বাংলার খবর
সিপিএম-এর প্যাডে চাকরির সুপারিশপত্র ভাইরাল, ‘বিজেমূল’ বলে কটাক্ষ বামেদের
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: এসএসসি, প্রাথমিক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এই দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে শাসক দলের একাধিক নেতা, মন্ত্রীর। রাজ্যের সমস্ত বিরোধীদল একযোগে শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুলেছে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট যে ২৬৯ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে, তার মধ্যে বর্ধমানের এক বাম নেতার মেয়ের নামও রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই বিতর্কের মধ্যেই এবার সিপিআইএম-এর লোকাল কমিটির প্যাডে লেখা চাকরির একটি সুপারিশপত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। কিছুদিন আগেই জেলা সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম আমলে চিরকুট দিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। তারপরই এই সুপারিশপত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই তৃণমূল, বিজেপি একযোগে বামেদের কটাক্ষ করতে সময় নষ্ট করেনি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সুপারিশপত্র শেয়ার করে লেখা হয়েছে, ‘বাম আমলে এভাবেই চাকরি দেওয়া হত।’
যে সুপারিশপত্রটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এই সুপারিশ পত্রটি লেখা হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের সিপিআইএম পাচরা লোকাল কমিটির ছাপানো প্যাডে। চিঠিটি ২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর কমরেড খগেন্দ্রনাথ মাহাতোর উদ্দেশে লেখা হয়েছে। সেখানে লেখা, ‘কমরেড, আমি শ্রী মোহিতলাল হাজরা গ্রাম পালজাগুল পোস্ট জাগুল জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর জানি ও চিনি। খুব দুঃস্থ পরিবারের ছেলে। বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। একে আপনার কাছে পাঠালাম। ধেড়ুয়া অঞ্চল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গ্রুপ–ডি পদে যে লোক নেওয়া হবে, সেই বিষয়ে যাতে একে নেওয়া যায়, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি। পরে আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নেব।’ চিঠির শেষে প্রেরকের নাম লেখা জয়জীম আহাম্মদ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই চিঠি ভাইরাল হতেই সিপিআইএম-কে একযোগে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল ও বিজেপি। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাম আমলে কিভাবে চাকরি হত, তা সকলেরই জানা। তা আরও একবার প্রমাণিত হল। প্রাথমিকে কলকাতা হাইকোর্ট যে ২৬৯ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে, তার মধ্যে বাম নেতার মেয়ের নামও রয়েছে। আর এই নিয়ে বাম ও তৃণমূলকে একসঙ্গে আক্রমণ করেছে বিজেপি। দলের জেলা সহ সভাপতি অরূপ দাস বলেছেন, ‘সিপিএম ও তৃণমূল মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরেই প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।’
তবে গোটা বিষয়টাকে খুব একটা পাত্তা দিতে রাজি নয় সিপিআইএম নেতৃত্ব। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি সুশান্ত ঘোষ বলেছেন, ‘এরকম কিছু হয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। আর যেকোন জনপ্রতিনিধির কাছে সাধারণ মানুষ এই ধরনের আবেদন করে অনুরোধ করতেই পারে। এতে এতো হইচইয়ের কিছু নেই।’
সিপিআইএম গোটা চিঠিটি ভালো করে দেখে বেশ কয়েকটি ভুলভ্রান্তি তুলে ধরে গোটা বিষয়টাকেই সাজানো বলে দাবি করেছে। প্রথমত এই চিঠিটি তাদের আমলে নয় বলে দাবি করেছে বামেরা। এই চিঠিটি নিয়ে বামেদের প্রশ্ন, এই চিঠিটি লিখেছেন মোহিতলাল হাজরা, আর চিঠির শেষে সই রয়েছে জয়জীম আহাম্মদের! চিঠির ওপরে অন্য হাতের লেখায় ইংরেজিতে তারিখ লেখা, আর চিঠির শেষে অন্য হাতের লেখায় বাংলাতে তারিখ লেখা! গোটা বিষয়টাকে ‘বিজেমূল’ বলে কটাক্ষ করেছে সিপিআইএম। এরপরই তাদের পক্ষ থেকে কটাক্ষ করে লেখা হয়েছে, ‘পেন একটাই ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। কাগজটা পুরনো হলেও লেখা গুলো বড্ড চকচকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, সুপারিশের চিঠিতে সইয়ের পাশে ডেজিগনেশন থাকা বাধ্যতামূলক। যেহেতু ওটা অফিশিয়াল প্যাডের পাতায় লেখা।’