বাংলার খবর
সল্টলেকে শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ি ঘিরল পুলিশ, এমএলএ হোস্টেলে বিজেপি বিধায়কদের আটকে রাখার অভিযোগ! বিধাননগর পুলিশের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন শুভেন্দুর

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: শনিবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের ‘বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী হুমকি দিয়েছিলেন, আজকের কলকাতা পুরভোটে যদি কোনরকম অশান্তি বা ভোট লুট হয়, তাহলে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ দেখাতে পথে নামবে বিজেপি। জেলা দিয়ে কলকাতাকেও ঘিরে রাখার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।
সেই কারণেই রাজ্যের সমস্ত দলীয় বিধায়কদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। রবিবার সকালে ভোট গ্রহণ পর্ব শুরু হতেই শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর আসতে শুরু করে। সকাল থেকেই শাসকদলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট, বিরোধী প্রার্থীদের মারধর, হুমকি, এজেন্টদের মেরে বুথ থেকে বার করে দেওয়া, বুথ জ্যামের অভিযোগ তুলেছে বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলো। ঘোষণা মত এদিন দুপুরে এর বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। এরপরই বিকালে সল্টলেকের বাড়িতে দলের ১৬ জন বিধায়ককে নিয়ে একটি বৈঠকে বসেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদারের মতো নেতাও। সেই বৈঠক চলাকালীন হঠাতই বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি (হেড কোয়ার্টার্স)-এর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী শুভেন্দুর বাড়ি ঘিরে ফেলে।
শুভেন্দু অধিকারী সহ বৈঠকে উপস্থিত বিজেপির বিধায়ক ও নেতাদের বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। কারণ জানতে চেয়ে সেখানেই পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন জয়প্রকাশ মজুমদার। রাজ্যে গণতন্ত্র নেই বলেও অভিযোগ করেন জয়প্রকাশ মজুমদার ও ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। জয়প্রকাশ বলেছেন, ‘ভোট হচ্ছে কলকাতা কর্পোরেশনে। কিন্তু সল্টলেক দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। তাহলে শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ি কেন ঘিরে ফেলা হবে! আমাদের এই ভাবে কেন গৃহবন্দি করা হবে! কলকাতায় পুরভোটের নামে প্রহসন হয়েছে।’ শুধু তাই নয়, শুভেন্দু অধিকারীর সভায় যোগ দিতে অন্যান্য জেলা থেকে আসা বিজেপি বিধায়কদেরও এমএলএ হোস্টেল থেকেও এদিন পুলিশ বেরোতে দেয়নি বলেও অভিযোগ করেছে বিজেপি। বিধায়কদের হোস্টেলের গেটে তালা দিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
ভোটে অশান্তি নিয়ে কলকাতায় মিছিল করার পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশনে বিক্ষোভ দেখানোর অংশ নিতে যাওয়ার কথা ছিল বিজেপি বিধায়কদের। কলকাতার বাইরের ভোটারদের শহরে ঢোকায় বিধিনিষেধ থাকলেও বিধায়কদের হোস্টেলে থাকায় কোনও বাধা ছিল না। সেই মতো পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া থেকে আসা বিজেপির আট বিধায়ক কিড স্ট্রিটের হোস্টেলে ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ তাঁরা হোস্টেল থেকে বেরতে গেলে দেখেন মূল গেটে তালা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরেই আট বিধায়ক হোস্টেলের গেটের ভিতরের রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাদের বিধায়কদের আটকে রাখার জন্যই হোস্টেলের গেটে তৃণমূল তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি।
ভোটের দিন কলকাতার বাইরের বিধায়করা রাস্তায় নামলে অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে এবং বিধায়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই গেটে তালা দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। তবে কারা তালা ঝুলিয়েছেন সে বিষয়ে প্রশাসনের তরফে কিছু জানানো হয়নি। এই ঘটনা নিয়ে, তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন শুভেন্দু অধিকারী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, পিসি, ভাইপোর নির্দেশেই এক্তিয়ার বহির্ভূতভাবে বিধাননগর পুলিশ তাঁদের আটকে রেখেছে। সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘ভোট হচ্ছে কলকাতা পুরসভায়। আর অন্যায় ভাবে আমাদের আটকে রেখেছে বিধাননগর পুলিশ।
আমাদের আটকে রাখার বিধাননগর পুলিশের কোনও অধিকার নেই। আমরা কলকাতা পুরসভার বর্ডারেও নেই যে আমাদের আটকে দেবে। আর আটকানোর হলে কলকাতা পুলিশ আটকাবে। বিধাননগর পুলিশ কেন আটকাবে! আমরা বিধাননগর দিয়ে তো সহজেই যাতায়াত করতে পারব। কিন্তু এখানকার পুলিশ অসভ্যতা করছে। পিসি, ভাইপোর নির্দেশেই এই সব করছে। আমি রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে ফোন করেছিলাম। তিনি আমাকে আসতে বলেছেন। তিনি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। কলকাতার পুলিশ কমিশনার আমাকে বলছেন আমাদের এস্কর্ট করে রাজভবনে নিয়ে যাবেন। কিন্তু বিধাননগর পুলিশ আমাদের যেতেই দিচ্ছে না। তবুও আমরা যাব।’