বেশি মাত্রায় এই মধু খেলে মাতাল হবেন আপনিও !
Connect with us

ভাইরাল খবর

বেশি মাত্রায় এই মধু খেলে মাতাল হবেন আপনিও !

Published

on

Rate this post

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : ‘মধু’ নামটা শুনলেই মনে একটা মিষ্টি অনুভূতি আসে । এই মধু শুধু খেতে মিষ্টি তা নয় ,৫ হাজার বছর ধরে মধু তার ঔষুধি গুনের জন্য সারা দুনিয়ায় জনপ্রিয় চিকিৎসাক্ষেত্রে মধুর ব্যবহার যে ভাবে হয় আর কোনো খাদ্যদ্রব্যের সেভাবে হয় বলে মনে হয় না।

হিমালয়কন্যা নেপালের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে এমনই এক মধু পাওয়া যায় যা খেলে অনুভূত হয় অদ্ভুত মাদকতা । নির্দিষ্ট মাত্রা থেকে এই মধু বেশি হেলে বাস্তব জ্ঞানও হারিয়ে ফেলে মানুষ । নেপালে দুর্গম ভূ-প্রকৃতি আর জীব বৈচিত্রের মাঝে এমনি এক মধু পাওয়া যায় যা বিশ্বে আর কোথাও পাওয়া যায় না। এই মধুর নাম হলো –”পাগলা – মধু ।”

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মৌমাছি- এপিস ডোরসাটা ল্যাবোরিওসা হিমালয়ের দুর্গম পাহাড়ি উপত্যকায় বসবাস করে । এই মৌমাছিদের নেপাল, ভুটান, ভারত এবং চীনের ইউনান প্রদেশের হিমালয় পার্বত্য এলাকায় ৮,২০০ থেকে ৯,৮০০ ফুট ওপরে পাওয়া যায়। তবে তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা মৌমাছির প্রজাতি রয়েছে নেপালেই । এই মৌমাছিদের বিশেষত্ব আসলে অন্য জায়গায়!এই মৌমাছি রডোডেন্ড্রন নামে এমন এক গাছের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে, যার মধুতে গ্রায়ানোটক্সিন নামে বিষাক্ত যৌগ থাকে। গ্রায়ানোটক্সিন ঘটাতে পারে হ্যালুসিনেশন। এই গ্রায়ানোটক্সিন মিশ্রিত মধু চিকিৎসা দ্রব্য হিসেবে বিভিন্ন অঞ্চলে হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর এই মধু একমাত্র নেপালের কুলুং উপজাতির লোকেরা সংগ্রহ করে, তাও বছরে মাত্র দু’বার।

Advertisement

দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল অন্নপূর্ণা পর্বতশ্রেণির পাদদেশে বসবাস কুলুং উপজাতির। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একমাত্র এই উপজাতির সদস্যরা হাজার ফুট উঁচু চড়ে মধু সংগ্রহ করে। তাদের সংস্কৃতির অংশ এই মধু সংগ্রহ তাদের কিন্তু জীবিকা নির্বাহের এটিই একমাত্র পদ্ধতি নয়। কিছুটা লোকাচার এবং ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই তারা এমনটি করেন।

বিচ্ছিন্ন এই জনপদের সঙ্গে বহির্বিশ্বের সংযোগ ঘটে এক দশকেরও কিছুমাত্র আগে আর তারপর থেকে এই অঞ্চলের মধু এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকাতে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও এর বহু আগে থেকে এই অঞ্চলের মধু চীন, জাপান এবং কোরিয়ায় ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

হিমালয়ের মৌমাছিরা অনেক রকমের মধু সংগ্রহ করলেও মধু কেমন হবে- তা নির্ভর করে কোন ঋতুতে মৌমাছি কোন ফুলের মধু সংগ্রহ করছে। বসন্তে রডোডেন্ড্রন নীল এবং গোলাপি রডোডেন্ড্রন ফুলে ছেয়ে যায় আর এই ফুলের রেণু আর মধু আকর্ষণ করে এখানকার বিশালাকার মৌমাছিদের। মৌমাছিরা ফুলে ফুলে ঘুরে সংগ্রহ করে ফুলের মধু আর রেণু। এরপর সেই মধু জমা করে পাহাড়ের গায়ে ঝুলন্ত মৌচাকে।

Advertisement

কষ্টসাধ্য এই মধু সংগ্রহের কাজ বছরে মাত্র দু’বার করে গ্রামবাসীর দল বেঁধে প্রায় ৩০ জনের মতো থাকে ওই দলে। প্রত্যেকে দেবী রাংকেমির কাছে প্রার্থনা করে মধু সংগ্রহ করতে যায়।তিনিই তাদের রক্ষা করবেন এটাই ওদের বিশ্বাস।

মধু সংগ্রহের এই রীতির সঙ্গে সঙ্গে মধু সংগ্রহকারীদের পোশাকও প্রাচীন। এত বড় মৌমাছির আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য তাদের কাছে কোনো সুরক্ষাকারী পোশাক নেই। যে হাতের কাছে যেমন পোশাক পায়, তাই দিয়েই কাজ চালায়।

পাহাড়ের গা ঘেঁষে জমে থাকা মধু সংগ্রহ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু এই নির্ভীক উপজাতির মানুষরা হাজার বছরের ঐতিহ্য আর বিশ্বাসের কারণে জীবন বাজি রেখে মধু সংগ্রহ করে।

Advertisement

মৌচাকের যত কাছে তারা পৌঁছায়, মৌমাছিরা তত আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। প্রত্যেকের ওপর এই তিন সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের মৌমাছিরা তাদের বিষাক্ত হুল নিয়ে আক্রমণ চালায়। এই অবস্থায় কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে সমুদ্রপৃষ্ঠে থেকে প্রায় হাজার ফুট ওপরে এক হাতে বাঁশ আর দড়ির মই ধরে এই মধু সংগ্রহের কাজ করা সম্ভব না হলেও , কুলুং উপজাতির লোকেরা অবলীলায় কাজটি করে যায়। এই লোকেরা পর্যাপ্ত মধু সংগ্রহ করে তবেই ক্ষান্ত হয়। তবে সব ক্লান্তি-কষ্ট দূর হয়ে যায় এই অমৃত সুধা পান করলে।

এক মৌসুমে মাত্র তিনদিনে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ গ্যালন মধু সংগ্রহ করা হয়। গ্রামের একমাত্র পড়ালেখা জানা ব্যক্তিগণেরা এই মধু বহির্বিশ্বে বিক্রি করেন। মধু বেচা কেনার সব কাজ তিনিই করে থাকেন।

কিন্তু ‘পাগলা মধু’ এই উপজাতির মানুষগুলোকে সেভাবে প্রভাবিত করতে পারে না বহু বছর ধরে তারা এই মধু সেবন করে আসছে বলেই হয়তো তারা অভ্যস্ত এই মধুর সঙ্গে ,তবে এই মধু সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি তারা নেয় তা থেকে বোঝা যায় এই মধুর মাদকতা সত্যিই অনস্বীকার্য।

Advertisement

ভেষজ চিকিৎসায় এর চাহিদা কম না হওয়া সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি ও সে তুলনায় আর্থিক নিরাপত্তা না থাকার কারণে কুলুং উপজাতির লোকেরা ধীরে ধীরে এই পেশা ছেড়ে দিতে চাইছে। মধু আমদানি-রপ্তানিকারকদের আন্তরিক পৃষ্ঠপোষকতা ব্যতীত এই প্রাচীন ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা কিন্তু দুরূহ হয়ে পড়বে ভবিষ্যতে।

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.