রাজনীতি
বন্যা পরিদর্শনে গিয়ে ডিভিসির থেকে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর, সাংসদকে ঘিরে বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : আগেই ‘ম্যানমেড’ বন্যা বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। আজ হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, বর্ধমান, মেদিনীপুরের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে আরামবাগ থেকে আবারও কেন্দ্রীয় সরকার এবং ডিভিসিকে তীব্র আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উন্নয়ন করলেও রাজ্যের সব টাকা জলে চলে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, ডিভিসির থেকে ক্ষতিপূরণ চাওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে বাংলায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য ঝাড়খণ্ডের বৃষ্টিকেও দায়ী করেছেন। আজ বেলা ১২টা নাগাদ হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টারে হুগলির আরামবাগের উদ্দেশে রওনা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পৌঁছন সাড়ে ১২টা নাগাদ। সেখান থেকে সড়কপথে তিনি পৌঁছন কালীপুর এলাকায়। তারপরই বানভাসি এলাকায় গিয়ে ডিভিসি কত জল ছেড়েছে তার খতিয়ান তুলে ধরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেছেন, ‘গতবারের বন্যায় ১.১২ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছিল ডিভিসি। আর এবার কয়েকদিনের মধ্যে সাড়ে ৫ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। একে তো বৃষ্টি, তার উপর জল ছেড়েছে। জলের উপর জল। রাজ্যকে কিছু জানায়নি। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে পরপর লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। আর তাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, হাওড়ার বিস্তীর্ণ অংশ। ৩০ তারিখে প্রথমে ৪৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ১ ঘণ্টার মধ্যে আবার ১ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। মধ্যরাতেও জল ছাড়া হয়েছে।
১ অক্টোবর প্রথমে ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক ও পরে ১ লক্ষ ২৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। হঠাৎ না বলে ১২টার সময় জল ছাড়া হয়েছে। তার জেরে পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলি, হাওড়া এবং বীরভূম এই আট জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ডিভিসি-র জলে প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। সবটাই রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে হয়েছে। ডিভিসি এখনও ২ লক্ষ কিউসেক জল ধরে রাখতে পারে, যদি গভীরতা বাড়ায়। আমাদের বন্ধু রাজ্য ঝাড়খন্ডকেও অনুরোধ করব তাদের বাঁধ গুলো যেনো সংস্কার করে। না হলে এমন দিন আসবে যখন ডিভিসির কাছে ক্ষতিপূরন চাইতে হতে পারে। বছরে যদি চারবার করে জল আসে তাহলে কী হবে। সব টাকা জলেই চলে যাচ্ছে। মানুষ কী করবে! ঘর সারাচ্ছে, আবার ভাঙছে। চাষের জমিগুলো চাষ করছে আর জলে ডুবে যাচ্ছে। কী করবে তারা। আমি ঝাড়খন্ড সরকারকে বলব আমাদের সঙ্গে বসে একটা পরিকল্পনা করতে। আর কেন্দ্রের সরকার মাস্টার প্ল্যান করুক, আর টাকা দিক। রাজ্যের টাকা খরচ হবে কেন। সুতরাং ক্ষোভ কিন্তু বাড়ছে। আমি চাইনা ক্ষোভ বিক্ষোভ বারুক। সব রাজ্য মিলেমিশে থাকতে চাই। আমি বলব ঝাড়খন্ডকে কেন্দ্রের সাথে কথা বলতে।
প্রয়োজনে ডিভিসির সাথে কথা বলতে। আমরাও কথা বলব। তোমার যখন জল কম থাকবে তখন অল্প করে জল ছাড়ো। তা না করে একবারে অনেক জল ছেরে দিলে আর সমাধি করে দিলে। রাত তিনটের সময় সবাই ঘুমোবে না জল আসছে, জলে ভেসে যাবে দেখবে। এটা খুব বড় ক্রাইম। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখব। ফিরে গিয়ে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে মিটিং করব। পুজো আসছে, সবাই ব্যাস্ত থাকবে।উৎসব থাকবে, তবে অগ্রাধিকার বন্যাকে দেওয়া হবে।’ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লক্ষ বাড়ি। ৪ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নবান্ন থেকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চলছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ আরামবাগের পল্লীশ্রী হেলিপ্যাডে নেমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাশেই হোরপুরে গিয়ে বন্যা পরিদর্শন করেন।
জেলা প্রশাসনের আধিকারীকদের সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক অসীমা পাত্র, আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার। মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার পরই ক্ষোভে ফেটে পরেন গ্রামবাসীরা।তাঁদের দাবী, তাঁদের বলা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন। কী সমস্যা, কী অসুবিধা তা শুনবেন। যারা কথা বলবেন, তাঁদের তালিকাও তৈরী করা হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার নামার আগেই তাঁদের আটকে দেওয়া হয়।মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছতে দেওয়া হয়নি। গ্রামবাসীরা তাঁদের দুর্দশার কথা বলার সুযোগ না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পরেন। আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নেমে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন তিনি। সাংসদের যুক্তি, ‘একদিনে সব হবে না। আমরা তো আর ঈশ্বর, আল্লা নই। আমরাও মানুষ। সব আস্তে আস্তে করব। ডিভিসি যেভাবে জল ছেড়েছে, এর বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব, এফআইআর করব।’