ভাইরাল খবর
দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে লন্ঠনের আলোয় পড়েই আইএএস হলেন সামান্য ট্রাক ড্রাইভারের ছেলে পবন!
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : নিষ্ঠা, একাগ্রতা, অধ্যাবসায়, ধৈর্য্য, কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা থাকলে যে কোনও অসম্ভবকেই সম্ভব করা যায়। এই কথাটা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন সামান্য এক লরি চালকের ছেলে পবন। প্রথম দু’বার পরীক্ষায় বসেও সাফল্য আসেনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি পবন। তৃতীয় বার ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসে চোখ ধাঁধানো ফল করলেন তিনি। রাজস্থানের নগৌরের বাসিন্দা রামেশ্বর লাল পেশায় একজন ট্রাক চালক। তাঁর ছেলে পবন ইউপিএসসি পরীক্ষায় দুরন্ত ফল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ট্রাক চালিয়ে মাসে মাত্র ৪ হাজার টাকা বেতন পেলেও ছেলের পড়াশোনায় কোনও দিন খামতি রাখেননি। সব সময় পবনকে পড়াশোনায় উৎসাহ দিতেন।
পবনের ছোটবেলা কেটেছে চরম দারিদ্র্যের মধ্যেই। সোমানায় একটি ঝুপড়ি ঘরের মধ্যেই দিন কেটেছে তাঁর। যদিও প্রথমদিকে মাটির হাঁড়ি তৈরি করে তা বিক্রি করে সংসার চালাতেন রামেশ্বর লাল। এই পরিস্থিতির মধ্যে বড় হয়ে ভালো কিছু করে দেখানোটা মোটেও সহজ ছিল না পবনের পক্ষে।
২০০৩ সালে পরিবারকে নিয়ে নগৌরে চলে আসেন রামেশ্বর লাল। তারপরই তিনি ট্রাক ড্রাইভারি শুরু করেন। নগৌরে যে বাড়িতে পবনরা থাকতেন, সেখানে না ছিল বিদ্যুৎ, না ছিল পড়াশুনোর কোনও পরিবেশ। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন প্রতিবেশীরাও। লণ্ঠনের আলোতেই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন পবন। আর এই অসম লড়াইয়ে সব সময়ই পাশে পেয়েছেন তাঁর বাবা-মাকে।
এত প্রতিকূলতার মধ্যে পড়াশোনা করেও মাধ্যমিকে ৭৯.৯২ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেন পবন। এরপর জয়পুরের এক কলেজ থেকে বিডিএস করেন। তখন থেকেই ইউপিএসসি (UPSC) সহ অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও শুরু করে দেন। কিন্তু সামান্য চার হাজার টাকার বেতনের চাকরি করে ছেলের পড়াশুনোর খরচ যোগানো এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছিল রামেশ্বরের পক্ষে। ফলে তার জন্য তাঁকে ঋণ পর্যন্ত নিতে হয়।
২০০৬ সালে খবরের কাগজে একটি খবর দেখে নিজের লক্ষ্যও স্থির করে ফেলেন পবন। সেই খবরটি ছিল ‘এক রিক্সাচালকের ছেলে আইএএস হলেন’। এই খবরটি দেখেই পবনও নিজের মনকেই বারবার বলেন, ‘একজন রিক্সা চালকের ছেলে যদি আইএএস হতে পারে, তাহলে এক ট্রাক চালকের ছেলে কেন পারবে না’। আর তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনিও আইএএস হতে চান। তারপরেই তার প্রস্তুতি শুরু করে দেন জোর কদমে। পবন বলেছেন, ‘আমি কলেজে গিয়ে আইএএস হওয়ার জন্য সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করি। তারপরই তার প্রস্তুতি শুরু করি।’
২০১৮ সালে আরএএস-এ নির্বাচিত হন পবন। বর্তমানে তিনি বাড়মের জেলা শিল্প কেন্দ্রে ডিরেক্টর। ওই বছরই বিয়ে করেন তিনি। তাঁর এক পুত্র সন্তানও রয়েছে। এরমধ্যেই পবন দু’বার ইউপিএসসি (UPSC) -এর জন্য চেষ্টা করেন। ইন্টারভিউ পর্যন্ত পৌঁছলেও সাফল্য আসেনি। তবুও হাল ছাড়েননি। তৃতীয় বারের চেষ্টায় ইউপিএসসি তে ৫৫১ নম্বর পেয়ে পাশ করে গোটা দেশকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সামান্য ট্রাক ড্রাইভারের ছেলে পবন। সেই সঙ্গে তাঁর আইএএস হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হল।