বাংলার খবর
শেরওয়ানি কেনার টাকা না দেওয়ায় দাদুকে খুন করল নাতি!
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: শেরওয়ানি কেনার টাকা দেননি দাদু। তাই দাদুকে খুন করার অভিযোগ উঠল নাতির বিরুদ্ধে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমান থানার সরাইটিকর আমতলা এলাকায়। মৃত ওই প্রৌঢ়ের নাম শশাঙ্কশেখর দত্ত (৭৩)। ঘটনায় অভিযুক্ত নাতি অনিরুদ্ধ দত্ত এবং তার বাবা ফাল্গুনী দত্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পাড়া-প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, অনিরুদ্ধ মানসিকভাবে অসুস্থ। হামেশাই টাকা-পয়সা নিয়ে পরিবারে অশান্তি লেগে থাকত বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। এর আগেও অনিরুদ্ধর বিরুদ্ধে দিদাকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই কারণে সে একদিন পুলিশি হেফাজতে ছিল বলেও জানা গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাক্তন কোলিয়ারি কর্মী শশাঙ্কশেখর দত্ত তাঁর ছেলে ফাল্গুনী দত্ত ও নাতি অনিরুদ্ধ দত্তকে নিয়ে সরাইটিকর আমতলায় থাকতেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ছোটখাটো বিষয় নিয়ে প্রায়ই শশাঙ্কশেখর দত্তকে ফাল্গুনী ও তাঁর ছেলের অনিরুদ্ধ মারধর করতেন। পড়শীদের দাবি, বুধবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ দত্ত বাড়িতে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তাঁরা জানালা খুলে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে রয়েছেন শশাঙ্কশেখর দত্ত। প্রতিবেশীরা দরজা খুলতে বলায় কেউ দরজা না খোলায় তাঁরা দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন। ঢুকে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছেন শশাঙ্ক বাবু। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরাই বর্ধমান থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে শশাঙ্কশেখর দত্তকে উদ্ধার করে বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
গোটা ঘটনার তদন্ত নেমে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দেওয়ালে মাথা ঠুকে শশাঙ্ক বাবুকে মারা হয়েছে। ঘটনায় ছেলে ফাল্গুনী দত্ত ও নাতি অনিরুদ্ধ দত্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশি জেরার মুখে নাকি অনিরুদ্ধ দাদুকে মারার কথা স্বীকার করেছে বলেও জানা গিয়েছে। নাতির পাশাপাশি ছেলেও এই খুনের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা তা জানার জন্য দু’জনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, ‘মারধরের আওয়াজ পেয়ে আমরা ছুটে আসি। দেখি ওই বৃদ্ধ ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। মুখ দিয়ে রক্ত বেরচ্ছিল তাঁর। আর ছেলেটা পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল দাদু মরে গেল। আমরা দরজা ভেঙে বাড়ির ভেতরে ঢুকি। ছেলেটি ওর বাবাকে উপরের ঘরে আটকে রেখে দরজায় তালা দিয়ে দিয়েছিল। ছেলেটির মানসিক সমস্যা রয়েছে বলে আমরা জানি।’
আরেক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, ‘এর আগে দিদাকে মারধর করত। একবার দিদাকে ছাদ থেকেও ফেলে দিয়েছিল। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছেলে এবং নাতিকে নিয়েই থাকতেন ওই বৃদ্ধ। দাদু মাঝখানে একবার বাড়ি থেকে চলেও গিয়েছিলেন। তার কিছুদিন পর আবার ফিরে আসেন। উনি কোল্ডফিল্ডে চাকরি করতেন। অবসর নেওয়ার পর টাকা পান এবং পেনশনও পেতেন। টাকা-পয়সা নিয়েই বাড়িতে ঝামেলা হত। উনার ছেলে কোনও চাকরি করেন না। তাঁর টাকাতেই সংসার চলত।’