বাংলার খবর
‘রাখে হরি মারে কে’, রেলকর্মীর তৎপরতায় প্রাণে বাঁচলেন প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: বৃহস্পতিবার সকালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বালিচক রেল স্টেশনে এক রেল কর্মীর তৎপরতায় কার্যত মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচলেন এক এক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক!
কথায় আছে রাখে হরি তো মারে কে ? তেমনই এক ঘটনার সাক্ষী রইল বালিচক রেল স্টেশন। সেকেন্ডের মুহূর্তেই ঘটে যেতে পারত এক বড়সড়ো দুর্ঘটনা। সেখানে এক সেকেন্ড দেরি না করেই ছুটে আসা ট্রেনের সামনে নিজের জীবনকে বাজি রেখে লাইনে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্তব্যরত এক রেলকর্মী ছোঁ মেরে লাইন থেকে সরিয়ে দিলেন অসহায় ওই ভিক্ষুককে।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার একেবারে সকালে ২ নং প্লাটফর্মে থ্রু ট্রেন আসার ঘোষণা হয়। সে সময় যথেষ্ট নিরাপত্তা দূরত্বেই রয়েছিল অন্যান্য যাত্রীগণ।আর সেই ২ নং প্লাটফর্ম ধরেই দুরন্ত গতি নিয়ে ছুটে আসছে মালগাড়ি।
সেই মালগাড়িকে সিগন্যাল দেখানোর জন্য ২ নং প্লাটফর্মে ডিউটিরত ছিলেন রেলকর্মী সতীশ কুমার। মাত্র কয়েক মিটার দূরেই দুরন্ত গতিতে ছুটে আসছে মালগাড়ি,নির্ধারিত প্ল্যাটফর্ম ছুঁয়েই গন্তব্যে ছুটে যাবে রেলগাড়িটি। ঠিক সেই সময়ই সতীশের নজরে পড়ে ২ নং প্লাটফর্মের ছুটে আসা সেই ট্রেনের মুখে পড়ে প্রাণপণে লাইন থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অসহায় এক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক। না! আর এক সেকেন্ড সময়ও দেরি করেনি সতীশ, হাতের পতাকা ছুড়ে ফেলে ছুটে আসা ট্রেনের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে একেবারে ছো মেরে লাইন থেকে সরিয়ে দেয় ওই ভিক্ষুককে।
আর মুহূর্তেই হর্ন বাজিয়ে প্ল্যাটফর্ম দিয়ে পার হয়ে যায় মালগাড়ি!ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ৫ টা ২৯ মিনিট। এমন শিউরে ওঠার ঘটনার সাক্ষী থাকলো উপস্থিত যাত্রীগন।
ঘটনায় বালিচক রেলস্টেশন ম্যানেজার দশরথ বৈরাগী জানান, ‘সতীশ এর এমন সাহসিকতা দেখে আমার মুখে বলার কোনো ভাষা নেই!
আরও পড়ুন: ED-র তলবে ছেলেকে নিয়ে CGO কমপ্লেক্সে পৌঁছলেন রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়
কার্যত নিজের জীবন বিপন্ন করে একজন অসহায় মানুষকে মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচালেন তা সত্যিই অকল্পনীয়! একজন দায়িত্বশীল মানুষের মধ্যে একটা যে কর্তব্য থাকে তা আজ উপলব্ধি করলাম। বারবার সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সতীশের বীরত্ব দেখে শিউরে উঠছি আমরা। যেখানে আমরা এই ভয়ানক দৃশ্য দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে,সেখানে সতীশ নিজের দুর্ধর্ষ সাহসিকতার পরিচয় দিলেন এবং আমাদের রেলকর্মীর নাম উজ্জ্বল করলেন। যদিও কোনও পুরস্কারই তাঁর সাহসিকতার কাছে অতি নগন্য! তথাপি উচ্চপদস্থ আধিকারিক এর কাছে আমি আবেদন জানাবো সতীশকে যাতে উপযুক্ত মর্যাদায় পুরস্কার করা যায়।”
বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কিংকর অধিকারী এবং বিশ্বজিৎ ভূঁইয়া বলেন, ‘আজ বালিচক রেল স্টেশনে রেলকর্মী সতীশ কুমার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে একটি অসহায় মানুষের প্রাণ রক্ষা করল তা বর্তমান সমাজে অত্যন্ত বিরল একটি ঘটনা। তাঁর এই সাহসী এবং নিঃস্বার্থ ভূমিকায় আমরা গর্বিত। আমরা তাঁর এই ভূমিকার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। যদিও তাঁর এই কাজের জন্য কোন অভিনন্দনই যথেষ্ট নয়।’
আরও পড়ুন: কয়লাকাণ্ডে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরার নির্দেশ অভিষেক-পত্নী রুজিরাকে
এমন অভূতপূর্ব ঘটনা জানাজানি হতেই রেলকর্মী সতীশ কুমার কে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ডেবরা সহ গোটা পশ্চিম মেদিনীপুরবাসী। দৈনন্দিন যেখানে সরকারি কর্মীদের কাজের অনীহা, দুর্ব্যবহারের ঘটনা রোজ খবরের পাতা জুড়ে মুখরচিত হয়, সেখানে নিজের জীবন বিপন্ন করে স্বয়ং ভগবান এর অবতারে সতীশ কুমার যে একটি অসহায় প্রাণ বাঁচলেন তা আজ ইতিহাস হয়ে রইলো!