আন্তর্জাতিক
দেশকে বাঁচাতে বিয়ে সেরেই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ছুটলেন ইউক্রেনীয় যুগল!

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: রাশিয়ার আগ্রাসনে বিধ্বস্ত গোটা দেশ। মুহুর্মুহু রকেট লঞ্চার, বোমার বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে ইউক্রেন। গুলির শব্দ, আকাশে ঘুরপাক খাওয়া যুদ্ধ বিমানের আওয়াজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে ওঠা কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে গোটা কিভের আকাশ।
থেকে থেকেই বেজে উঠছে সাইরেন। গোটা ইউক্রেন জুড়েই আতঙ্ক। সেই যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন নজির ও ইতিহাস। ভালোবাসার থেকে যে যুদ্ধ, নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা কখনও বড় হতে পারে না, তা আরও একবার প্রমান করল ইউক্রেনের এক প্রেমিক যুগল। এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাঝেই বিয়ে সেরে ফেললেন ২১ বছরের ইয়ারিনা আরিভা এবং পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ২৪ বছরের সভিয়াতোস্লাভ ফুরসিন। কিন্তু সেটা বর খবর নয়। রুশ আগ্রাসনের হাত থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে বিয়ে সেরেই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়েছেন তাঁরা। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী মে মাসের পরেই তাঁদের বিয়ে করার কথা ছিল। কিন্তু দেশের বর্তমান যা পরিস্থিতি তাতে, তাঁদের প্রেম পূর্ণতা পাবে কিনা বা তাঁরা আদৌ বেঁচে থাকবেন কিনা, সেই কথা ভেবেই বিয়ে এগিয়ে এনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের স্বার্থে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
যেদিন রাশিয়া প্রথম ইউক্রেনে আক্রমণ করল সেই দিনই এই তরুণ-তরুণী যুদ্ধে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে ছিলেন। তাই কিভের সেন্ট মিশেল মনাস্টেরিতে দ্রুত বিয়ে সেরে স্থানীয় টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স সেন্টারে ছুটে যান আরিভা আর ফুরসিন। তারপরই তাঁরা হাতে তুলে নিয়েছেন মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য একে-৪৭ রাইফেল। দেশীয় রীতি মেনেই বিয়ে করেছেন আরিভা, ফুরসিন। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সুন্দর পোশাকে সেজে চার্চে বিয়ের আসরে হাজির হয়েছেন যুগল। তার পরের ছবিতেই ওই সদ্যবিবাহিত যুগলকে দেখা গিয়েছে একে-৪৭ বন্দুক হাতে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে। এই ছবিও টুইটারে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ইউক্রেনীয় যুগলের প্রেম, সাহস আর দেশের প্রতি আবেগকে কুর্নিশ জানিয়েছে গোটা বিশ্ব।
সেইসঙ্গে সকলে আশীর্বাদ করেছে যেন তাঁরা লক্ষ্য পূরণ করে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসতে পারেন। এবং তাঁরা তাঁদের ছেলে-মেয়েদের এই দিনটার গল্প শোনাতে পারেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, যাঁরা দেশের জন্য যুদ্ধ করতে প্রস্তুত তাঁরা যেন দেশে থেকে যান। এবং বাকিরা যেন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। দেশের ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের যুদ্ধে যোগ দিতেও অনুরোধ করেছেন তিনি। তবে অনেকেই পালিয়ে গেলেও দেশ বাঁচাতে লড়াইয়ের যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই দম্পতি। আরিভা বলেছেন, ‘পরিস্থিতি খুবই কঠিন। আমরা আমাদের মাতৃভূমির জন্য লড়াই করতে যাচ্ছি। হয়তো আমরা মারাও যেতে পারি। কিন্তু তার আগে আমরা এক হতে চেয়েছিলাম। হয়তো ওরা আমাদের হাতে শুধু অস্ত্র তুলে দেবে। আমরা যাব এবং লড়াই করব। হয়তো বা আমরা অন্য কোনও ভাবে সাহায্য করব। সেটা সেনা কর্তৃপক্ষ এবং সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’