বাংলার খবর
পুরভোটে গ্রেফতার প্রায় ২০০! শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বলে দাবি কমিশনের, চুড়ি-ফুলের তোড়া নিয়ে কমিশনে অভিনব বিক্ষোভ কংগ্রেসের

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: বিরোধীরা একাধিক অভিযোগ তুললেও রবিবার কলকাতা পুরভোটে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটলেও মোটের ওপর শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলেই জানিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস। কলকাতা পুরসভার ১৪৪ টা ওয়ার্ডে ভোট হয়েছে। ১ হাজার ৬৫৬ ভোট প্রেমিসেসে ৪ হাজার ৯৫৬ বুথে ভোট হয়েছে।
শিয়ালদহর টাকি স্কুল এবং বেলেঘাটার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের খান্না হাইস্কুলের সামনে দু’টো বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। খান্না হাইস্কুলের সামনের ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলেই জানানো হয়েছে। দ্বিতীয় ঘটনাটি এপিসি ক্রসিংয়ের কাছে টাকি স্কুলের সামনে ঘটেছে। তাতে তিনজন আহত হয়েছেন এবং একজন গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অশান্তি পাকানোর অভিযোগে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ১৯৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৪৫৩ টি অভিযোগ জমা পেড়েছে। ৫৫ টি ইভিএম খারাপ হয়েছিল। তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬৩.৬৩ শতাংশ। বুথ দখলের কোনও অভিযোগ কমিশনে জমা পড়েনি বলেই জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস।
যদিও বিজেপি সহ বাম, কংগ্রেস- সকলেই সারা দিন ধরেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে রিগিং, ভোট লুঠ, বুথ জ্যাম, বিরোধী প্রার্থী ও এজেন্টদের মারধর, হুমকি, বুথ থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছে। বড়তলা, বাঘাযতীন, সিঁথি, খিদিরপুরে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বাম প্রার্থী, সমর্থকরা। ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠক আক্রান্ত হহয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে একাধিকবার অভিযোগ জানানোর পরও কোনও সুরাহা হয়নি বলেও দাবি করেছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের দাবি অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন এবং কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ।
তাই ভোটপর্ব মিটতেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনে গিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতিবাদ জানাল কংগ্রেস। রবিবার সন্ধ্যায় চুড়ি ও ফুলের তোড়া নিয়ে নির্বাচন কমিশন হাজির হন কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় সহ বেশকিছু কংগ্রেস নেতা, সমর্থক। ভোট পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ায় নির্বাচন কমিশনারকে চুড়ি ও ফুলের তোড়া উপহার দিতে এসেছেন বলে জানান আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এখানে কারোর অসুবিধা করতে আসিনি। এত সুন্দর ভোট করানোর জন্য আমরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের জন্য চুড়ি ও ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছি। উনি দেখার মতো সুন্দর ভোট করিয়েছেন। কোথাও কোথাও ভোট চারা গাছ থেকে বটগাছে পর্যন্ত পরিণত হয়েছিল।
বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকমের ফোর্স দাঁড়িয়েছিল। প্রশাসনের একটা অংশ আবার শুয়েও ছিল। সবথেকে বড় কথা, নির্বাচন কমিশনারের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন- এমআরও থেকে শুরু করে যারা সেক্টর অফিসার ছিলেন, তাঁরা কোথাও কোথাও বলেছেন তাঁদের কাজ হল শুধু নাকি স্যানিটাইজার দেওয়া এবং মাস্ক বিতরণ করা। ভাবাই যায় না। আমাদের অনেক কর্মীকে বিনা কারণে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের আমরা পরে গিয়ে লালবাজার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছি। নির্বাচন কমিশনার নিজের জায়গা থেকে কী কাজ করেছেন, সেটাই তাঁকে বলতে এসেছিলাম। উনি এই ভোটের তত্বাবধায়ক। কিন্তু তত্বাবধায়ক যদি কোনও কাজ না করেন, তাহলে কী বলা যাবে। সংবাদ মাধ্যমে সবাই দেখেছে সকাল থেকে জাতীয় কংগ্রেস একটার পর একটা অভিযোগ জানিয়েছে। কোনও উত্তরই পাওয়া যায়নি। এমআরও ফোন ধরেনি। আরও যে সমস্ত পদাধিকারীদের নামের তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তাদের প্রার্থীরা ফোন করলে কেউ ফোন ধরেনি।
কী করা যাবে! তাই ওনার জন্য আমরা চুড়ি ও ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছি। চুড়ি বাজিয়ে ওনার ঘুম ভাঙোনার চেষ্টা করলাম। আমি সব সময় ওনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। কিন্তু যা ঘটনা ঘটল, তা ওনাকে বুঝতে হবে। উনি কি সুবিচার করছেন।’ চুড়ি নিয়ে প্রতিবাদ জানানোয় নারী সমাজকে অসম্মান করা হল কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তার উত্তরে আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘একদমই নয়। কিভাবে মহিলারা অপমানিত হয়েছেন, তাদেরকে একবার জিজ্ঞাসা করুন, তারা কিভাবে অপমানিত হয়েছেন!’ যদিও কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলকে নির্বাচন কমিশনের গেটের বাইরে আটকে দেয় পুলিশ। গেটের বাইরেই ফুলের তোড়া ও চুড়ি রেখে ফিরে যেতে হয় তাদের।