বাংলার খবর
সরকারি প্রকল্পের কাজ ঢিমেতালে হচ্ছে, থাপ্পড়ের পর এবার মুখ্যমন্ত্রীর ‘কানমলা’ দাওয়াই
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: সোমবার পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠকে বলেছিলেন, ‘আমার পার্টির লোক হলে টেনে চারটে থাপ্পড় মারতাম।’ মঙ্গলবার বাঁকুড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে ‘কানমলা’ খাওয়ার কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়ার পর বাঁকুড়াতেও প্রশাসনিক বৈঠকে রাফ অ্যান্ড টাফ ভূমিকাতেই দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে।
সরকারি প্রকল্পের কাজ দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা ঢিমেতালে কাজ হওয়ার অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি। এদিন প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চ থেকেই নাম ধরে ধরে বাঁকুড়ায় অসমাপ্ত এবং ৫-৬ বছর ধরে কাজ চলা প্রকল্প গুলোর কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই বাঁকুড়ার জেলাশাসক রাধিকা আইয়ারকে রীতিমতো তিরস্কার করেন মুখ্যমন্ত্রী। রায়পুরে পানীয় জল প্রকল্পের কাজ কেন আট বছর ধরে ‘আন্ডার প্রসেস’ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘যে ডিপার্টমেন্ট করছে, তাদের কানমলা খাওয়া উচিত।’
সোমবার পুরুলিয়ার বৈঠকেও কিভাবে সেখানকার জেলাশাসক রাহুল মজুমদারকেও তিরস্কার করেছিলে মুখ্যমন্ত্রী। ইটভাটা গুলো থেকে যে রেভিনিউ ওঠে তার অধিকাংশই সরকারের ঘরে জমে পড়ে না। সরকারি সংগ্ৰহকারীরাই তা পকেটস্থ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই শুনেই মুখ্যমন্ত্রী জেলা শাসককে বলেন, ‘ডিএম শুনতে পাচ্ছো? এটা তৃণমূল করেনি। প্রশাসনের নিচুতলার কর্মীরা কালেকশন করে। তারা কালেকশন করে টাকাটা জমা দেয় না। কিছুটা দেয়। বাদবাকিটা নিজেরা খেয়ে নেয়। এতদিন ধরে জেলায় আছো। কী জেলা চালাচ্ছ তুমি? কী করছ তুমি? আমার ধারনাটাই বদলে গেল। এতকিছু দিচ্ছি মানুষকে, অথচ কিছু লোক এত লোভী কেন হয়ে যাচ্ছে! আর কত চাই? আমার পার্টির লোক হলে আমি টেনে চারটে থাপ্পড় মারতাম।’
মঙ্গলবার একই ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের মুখে পড়লেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক। এ দিন কাগজ খুলে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বাঁকুড়ায় ৩৪টি সরকারি প্রকল্পের কাজ দীর্ঘদিন ধরে ঢিমেতালে হচ্ছে। তার মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের দেরি নিয়ে ডিএমকে প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, ‘জেলায় ৪-৫ বছর ধরে অনেক প্রকল্পের কাজ বাকি পড়ে রয়েছে। জিজ্ঞেস করলেই বলে প্রজেক্ট আন্ডার প্রসেস। আমি এত বোকা নই। প্রজেক্ট অন প্রসেস বললেই আমি সার্ভে করব না, মেনে নেব।’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে জেলায় পড়ে থাকা প্রকল্পগুলির একটি একটি করে নাম উল্লেখ করেন। তাতে প্রথমেই বলেন, ২০১৪ সালে ঘোষণা হওয়া জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হাতে থাকা রায়পুর ব্লকের জল সরবরাহ প্রকল্প এখনও শেষ হয়নি। ৮ বছর পড়ে আছে। এরপর সরাসরি জেলাশাসক রাধিকা আইয়ারকে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘২১.২০ কোটি টাকার প্রজেক্ট ১৪ সালে ঘোষণা হয়েছিল। আপনারা আমাকে দেখাচ্ছেন আন্ডার প্রসেস। কেন এত দিনেও শেষ হয়নি?’ তার উত্তরে জেলাশাসক বলেন, ৮৫ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। সেই শুনেই মুখ্যমন্ত্রী রেগে গিয়ে বলেন, ‘না, এসব বললে হবে না। আট বছর ধরে আমার প্রজেক্ট পড়ে আছে। কানমলা খাওয়া উচিত সবার কাছে যে দফতর করছে।’
এছাড়াও, আদিবাসী দফতরের হাতে থাকা আশ্রম হোস্টেল কেন ৬ বছর ধরে পড়ে আছে, মুকুটমণিপুরে কালচারাল ভবন কেন পাঁচ বছর ধরে পড়ে আছে এবং ইন্দাস, ওন্দা, বিষ্ণুপুরে আইটিআই কলেজের কাজে কেন বিলম্ব হচ্ছে সেই নিয়েও খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে ৩৮০ কোটি টাকার ৭৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ২২৫ কোটি টাকার ১০৬টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তিনি।