দেশের খবর
নিজের সন্তানকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলবার পরিকল্পনা করছে ডুবাই
বোনকে বাঁচানোর জন্য তিনি দু দুবার দুবাই থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ কারণে তাকে তিন বছরের বেশি জেল খাটতে হয়েছিল

বেঙ্গল এক্সপ্রেস: দুবাইয়ের অবাধ্য প্রিন্সেস কে জানেন, শেখা লতিফা ( Sheikha latifa) যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল শুধুমাত্র তার বোনকে বাঁচানোর জন্য। ইনফ্যাক্ট তার বোনকে বাঁচানোর জন্য তিনি দু দুবার দুবাই থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ কারণে তাকে তিন বছরের বেশি জেল খাটতে হয়েছিল।
শেখা লতিফা ১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আর মা ছিলেন আলজারিয়া এবং তার মায়ের সাথে তার বাবার ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার কারণে, খুব অল্প বয়স থেকে সে মায়ের ভালোবাসা পায়নি। বড় হয়েছেন তার পিসির তত্ত্বাবধানে। মায়ের ভালোবাসা না পাওয়ার কারণে শেখা লতিফা খুব অল্প বয়স থেকেই একাকীত্ব বোধ করত। সেই সময় তার পছন্দের একমাত্র মানুষ ছিল তার বড় বোন শামশা। এবার থেকে শামশা ছিল চার বছরের বড়। এবং লতিফার মেন্টালিটি এবং চিন্তাধারা সব কিছুই ছিল একই ধরনের। তারা দুজনেই ছিল স্বাধীনচেতা মানুষ। তারা দুই বোনই রয়েল ফ্যামিলির যেসব নিয়ম এবং রেস্ট্রিকশন গুলো ছিল সেগুলো মানতে নারাজ ছিল। তারা চাইতো স্বাধীনভাবে বাঁচতে এবং স্বাধীনভাবে পড়াশোনা করতে ঘুরে বেড়াতে, আর এই সবই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের জীবনে। দুবাইয়ের বাবার বাড়ি থেকে ২০০০ সালে বড় বোন শামশা পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়ার পরও শান্তি পাননি তিনি। পালিয়ে যাওয়ার দুই মাস পর একদিন লন্ডনের কেমব্রিজ শহরের একটি রাস্তায় ধরা পড়েন শামশা। ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে হেলিকপ্টারে করে লন্ডন থেকে সোজা ডুবাইয়ে নিয়ে আসা হয়। এবং পালিয়ে যাওয়ার কারণে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় জেলে। জেলে তাকে খুব কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করতে হয়েছিল।
সামসা এবং লাতিফার একই রকম চিন্তা ধারার কারণে ছোট বোন লাতিফাও সকড্ হয়ে পড়েন। আর দিদির এমন ভয়াবহ পরিনাম দেখেও তিনি পিছুপা হননি। উল্টো লাতিফা নিজে ডিসিশন নেন যে সেও পালিয়ে যাবে। যখন লাতিফার বয়স ১৬ বছর তখন তিনি প্রথমবারের মতো ডুবাই থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। পালানোর পিছনে রয়েছিল এক বিশাল উদ্দেশ্য। তার উদ্দেশ্য ছিল এই যে, তিনি ডুবাই থেকে পাড়ি দেবেন ওমানে এবং সেখান থেকে একটি আইনজীবী হায়ার করে দুবাইয়ের রাজ পরিবার অর্থাৎ তার নিজের ফ্যামিলির এগেনস্টে তিনি লড়বেন। কিন্তু সেই গুড়ে বালি, ওমানের বর্ডারের সামনে ধরা পড়ে যায় লাতিফা। পালিয়ে যাওয়ার কারণে তাকে তিন বছর চার মাস জেলে আটকে রাখা হয়। এই জেলে ছিল না, শোয়ার জন্য কোন ধরনের খাট, এমন কি স্নান করার জন্য সাবান এবং সকালে ব্রাশ করার জন্য কোলগেট টুট ব্রাসও ছিল না। এমনকি তাকে একটি জামা সব সময় পড়তে হতো।
পশুর মত ব্যবহার করা হতো তার সাথে। এমনকি তিন বছর চার মাস জেল খেটে বের হওয়ার পরও তার মুক্তি হয়নি। বাইরে বের হওয়ার পরও তাকে নজরদারিতে রাখা হতো সব সময়। তার সাথে সবসময় বডিগার্ড রাখা হতো। তার সব মিটিংগুলো পর্যবেক্ষণ করা হতো। এত করা গার্ডের মধ্য দিয়েও লাতিফার পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কিন্তু দমে যায়নি। তিনি আরো কঠিন কঠিন জিনিস শিখতে থাকেন যেমন, সুইমিং, ক্যারাটে, প্রীতি আরো মার্শাল আর্ট শেখেন। এবং আগের থেকে কয়েকগুণ স্ট্রং হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি তার বান্ধবী টিনার সাথে দুবাই থেকে পালিয়ে যাওয়ার ফন্দি আটেন। যেমন ভাবনা তেমনি কাজ, নকল পাসপোর্ট এবং নকল ডকুমেন্টস তৈরি করে দুবাই থেকে বের হয়ে গাড়ি চালিয়ে ওমান উপকূলে পৌঁছে যান। এমনকি তিনি জেটস কি চালিয়ে আন্তর্জাতিক জল সীমানায় প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে টিনা এবং লতিফা একজন সাবেক গোয়েন্দা এর সাহায্যে একটি ছোট জাহাজ ভাড়া করে গোপনে ইন্ডিয়া রওনা হয়েছিলেন। তাদের মেইন প্ল্যান ছিল যে ভারতে এসে তারপর বিমান করে ইউ এস গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবে। তুই ইন্ডিয়ার এক বর্ডার এর কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেই জাহাজটিকে আটক করে ইন্ডিয়া সেনাবাহিনীরা।
আরও পড়ুন-ভবিষ্যতে আপনার হার্ট অ্যাটাক হবে কিনা তা এখনই জানতে পারবেন এই এ আই ( AI)এর ফিচার্ডের সাহায্যে
এবং তাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তাদের দুজনকে আটক করেন ইন্ডিয়া সরকার। এবং তাদের দুজনকে দুবাইয়ে ফেরত দেওয়ার জন্য ভারত সরকার দুবাই থেকে অস্ত্র প্রচার করবার জন্য যাদেরকে আটক করেছিল তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন। তাদের মধ্যে এই সমঝোতা হওয়ার পর টিনা এবং লতিফাকে ডুবাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই ঘটনা ঘটবার পর তাদেরকে আর কখনো দেখা যায়নি জনসমক্ষে। তবে দীর্ঘ সময়ের পর কিছুদিন আগে লতিফা একটি ভিডিও শেয়ার করেন এবং বলেন তাকে এমন একটি ভিলায় রাখা হয়েছে যে, যেটি একটি জেলখানা। এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দুবাইয়ের কিং এর ওপর একটু বেশি নেগেটিভিটি ছড়িয়ে পড়ে। এবং অনেকেই মনে করছেন যে লতিফাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য পরিকল্পনা করছে দুবাই।