দেশের খবর
ত্রিপুরায় গণতন্ত্র না ফেরা পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকবে তৃণমূল, হুঁশিয়ারি অভিষেকের

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ত্রিপুরায় আবারও তৃণমূলকে জেতানোর আহ্বান জানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার আগরতলায় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জানিয়ে দিলেন, কেন বিজেপিকে সরিয়ে তৃণমূলকেই বেছে নেওয়া উচিত ত্রিপুরাবাসীর। সিপিআইএমের ২৫ বছরের সন্ত্রাসকেও ৫ বছরের বিজেপি সরকার ছাপিয়ে গিয়েছে বলেও এদিন দাবি করেছেন অভিষেক। ত্রিপুরায় যতদিন না গণতন্ত্র ফিরছে ততদিন তৃণমূল মাটি কামড়ে পড়ে থাকবে। ত্রিপুরাবাসীর অধিকার পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য তৃণমূল শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত লড়াই করবে ও মাথা নিচু করে মানুষের সেবা করবে বলেই এদিন জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। সেই সঙ্গে বাম-কংগ্রেসকে ভোট না দিয়ে সমস্ত বিজেপি বিরোধী ভোট তৃণমূলকে দেওয়ারও অনুরোধ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগামী ২৩ তারিখ ত্রিপুরার চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। তার আগে সোমবার শেষ প্রচারে অংশ নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন। সেইসঙ্গে অভিষেকের ঘোষণা, পরিবর্তনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ত্রিপুরা। কেন বিজেপিকে সরিয়ে ত্রিপুরায় তৃণমূলের আসা দরকার, তা এদিন তুলে ধরেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। অভিষেক বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে ভুয়ো ও মিথ্যা মামলা দিয়ে তৃণমূল কর্মীদের জেলে ঢোকানো হচ্ছে। ভোটের আগে বিজেপি অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু কোনও প্রতিশ্রুতি রাখেনি বিজেপি। বেকারত্ব, সন্ত্রাসে এক নম্বরে রয়েছে ত্রিপুরা। বলেছিল মিসড কলে চাকরি হবে। কিন্তু হয়নি। ত্রিপুরায় এখন বেকারত্বের হার ১৮ শতাংশ। বাংলায় মাত্র ৪ শতাংশ। তৃণমূলকে আটকাতে ত্রিপুরায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। ত্রিপুরার কোনও পরিবার তৃণমূলের নাম লেখালে ওই পরিবারের ৫-৭ বছরের শিশুকেও রক্ষা দেয়নি গেরুয়া শিবির। ত্রিপুরায় বিজেপির সঙ্গে গুন্ডারা রয়েছে। ২৫ বছরের সিপিআইএম-এর সন্ত্রাসকেও হার মানিয়েছে পাঁচ বছরের এই বিজেপি সরকার। তৃণমূলের সঙ্গে মানুষ আছে। এই পরিবেশ থাকলে ত্রিপুরায় কোনও দিন বিনিয়োগ ও শিল্প আসবে না। ২৪৫ কোটি টাকা দিয়ে আগরতলাকে স্মার্ট সিটি বানিয়ে এই হাল। বৃষ্টি হলে আগরতলা জলে ডুবে যাচ্ছে। বহু শিক্ষকের চাকরি ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে। ত্রিপুরার অবস্থা এমন শোচনীয় যে রাস্তা দিয়ে অন্তঃসত্ত্বাকে নিয়ে যাওয়া যায় না। নিয়ে যেতে হয় কাঁধে করে।’
এরপরই ত্রিপুরায় তৃণমূলকে জেতানোর আর্জি জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘ত্রিপুরায় ডবল ইঞ্জিন সরকার ডাহা ফেল, বাংলায় সিঙ্গল ইঞ্জিন সরকার দেখে যান। তৃণমূল প্রথম দিন থেকেই জনতার পাশে ছিল, পাশেই থাকবে। মানুষ যাতে ভোট দিতে না বের হয়ে, তার জন্য বিজেপির বাইক বাহিনীকে ব্যবহার করছে। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ান। ঐক্যবদ্ধ হয়েই লড়াই করতে হবে। রুখে না দাঁড়ালে, অবস্থা আরও খারাপ হবে। ত্রিপুরা থেকে বিজেপিকে উৎখাত করতেই হবে। ত্রিপুরায় গণতন্ত্র না ফেরা পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকবে তৃণমূল। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত আমরা লড়াই করব। এই লড়াই ত্রিপুরার জনগণ বনাম বিজেপির।’
এরপরই বিজেপি বিরোধী ভোট যাতে তৃণমূলে আসে, ভাগ না হয়ে যায়, তার জন্য ত্রিপুরাবাসীর কাছে আবেদন করেন অভিষেক। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘ত্রিপুরায় রাজনৈতিক পরিবর্তন না হলে মানুষেরই বিপদ, বিজেপিকে উৎখাত করতেই হবে। প্রকৃত পরিবর্তনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ত্রিপুরা। ত্রিপুরাবাসীর অধিকার পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য তৃণমূল শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত লড়াই করবে। ভোটে জিতলে বিজেপির মতো উদ্ধত হয়ে নয় মাথা নিচু করে মানুষের সেবা করবে তৃণমূল। বিজেপি শাসিত কেন্দ্রের হাতে এত এজেন্সি তবুও তৃণমূলকে ভয় পায় গেরুয়া শিবির। কারণ মানুষের হৃদয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল কারও চোখ রাঙানির কাছে মাথা নোয়ায় না। তৃণমূল মেরুদণ্ড বিক্রি করে না কখনও। তমসাচ্ছন্ন ত্রিপুরায় সোনালি দিন আনতে বদ্ধপরিকর তৃণমূল। বিজেপি বিরোধী ভোট ঐক্যবদ্ধ করে ফেলতে হবে তৃণমূলের প্রতীকে। কংগ্রেস ও সিপিএম ভোট পেলে সেই ভোট নষ্ট হবে এবং তাতে বিজেপির লাভ হবে। তাই বিজেপি বিরোধী সব ভোট যেন তৃণমূলে আসে। মাথা উঁচু করে তৃণমূলকে ভোট দিন।’