বাংলার খবর
আজ আকাশ পথে জেলার বন্যা পরিদর্শনে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী, না জানিয়ে জল ছাড়ার অভিযোগ অস্বীকার ডিভিসির

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ : আজ জেলার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার থেকে ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফলে শুক্রবার সকাল ১০.৩৫ নাগাদ ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে ডিভিসি। বৃহস্পতিবার রাত ৮.২১মিনিটে ১ লক্ষ ২৫ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩.১১ মিনিটে ১ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২.৪৯ নাগাদ ৪৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। গত ২৮ তারিখ সন্ধ্যে সাতটা বেজে ৩১ মিনিটে ৩২ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে ডিভিসি।
ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা বন্যায় ভেসে গিয়েছে। হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম ও বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় চলে গিয়েছে। আজ এই সমস্ত জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণেই আজ এই সমস্ত জেলার বন্যা পরিস্থিতি আকাশপথে ঘুরে দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসিকেই দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আবারও অভিযোগ করেছেন, ‘ঝাড়খণ্ড, বিহারেরর বোঝা বইতে হচ্ছে বাংলাকে। রাজ্যকে না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া হচ্ছে।’ ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, মাইথন থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে ১ লক্ষ ১৫ হাজার কিউসেক করা হয়েছে।
দিনে মোট দেড় লক্ষ কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত এই হারেই জল ছাড়ার পরিমাণ বজায় রেখেছে ডিভিসি। অন্যদিকে, পাঞ্চেত ড্যাম থেকে জল ছাড়া হচ্ছে ৩৫ হাজার কিউসেক। তবে ঝাড়খণ্ডে যদি ফের বৃষ্টি হয় তবে জল ছাড়ার পরিমাণ আরও বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়ে দিয়েছে ডিভিসি। জল ছাড়া নিয়ে আবারও রাজ্য ও ডিভিসির মধ্যে দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসিকে দায়ী করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘ঝাড়খণ্ডে যেহেতু অনেক বৃষ্টি হয়েছে ওরা আমাদের না বলে রাত ৩টের সময় আসানসোলে জল ছেড়ে দেয়। এদিকে আসানসোলের বৃষ্টির পরিমাণটাও প্রায় ৩৪৫ মিলিমিটার ছিল। আগে কখনও এত বৃষ্টি হয়নি।
ফলে আসানসোল পুরো ডুবে যায়। একই সঙ্গে বাঁকুড়া, পুরুলিয়াও। তার পর আবার ডিভিসি ১ লক্ষ কিউসেকের উপর জল ছেড়ে দিয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলে আমাদের ফেস করতে হচ্ছে, বিহারে বৃষ্টি হলে আমাদের ফেস করতে হচ্ছে। ওরা যদি ওদের ট্যাঙ্কগুলো, ড্যামগুলো একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখে, তা হলে কিন্তু অনেক জল জলাধারে ধরতে পারে। মাইথন, পাঞ্চেতে তো অনেক জল ধরার ক্ষমতা। কিন্তু ওরা দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে কোনও পরিষ্কার করে না। কোনও ড্রেজিং করে না। ফলে ওদের খেসারতটা আমাদের দিতে হচ্ছে। এটা খুব অন্যায়। আমি বার বার এর প্রতিবাদ করছি। যদি বৃষ্টির জলে আমাদের বন্যা হতো আমি বুঝতাম। বৃষ্টি বেশি হচ্ছে, আমি সামলাতাম।
কিন্তু বন্যাটা হচ্ছে জল ছাড়ার জন্য। ম্যানমেড ফ্লাড।’ যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। ডিভিসির চিফ ইঞ্জিনিয়র দেবাশিস দেব বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যে অভিযোগ করছেন তা ঠিক নয়। নিয়ম মেনেই জল ছাড়া হচ্ছে। এই জল ছাড়ার জন্য সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন, ডিভিসি ও রাজ্যের রেগুলেটরি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটিতে রাজ্য সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়র রয়েছেন। গোটা ব্যাপারটা জানিয়েই জল ছাড়া হয়। তাই এই অভিযোগ সঠিক নয়।’ তবে ডিভিসির যে নাব্যতা কমে গিয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন ডিভিসি কর্তা। তবে এই প্রথম নয়, গত মাসেও অতিরিক্ত জল ছাড়া নিয়ে ডিভিসিকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ডিভিসির জলাধার গুলোর জল ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে ড্রেজিং করার জন্য অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পুজোর আগে হঠাৎ করেই নতুন এই বন্যা পরিস্থিতি রাজ্যকে চরম সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।