বাংলার খবর
সম্প্রীতির বার্তা দিতেই ধূপগুড়িতে সব ধর্মের মহিলারা মিলেই দুর্গাপুজো করেন
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজঃ দুর্গাপুজোতে সামিল মুসলিম মহিলারাও! পুরুষদের থেকে কোনও অংশে যে পিছিয়ে নেই, মহিলারা তা আগেই প্রমান করেছেন। তবে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জাতি বিদ্বেষ ,হিংসা দূরে সরিয়ে একসাথে পুজোর আয়োজন করে উদাহরণ তৈরি করলেন মুসলিম ও হিন্দু মহিলারা। পাড়ার হিন্দু, মুসলমান, হরিজন- সবাই মিলে জোট বেঁধেছেন। ধূপগুড়ি পৌরসভার অন্তর্গত ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাজার শরিফ পাড়ায় হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দুর্গাপুজা। পূজামন্ডপ তৈরি করা হচ্ছে হজরত মজনু সাহের দরগার পাশেই।
এবার নিয়ে পাঁচ বছর ধরে মুসলমান মহিলারা জলপাইগুড়ি জেলায় পুজোতে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহন করেছেন। ধূপগুড়ি ৩ নং ওয়ার্ডের দরবেশ পাড়ার ৬০ জন মহিলাই মূলত এই পুজার উদ্যোক্তা। পপিয়া, ফিরোজা, রোজি, রেশমা, ডলি’দের এখন ব্যাস্ততা তুঙ্গে। কয়েকজন ছুটছেন চাঁদা তুলতে, কেউ ঢাক বায়না করতে, কেউ বা প্রতিমার বায়না করতে, কেউ বা মন্ডপ তৈরির জন্য ডেকরেটার্স মালিকের বাড়ি। ধূপগুড়ির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দরবেশ পাড়ার সব ধর্ম-বর্নের মহিলারা দু’দিন আগে বসেই সিদ্ধান্ত নেন পাড়ার পুরুষরা নয়, পুজো করবে সম্প্রীতি মহিলা দুর্গা পুজা কমিটি। সভানেত্রী, সম্পাদিকা, কোষাধ্যক্ষ মনোনিত করে ছাপানো হয়ে গিয়েছে চাঁদা আদায়ের রসিদও। করোনা অনেকটাই এবার পুজোতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে।
গত বছরও সরকারিভাবে অনুমতি মিললেও, মিলেনি মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া আর্থিক সাহায্য। তাই কিছুটা হলেও আক্ষেপ মুসলিম এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলাদের উদ্যোগে আয়োজিত এই সার্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির সদস্যদের গলায়। এলাকার পুরুষদের কথা, ভালো উদ্যোগ নিয়েছে মহিলারা। দরকারে তাঁরা পাশে দাঁড়াবেন। যখন দেশের বিভিন্ন যায়গায় জাতীগত দাঙ্গা বাধছে এবং মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরির জন্য অশুভ শক্তি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেই সময় মুসলিম মহিলাদের হিন্দুদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুর্গা পুজোয় অংশ গ্রহন করাটা আলাদা মাত্রা যোগ করেছে । সমাজকে আরেকবার সম্প্রীতির বার্তা দিতে এই মহিলারা উদাহরণ হয়ে থাকবে বলেই মত এলাকাবাসীদের। এখানে নেই কোনও জাতিগত ভেদাভেদ। হিন্দু, মুসলিম, হরিজন সম্প্রদায়ের মহিলারাও এই পুজোতে সমান মর্যাদা পান।
সমান ভাবে তাঁরা কাজ করেন। পুজা কমিটির সম্পাদিকা পপিয়া দে বলেছেন, ‘ মুসলমান, হিন্দু, হরিজন- পাড়ায় সবাই আমরা একসাথে থাকি। ধর্ম, ভেদাভেদ ভুলে সবাই বসে দুর্গা পুজা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। প্রতিবছর আমরা এই পুজো আয়োজন করে থাকি। ঈদে যেমন আমরা মুসলিম বাড়িতে গিয়ে সেমাই খেয়ে মুখ মিষ্টি করি, তেমনই পাড়ার মুসলিম মহিলারাও দুর্গা পুজোতে আমাদের সঙ্গে সব কিছুতে থাকেন। আমরা সব ধর্মের মানুষ যে এক সুত্রে গাথা- এই পুজো থেকে আমরা এই বার্তাই দিতে চাই।’ পুজো কমিটির সদস্যা ফিরোজা খান, রেশমা খাতুন , রেশমি বেগম বলেছেন, ‘এক পাড়ায় আমরা সব এক আত্মা। ধর্মের দোহাই দিয়ে পুজার সময় আলাদা থাকব কেন? তাই জোট বেঁধে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সকাল থেকেই আমরাও তাদের সাথে সমান ভাবে পুজোর কাজ করে চলছি । হিন্দু–মুসলিম কোনও ভেদাভেদ নেই আমাদের।’ পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ ডলি দে বলছিলেন, ‘আমরা ছয় বছর ধরে এই পুজা করছি, করোনার কারণে আগের মতো বড় করে করার উপায় নেই, তাই বাজেটেও কম। মূলত সম্প্রীতির বার্তা দিতেই আমাদের পুজোর আয়োজন। পাড়ার মানুষের কাছে যে যা চাঁদা দিচ্ছে তা দিয়েই পূজো করা হবে।’