Uncategorized
আজ বিশ্ব প্রেম দিবস- ভ্যালেন্টাইন্স ডে, এই ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র ইতিহাস জানা আছে?

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: প্রেমের মাস হল ফেব্রুয়ারি। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় প্রেমের সপ্তাহ – ভ্যালেন্টাইন্স উইক। আর এই সপ্তাহের সমাপ্তি হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালনের মাধ্যমে। এই দিনটি গোটা বিশ্বে প্রেমের দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
বলা যেতে পারে, এই বিশেষ দিনটির জন্য প্রেমিক-প্রেমিকারা অপেক্ষা করে থাকেন। যাঁদের সম্পর্ক শুরু হয়েছে তাঁরা আর যাঁরা সম্পর্ক শুরুর কথা ভাবছেন তাঁরাও। ভ্যালেন্টাইন্স ডে সারা বিশ্বে পালিত হয়। তবে একথাও ঠিক শুধু যে প্রেমিক, প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রী এই দিনটি পালন করতে পারেন তা কিন্তু নয়। এই দিনটি যে কোনও ভালোবাসার বা প্রিয় ব্যক্তির সঙ্গেই পালন করা যেতে পারে। সে মা-বাবা হোক কিংবা সন্তান বা ভাই-বোন, বন্ধু, যে কেউই হতে পারেন আপনার ভ্যালেনটাইন। যে বা যাঁরা আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, তিনি বা তাঁরাই হতে পারেন আপনার ভ্যালেনটাইন। সারা বিশ্বে এই দিনটিকে নিয়ে এতো উদ্দীপনা, কিন্তু এই বিশেষ দিনটির নামকরণ কিভাবে হলো? এই দিনটির ইতিহাস কী! কেন যুব সমাজের কাছে এই দিনটি এতো মূল্যবান, এসব কিছুই জানবো আজ।
নামকরণ:
ভ্যালেন্টাইন্স ডে – এই নামটি এসেছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে। পোপ গেলাসিয়াস পঞ্চম শতাব্দীর শেষ দিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসাবে ঘোষণা করেন।
ইতিহাস:
ইতিহাস সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে আমরা জানতে পারি যে, তৃতীয় শতাব্দীর সময়কালীন রোমের বাসিন্দা সেন্ট ভ্যালেনটাইন যিনি একজন পুরোহিত ও চিকিৎসক ছিলেন, তাঁর আত্মত্যাগের কথা স্মরণে রেখেই এই দিনটি উদযাপন করা হয়েছিল। তিনি যেমন ধর্ম প্রচারক ছিলেন, তেমনই রোমান সৈন্যদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধও করেছিলেন।এই দিনটির নাম কেন তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে, সেই বিষয়ে দু’টি কাহিনী শোনা যায়। সেগুলি যথাক্রমে- ১) রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস বিশ্বাস করতেন বিবাহিত সৈন্যদের থেকে অবিবাহিত সৈন্য অনেক বেশি দক্ষ হয়। তাই তিনি সৈন্যদের বিয়ে করতে নিষেধ করে দেন। শুধু তাই নয়, তিনি এমন একটি আইন তৈরি করেন যেখানে বলা হয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করা যুবকেরা বিয়ে করতে পারবে না। এই আইনের কথা সেন্ট ভ্যালেনটাইন জানতে পেরে তিনি এই আইনের বিরোধিতা করেন।
কারণ এই আইনটি যে অযৌক্তিক সেটা তিনি বুঝেছিলেন। তাই তিনি যে সকল সৈন্যরা বিয়ে করতে চাইতো, তাদের তিনি গোপনে সাহায্য করতেন। তাদের গোপনে বিবাহের ব্যবস্থা করতেন। এর পাশাপাশি তিনি অন্যান্য ব্যক্তিদের মধ্যেও প্রেম জাগিয়ে তোলার জন্য প্রচার শুরু করেন। এ কথা দ্বিতীয় ক্লডিয়াস জানতে পেরে তাঁর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন। মানুষের মধ্যে প্রেম জাগরণের কারণে যে ব্যক্তি মৃত্যু মাথা পেতে নিয়েছিলেন সেই ব্যক্তির উদ্দেশ্যে একটি দিন উদযাপনের কথা ভাবা হয়। ২) আর একটি কাহিনী প্রচলিত আছে, সেটি হলো- যখন ধর্ম প্রচারের কারণে ধর্ম প্রচার মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাবাসে দিন কাটাচ্ছিলেন সেন্ট ভ্যালেনটাইন, তখন একজন কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েকে তাঁর চিকিৎসার গুনে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মেয়েটির পরিবারসহ আরও অনেকেই খৃষ্টধর্ম নেয় এবং মেয়েটির সঙ্গে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তবে এই কথা রাজার কানে যাওয়া মাত্রই ধর্ম প্রচারের অপরাধেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড দেন। এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে সেন্ট ভ্যালেনটাইন সেই মেয়েটির উদ্দেশ্যে একটি পত্র লেখেন। যাতে লেখা ছিল- ‘লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন।’ সেন্ট ভ্যালেনটাইন এমন একটি মানুষ ছিলেন, যিনি ভালোবাসা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেই কারণে নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও ভয় পাননি। শাসকের বিরুদ্ধে যাওয়া মানেই মৃত্যু, তা জানা সত্ত্বেও তিনি নিজের কাজ করে গিয়েছিলেন। বিশ্বের সবথেকে শুদ্ধ আর খাঁটি জিনিস হল প্রেম। তিনি সেই প্রেম বিতরণ করতে শিখিয়েছিলেন তৎকালীন মানুষকে।
ভালোবাসার প্রতীক এই মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পোপ গেলাসিয়াস প্রথম এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। পঞ্চদশ শতাব্দীতে প্রেম নিবেদনের জন্য ‘ভালোবাসা’ শব্দটি প্রেমের কবিতা এবং গল্পগুলিতে ব্যবহার করা হতো। ভ্যালেনটাইন নামসহ বেশ কয়েকটি বই, গল্প এবং কবিতা হিসাবে আঠারো শতকে প্রকাশ পায়। যা যুব সমাজের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে লেখাগুলি গ্রিটিংস কার্ডের মাধ্যমে প্রচারিত হয়। আজ সেই ভ্যালেন্টাইন্স ডে। সেন্ট ভ্যালেনটাইন ভালোবাসার বিস্তার করতে চেয়েছিলেন। তিনি তাঁর আত্মত্যাগের মাধ্যমে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। সারা বিশ্বে আজকের দিনটি তাঁর কথা স্মরণ করেই পালিত হয়। কিন্তু শুধু আজকে বা একদিনের জন্য ভালোবাসা নয়, সারাজীবন যেন এই একইভাবে প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা অটুট থাকে। আর সেখানেই সার্থক হবে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মহান আত্মত্যাগ।