বাংলার খবর
এসএসসি দুর্নীতি মামলায় পর্ষদ সভাপতি ও প্রাক্তন উপদেষ্টার বাড়িতে হানা সিবিআই-এর
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: এসএসসি গ্রুপ ‘সি’ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার এসএসসি-এর দুই শীর্ষ কর্তার বাড়িতে হানা দিল সিবিআই! এদিন সকালেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দফতর ডিরোজিও ভবনে হানা দিয়েছে ছয় সদস্যের সিবিআই-এর একটি দল। সকাল ৯টা ১৫ থেকে সেখানে তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আধিকারিকরা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেখানে তলব করা হয়েছিল পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কেও। কিন্তু, একাধিকবার তলব করার পরও তিনি না আসায় বৃহস্পতিবার বিকালে সিবিআই-এর আধিকারিকরা পৌঁছে যান কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের কাদাপাড়ার বাড়িতে। বাড়ি থেকে কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয় ডিরোজিও ভবন।
অপরদিকে, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহার বাড়িতেও এদিন হানা দিয়ে তল্লাশি শুরু করেছে সিবিআই। বৃহস্পতিবার সিবিআইয়ের ৫ সদস্যের একটি দল এসপি সিনহার সার্ভে পার্কের বাড়িতে যায়। সিবিআই সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বাড়ির সদস্যদেরও। এসএসসি-এর প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহার কোথায় কী সম্পত্তি রয়েছে, তা জানারই চেষ্টা করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের।
এসএসসি গ্রুপ ‘সি’ নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত করতে বৃহস্পতিবার সকালেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দফতরে হানা দিয়েছিল সিবিআই। সকাল ৯টা নাগাদ ছয় সদস্যের একটি দল সল্টলেকের ডিরোজিও ভবনে হাজির হয়। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, কাদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে তা জানার পাশাপাশি আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলের সদস্যরা। সেইসঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি-পত্র।
এসএসসি গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় ইতিমধ্যেই উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান শান্তি প্রসাদ সিনহা সহ এসএসসির তৎকালীন প্রোগ্রামার সমরজিৎ আচার্য, তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৌমিত্র সরকার, তৎকালীন সচিব অশোক কুমার সাহা এবং তৎকালীন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার নিজাম প্যালেসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। এমনকি তাঁদের সম্পত্তির হিসাবও চাওয়া হয়েছে।
শান্তিপ্রসাদ সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বেআইনিভাবে অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের তিনি এসএসসি গ্রুপ সি পদে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও, প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও শান্তিপ্রসাদ সিনহা এবং তৎকালীন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার শূন্য পদ তৈরি করেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষার নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে এরকম ৩৮১ জন পরীক্ষার্থীকে জাল সুপারিশপত্র দিয়ে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে।
জানা গিয়েছে, এদিন পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে সিবিআইয়ের আধিকারিকরা তাঁকে ডিরোজিও ভবনে তলব করেছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ১৫ নাগাদ ডিরোজিও ভবনে পৌঁছায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল। সেই সময় দফতরে উপস্থিত ছিলেন না কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। তাই পর্ষদের অ্যাডমিন পারমিতা রায়কে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন সিবিআই আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, ডিরোজিও ভবনে কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় না আসায় তাঁকে বারবার তলব করেন সিবিআই আধিকারিকরা। তারপরও তিনি না আসায় বিকেল পাঁচটা নাগাদ সিবিআই আধিকারিকরা কাদা পাড়ায় কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। সেখান থেকেই তাঁকে ডিরোজিও ভবনে নিয়ে আসা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপারিশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। আর সেই সুপারিশ অনুযায়ী নিয়োগ পত্র দেয় পর্ষদ। তাই নিয়োগে অনিয়মের ক্ষেত্রে পর্ষদের সরাসরি যোগ রয়েছে বলেই মনে করছে সিবিআই। সেই কারণেই কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা।
ইতিমধ্যেই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দু’বার নিজাম প্যালেসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। মেয়েকে বেআইনিভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে বেশ কয়েকবার সিবিআই জেরা করেছে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে। এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশে এসএসসি দফতর আচার্য ভবনেও তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। সেখান থেকে একাধিক নথিপত্রের সঙ্গে দশটি হার্ডডিস্কও বাজেয়াপ্ত করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এবার একইভাবে বৃহস্পতিবার ডিরোজিও ভবনে পর্ষদ দফতরেও তল্লাশি শুরু করেছে সিবিআই।