বাংলার খবর
যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেন, দেশে ফিরেও আতঙ্ক কাটছে না সৌরভদের
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: টানা ১২ দিন ধরে অব্যাহত ইউক্রেনের উপর রুশ আগ্রাসন। রাশিয়ার পরপর মিসাইল হামলা আর গোলাগুলি বর্ষণে বিপর্যস্ত ইউক্রেনবাসীর স্বাভিক জীবন। শুধু ইউক্রেনবাসীই নয়, দুই দেশের এই মহাযুদ্ধের মাঝে বেজায় বিপাকে পড়েছে সেদেশে থাকা ভারতীয় পড়ুয়ারা। যদিও ভারত সরকারের তরফে ইতিমধ্যে বহু পড়ুয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বায়ু সেনার বিশেষ বিমানে। বাকিদেরও দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে টান টান উত্তেজনা আর উৎকণ্ঠা কাটিয়ে অবশেষে ইউক্রেন থেকে ঘরে ফিরলেন উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের ব্লকের হরিহরপুরের বাসিন্দা সৌরভ বাগচী। রবিবার বিকেলে দিল্লি থেকে সৌরভদের বিমান এসে নামে বাগডোগরা বিমান বন্দরে। সেখান থেকে রাত ১০ টা নাগাদ কালিয়াগঞ্জের হরিহরপুরের বাড়িতে এসে পৌঁছায় সৌরভ। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে ঘরের ছেলে ঘরে ফেরায় আপ্লুত তাঁর বাবা মা। এদিন ছেলে বাড়ি ফিরতেই তাঁকে জড়িয়ে ধরে আবেগের কান্নায় ভাসলেন তাঁরা।
অন্যদিকে, বিদেশ বিভূঁই থেকে সৌরভ বাড়ি ফিরে আসায় পাড়া প্রতিবেশী থেকে স্থানীয় কাউন্সিলর সকলেই ফুলের মালা আর পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করে নেন তাঁকে। মা সীমা দাস বাগচী বাবা নিতীশ বাগচী দই মিষ্টি খাইয়ে যেমনভাবে বরণ করে সেভাবেই আনন্দাশ্রু নিয়ে বরন করে ঘরে তুলল ছেলেকে। ছেলে সৌরভ কে ইউক্রেন থেকে ফিরে পেয়ে খুশীর হাওয়া কালিয়াগঞ্জের হরিহরপুর এলাকায়।
আরও পড়ুন: লকডাউনে ছেলেকে আনতে ১৪০০ কিমি পথ পাড়ি, ইউক্রেন থেকে সন্তানের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় রাজিয়া
জানা গিয়েছে, বাবা নিশীথ বাগচী ছোট্ট একটি হোটেল চালিয়ে কোনও রকমে দিন গুজরান করেন। ছেলের চোখে ছিল ডাক্তারী পড়ার স্বপ্ন। ছেলে সৌরভের সেই স্বপ্নকে সফল করতে ইউক্রনের খারকিভে ২০১৯ সালে সৌরভকে ডাক্তারি পড়তে পাঠিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হতেই সবকিছু যেন মুহুর্তের মধ্যে ওলট পালট হয়ে যায়। এরপর সৌরভ সহ তাঁর বেশ কয়েকজন বন্ধু প্রায় সাত দিন মাটির নিচে বাঙ্কারে আশ্রয় নেয়।
এরপর তাঁরা ভারতীয় বন্ধুরা মিলে নিজেদের উদ্যোগে প্রাণ হাতে করে খারকিভ থেকে রওনা দেন। মাঝখানের কয়েকটা দিন, রীতিমতো আতঙ্ককে সঙ্গী করে কেটেছে। কখনও বিমান বাতিল হয়েছে। কখনও টানা বাঙ্কারে দিন কাটাতে হয়েছে। যেখানে থেকেছেন তাঁর কাছেই বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। কোনও রকমে বাসে করে ও ১৫ কিলোমিটার হেঁটে ইউক্রেন সীমান্তে পৌঁছোন তাঁরা। এমনকি ট্রেনেও জায়গা পাননি তাঁরা। এরপর পোল্যান্ডে পৌঁছে সেখান থেকে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের সাহায্যে দিল্লির বিমান ধরার সুযোগ পান সৌরভরা। রবিবার বাড়িতে পৌঁছতেই সৌরভের সঙ্গে দেখা করেন পাড়া প্রতিবেশী থেকে আত্মীয়স্বজনেরা।
আরও পড়ুন: Viral Video: বিমানের মধ্যেই শিশুকে ঘুম পারাচ্ছেন বিমানসেবিকা, তারপর যা হল
সৌরভকে স্বাগত জানিয়ে মিষ্টি খাইয়ে দেন তাঁর প্রিয়জনেরা। ইতিমধ্যে প্রচুর মানুষ গ্রামের এই মেধাবী ছাত্রকে বরণ করে নিতে তার বাড়ির সামনে ভিড় জমায়। দেশে ফিরতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে সৌরভ। তাঁর আরও ডাক্তারি পড়ুয়া বন্ধুরা এখনও আটকে রয়েছেন ইউক্রেনে। তাঁদের যাতে দ্রুত দেশে ফেরত আনা যায় তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানান সৌরভ।