বাংলার খবর
৮ রাজ্যের দায়িত্ব দিয়ে দিলীপকে সুকৌশলে বাংলা থেকে সরাল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব!
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ার পর থেকেই রক্তক্ষরণ অব্যাহত রয়েছে বঙ্গ বিজেপি তে। রাজ্য নেতৃত্বের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে একে একে দল ছেড়েছেন একাধিক বিধায়ক, সাংসদ। প্রতিদিনই পদ্ম শিবির ছেড়ে তৃণমূলে ফেরার চিত্র দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। একে একে হাতছাড়া হচ্ছে পঞ্চায়েত, জেলাপরিষদ। শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুক নন্দীগ্রাম এবং ময়নাগুড়িতেও শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে গণ ইস্তফার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয় নেতা কর্মীরা। এর মধ্যেই গত রবিবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং। তিনিও বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।
এরমধ্যেই দিলীপ ঘোষের দায়িত্ব বাড়ল। আট রাজ্যের সাংগঠনিক দায়িত্ব পেলেন দিলীপ। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য করে দেশের সব রাজ্যেই বুথ সশক্তিকরণ অভিযান শুরু করেছে বিজেপি। সেই কর্মসূচিতেই বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, আন্দামান, মণিপুর, মেঘালয়, অসম, ত্রিপুরার সংগঠন বৃদ্ধির দায়িত্ব দিলীপকে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলার সঙ্গে দিলীপের দূরত্ব আরও বাড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আর এখানেই তৈরি হয়েছে নতুন এক জল্পনা। দেশের আট রাজ্যের সাংগঠনিক দায়িত্ব পাওয়াটা কি দিলীপের রাজনৈতিক কেরিয়ার উত্থান নাকি বঙ্গ বিজেপির হাল ফেরাতে বাংলা থেকে আরও দূরে সরানোর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কৌশল! ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে আশানুরূপ ফল হয়নি। এরপরই গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাঁকে রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করে দেওয়া হয়। তবুও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তাঁকে নির্দিষ্ট কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক খুব একটা সরল নয়। রাজ্য সভাপতি হওয়ার সময় সুকান্তর অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। শুভেন্দুকে নিয়েও করেছেন তির্যক মন্তব্য। যা মোটেও ভালো চোখে দেখেনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর নামে একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েছে। বিজেপি সূত্রে খবর, জেপি নাড্ডা, অমিত শাহদের মতো শীর্ষ নেতারা তাঁকে নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না। গতমাসে রাজ্য সফরে এসে রাজ্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন অমিত শাহ। সেই বৈঠকেও ব্রাত্য ছিলেন দিলীপ। তাই রাজনৈতিক মহলের ধারণা দিলীপ ঘোষকে সুকৌশলে বাংলা থেকে সরিয়ে দিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
তবে এই নিয়ে বিজেপির অন্দরে ভিন্নমত রয়েছে। একাংশের দাবি, দিলীপ ঘোষ যেহেতু সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি সেই কারণেই তাঁকে জাতীয় পর্যায়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আবার অনেকে বলছেন, বিজেপিতে সাধারণভাবে কোনও সর্বভারতীয় নেতাকে তাঁর নিজের রাজ্যে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয় না। দিলীপ অনুগামীদের দাবি, মুকুল রায়ও সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি থাকাকালীন কোনও দায়িত্ব পাননি। অনেকেই আবার দাবি করছেন, যতই অন্য রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হোক, বাংলায় সংগঠন মজবুত করতে ‘অভিজ্ঞ’ দিলীপ ঘোষকে পরে নিশ্চয়ই ব্যবহার করবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আবার, রাজ্য বিজেপির একাংশ দিলীপ ঘোষকে আট রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে কটাক্ষ করতেও ছাড়েনি। তাঁদের বক্তব্য, অন্যান্য রাজ্যের দায়িত্ব সামলানোয় আর বাংলার সংগঠনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করতে পারবেন না দিলীপ ঘোষ।