রযুক্তিগত ভাবে সাহায্য করবে ওই সংস্থাটি। ইলিশের জন্য বাংলাদেশ নির্ভরতা কাটাতেই, সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মৎস্য মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদের গঙ্গার ধারের বেশ কয়েকটি পুকুরকেই প্রাথমিকভাবে ইলিশ চাষের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। এই ইলিশ চাষের জন্য প্রতি পুকুর পিছু ৫০ লক্ষ টাকা করে বাজেট বরাদ্দ করা হবে। মৎস্য দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নরওয়েন ইনস্টিটিউট অফ ফুড, ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকোয়াকালচার রিসার্চ সংস্থার সহযোগিতায় আগামী তিন বছরে পরীক্ষামুলকভাবে পুকুরে ইলিশ চাষের চেষ্টা করা হবে। গোটা বিষয়টাই মাসখানেকের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তারপরই ওই সংস্থার বিশেষজ্ঞরা রাজ্যে এসে ইলিশের প্রজনন, তাদের খাবার, আচরণ পর্যবেক্ষণ করবেন। প্রয়োজনে গঙ্গা এবং সমুদ্রে বড় খাঁচা ফেলে তার মধ্যেও ইলিশ চাষের চেষ্টা করা হবে।
এর আগেও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কৃত্রিম জলাশয়ে ইলিশ চাষ করার চেষ্টা করা হয়েছিল রাজ্যে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ-এর তত্ত্বাবধানে বারাকপুরের সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিসারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সফল হয়নি। তাই এবার কোনরকম ফাঁক না রেখেই নামতে চাইছে রাজ্য মৎস্য দফতর।
এই পদ্ধতিতে সাফল্য এলেও সেই মাছে কি প্রকৃত ইলিশের স্বাদ-গন্ধ পাওয়া যাবে? সেই প্রশ্নও উঠছে। ইলিশ মাছ সমুদ্রের নোনা জল থেকে নদীর মিষ্টি জলে আসে ডিম পাড়তে। প্রবল স্রোতের বিরুদ্ধেই তাদের বার সবথেকে ভালো হয়। কিন্তু পুকুরে তো আর মিষ্টি ও নোনাজল একসঙ্গে মিলবে না। তাই এই পদ্ধতিতে ইলিশ চাষে কৃত্রিম লবণাক্ত স্রোত তৈরির চেষ্টা করা হবে বলেও জানিয়েছেন মৎস্য দফতরের আধিকারিকরা।