বাংলার খবর
দুই ভাই মিলে ছক কষেই গিরিশ পার্কে সোনার দোকানে লুঠ, হতবাক পুলিশ

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: উত্তর কলকাতার গিরিশ পার্কে সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় তদন্তে নেমে চক্ষু চরক গাছ পুলিশের। থানায় গিয়ে যে ডাকাতি ও আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, ঘটনার মূল চক্রী তিনিই! অভিযোগকারী ও তাঁর ভাইকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পর্দা ফাঁস হয়ে যায়। দু’ই ভাইকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, এক ভাই লুঠ করেছেন এবং আরেক ভাই সোনা লুকোতে তাঁকে সাহায্য করেছেন। উল্টোডাঙ্গা রেল আবাসনের এক ক্লাব লাগোয়া পরিতক্ত ঘর থেকে লুঠ হওয়া সমস্ত সোনা উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, নীতিশ এবং নীতিন- দুই ভাই সোনা লুঠ করার পাশাপাশি কারসাজি করে এই নাটক সাজিয়েছিলেন। গোটা বিষয়টাই সাজানো এবং নাটক। এবং এই গোটা ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হলেন নীতিশ।
উল্লেখ্য, মাথায় আঘাত নিয়ে সোমবার রাতে গিরিশ পার্ক থানায় গিয়ে নীতিশ অভিযোগ করেন, ট্যাক্সি করে দু’জন দুষ্কৃতী এসে সিংহীবাগানের দফতর থেকে প্রচুর সোনার গহনা লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে। তিনি আরও জানান, ওই দুষ্কৃতীরা ৮১১৬ গ্রাম সোনার ৭ টি বাট এবং ৭৪৩ গ্রাম সোনার ১ টি বাট নিয়ে গিয়েছে। সেই সময় বাধা দিতে গেলে তাঁকে দুষ্কৃতীরা মাথায় আঘাত করে বলেও দাবি করেন তিনি।
এই অভিযোগ নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতেই অভিযোগকারীর কথায় একাধিক অসংগতি ধরা পড়ে। তাতেই সন্দেহ হয় পুলিশের। এরপর লাগাতার জেরা করতেই আসল ঘটনার পর্দা ফাঁস হয়ে যায়। পুলিশি জেরার মুখে আসল সত্য স্বীকার করে নেন নীতিশ। জেরায় নীতিশ স্বীকার করে নেন, গোটা ঘটনাটাই সাজানো। আসলে তিনি নিজেই লুঠ করেছেন। আর সেই সোনা লুকোতে তাঁকে সাহায্য করেছেন তাঁর ভাই নীতিন। আসল কথা জানতে পেরে রাতেই তল্লাশি অভিযান শুরু করে পুলিশ। তারপর উল্টোডাঙ্গা রেল আবাসনের কাছে একটি ক্লাবের লাগোয়া পরিত্যক্ত ঘর থেকে উদ্ধার হয় সমস্ত সোনা। তারপরই নীতিশ এবং নীতিনকে গ্রেফতার করে গিরিশ পার্ক থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সোনার দোকানের মালিক থাকেন ওড়িশায়। গিরিশ পার্কে সোনার দোকানের দেখাশুনা করতেন নীতিশ। বাংলাদেশ থেকে সোনা আমদানি করে তা গলিয়ে ওড়িশায় মালিকের কাছে পাঠানোই ছিল নীতিশের কাজ। বছর দেড়েক ধরে ওই দোকানে কাজ করছেন নীতিশ। রবিবার রাতেও দেড় কেজি সোনা এসেছিল। আর সেই সোনাকে হাতাতেই দুই ভাই মিলে অভিনব ছক কষে। আসা মাত্রই সেই সোনা রবিবার রাতেই ভাইকে দিয়ে দেন নীতিশ। তারপরই সোনা লুঠের ভুয়ো গল্প সাজান তাঁরা।
এই গোটা পরিকল্পনার মাস্টারমাইন্ড হচ্ছেন নীতিশ। তিনিই ভাই নীতিনকে নির্দেশ দেন, একজনকে সঙ্গে নিয়ে ট্যাক্সি করে এসে দফতরের সিসিটিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে। পরিকল্পনামাফিক নীতিন এক ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে ট্যাক্সি করে দুপুরে দাদার অফিসের সামনে আসেন। এবং অফিসের ভিতরে ঢুকে যান। কিছুক্ষণ পর একটি ব্যাগ নিয়ে সেখান থেকে ট্যাক্সি করে বেরিয়েও যান। তারপর নিজেই নিজের মাথা ফাটিয়ে গিরিশ পার্ক থানায় গিয়ে সোনা লুঠের অভিযোগ দায়ের করেন নীতিশ। এবং পুলিশকে তিনি জানান, দু’জন ব্যক্তি তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে এবং তাঁকে মেরে সোনা লুঠ করে পালিয়েছে।
অভিযোগ পাওয়ার পরই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখতে পায়, সত্যিই দু’জন ব্যক্তি অফিসে ঢোকে এবং কিছুক্ষণ পর একটি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পরই সেখান থেকে বেরিয়ে যান নীতিশ। এবং মাথায়, মুখে ব্যান্ডেজ করে আবার তিনি ফিরে আসেন। সিসিটিভি ক্যামেরায় আরও দেখা যায়, দুই ব্যক্তি সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেও কোনও চিৎকার, চেঁচামেচি বা আশেপাশের লোকজনকে জানানোর মতো কোনও কাজ করেননি নীতিশ। সেখানেই প্রথম সন্দেহ হয় পুলিশের। সেই নিয়েই পুলিশ চেপে ধরলে, আসল ঘটনা স্বীকার করে নেন নীতিশ। আর সেখানেই তাঁদের সাজানো গল্প পুরো ফ্লপ হয়ে যায়। এখন ভাই নীতিনকে নিয়ে হাজতেই রয়েছেন নীতিশ।