ভাইরাল খবর
বিজেপির মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার, আগামীকাল পেট্রোল পাম্পে জনসচেতনতা মূলক প্রচার
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: গত কয়েকমাস ধরেই টানা পেট্রোল, ডিজেলের দাম বাড়ছিল। পেট্রোলের পাশাপাশি সেঞ্চুরি পার করে এগিয়ে যেতে থাকে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম। সারা দেশ জুড়ে মধ্যবিত্তদের কপালে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হতে থাকে। গাড়ির মালিকরা গাড়ি না চালানর সিদ্ধান্ত নেয়।
পাশাপাশি পেট্রোল, ডিজেল পাম্প মালিকরা পাম্প বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। একটানা দাম বাড়ার ফলে চারিদিক থেকে নিন্দার ঝড় বইতে থাকে। অবশেষে কালীপুজোর আগের দিন দেশবাসীকে দীপাবলির উপহার স্বরূপ পেট্রোলের দাম ৫ টাকা এবং ডিজেলের দাম ১০ টাকা কমায় কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পরেই দেশের ২৪ রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম অনেকটাই কমিয়েছে। ফলে সেই সব রাজ্যের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল দাম কমালেও এখনও ১২ রাজ্য পেট্রোল, ডিজেলের ওপর তাদের ভ্যাট কমায়নি। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গও রয়েছে।
পেট্রোল, ডিজেলের ওপর রাজ্য সরকার ভ্যাট না কমানোর প্রতিবাদে আজ পথে নেমেছিল রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপি। পেট্রোল, ডিজেলের ওপর রাজ্যের ভ্যাট কমানোর দাবিতে আজ মিছিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে বিজেপি। কিন্তু রাজ্য পুলিশ বিজেপিকে পিছিলের অনুমতি দেয়নি। তা সত্বেও পূর্ব নিরধানিত সুচি অনুযায়ী মুরলীধর সেন লেনের রাজ্য দফতর থেকে শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, রাহুল সিনহা, সমীক ভট্টাচার্যরা রাণী রাসমণি রোড পর্যন্ত মিছিল শুরু করলে পুলিশ ব্যারিকেড করে আটকে দেয়। ধস্তাধস্তি শুরু হয়। রীতেশ তেওয়ারি সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অবশেষে বেলা ৩টে ১৫ নাগাদ তাঁরা জানিয়ে দেন, আপাতত এখানেই এদিনের কর্মসূচি শেষ হল।
তবে আগামিদিনে এই আন্দোলন যে বৃহত্তর আকার নেবে সে কথাও জানিয়ে দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত রাজ্যের পেট্রোল পাম্প গুলিতে জনসচেতনতা মূলক প্রচার চালাবে বিজেপি। প্রয়োজনে নবান্ন অভিযানেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে পদ্ম শিবির। পেট্রোল, ডিজেলের ভ্যাট কমানোর পাশাপাশি বিদ্যুতের মাশুল কমানোর দাবিতেও এবার সরব হবে গেরুয়া শিবির। এদিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিধায়করা বিধানসভার বাইরেও পেট্রোল, ডিজেলের দাম কমানোর দাবিতে প্রতিবাদে সরব হন। পুলিশের বক্তব্য, এই মিছিলের জন্য বিজেপির কাছে কোনও অনুমতি নেই। দ্বিতীয়ত, কোভিডের কারণে এই জমায়েতে কোনও ভাবেই অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। পুলিশ মিছিল আটকে দেওয়ায়, রাজ্য দফতরের সামনেই বক্তব্য রাখেন শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, সুকান্ত মজুমদাররা। প্রত্যেকেই নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘তথাকথিত বাংলার মেয়ে এখনও ঘুমোচ্ছেন। তথাকথিত মানব দরদী একেবারে সাধারণ লোকের কষ্টে নাকি তাঁর চোখের জল, নাকের জল এক হয়ে যায়। তাঁর ঘুম ভাঙেনি। আমরা ২০০-৪০০ মিটার হাঁটতে চেয়েছিলাম। আমরা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙতে আসেনি।আমরা এখানে আইন শৃঙ্খলার অবনতি করতে আসিনি। অথচ অবস্থাটা দেখুন। চারদিক ঘিরে রেখেছে। শুধু গোটা কলকাতা পুলিশ নয়, রাজ্য পুলিশও নিয়ে চলে এসেছে। হাজার পুলিশ দিয়ে গোটা ২০০-৩০০ মিটার এলাকায় চক্রব্যূহ তৈরি করা হয়েছে। গাড়ির লাইন, লালবাজারে নিয়ে যাবে। লালবাজারে নিতে গেলে এই মুহূর্তে ২০০টা বাস লাগবে। আরও লোক আসবে। মুখ্যমন্ত্রী নিদ্রা ভাঙুন।
আপনি ভ্যাট কমান। কেন্দ্রের দেখানো পথে হাঁটুন। জনগণকে সুরাহা দিন।’ দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম দীপাবলির আগে প্রধানমন্ত্রী মানুষকে খুশি করলেন, দিদিও সেই রাস্তায় হাঁটবেন। দীপাবলি, ভাইফোঁটায় তো হল না। আশা করছি ছটপুজোয় কমাবেন। লোকে বাইক কিনেছেন। এতদিন ট্রেন বন্ধ করে রেখেছিলেন মানুষকে ক্ষ্যাপানোর জন্য। বাসের ভাড়া বাড়ছে বলে লোককে তাতানোর জন্য বলে বেড়াতেন। এবার কেন্দ্র তো শুল্ক কমাল, রাজ্য কমাক। উনি কমাবেন না জানি। কাটমানি খেয়ে অভ্যাস, জিনিসের দাম কি আর কাট করবেন? উনার ভাইরা গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি চেপে নাটক করেছিলেন।
এখন কোথায় তাঁরা?’ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘দিদির কানে যে পর্দা পড়ে গিয়েছে, তা ঘণ্টা বাজিয়ে খোলার জন্য আমরা একটা আন্দোলনের আয়োজন করেছিলাম। দিদিকে বলতে চাই, আপনি তো চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রীকে পেট্রোল, ডিজেলের দাম কমানোর জন্য বলেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কর্তব্য পালন করেছেন। পেট্রোল-ডিজেলে লিটার পিছু ৫ টাকা ও ১০ টাকা কমিয়েছেন। অথচ দিদি বলেন এগিয়ে বাংলা। সেই বাংলা এখন বসে থাকবে? দিদি আপনাকে উত্তরপ্রদেশ, ত্রিপুরা গোল দিয়ে চলে গেল, আর আপনি ঘুমোচ্ছেন? এদিকে আমাদের একটা ছোট আন্দোলন, দু’ তিনটে জেলার লোক এসেছে, তাঁদের ঘেরার জন্য এত পুলিশ পাঠিয়ে দিয়েছেন? এই পুলিশ যদি নিজের কর্তব্য পালন করত, তা হলে অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ এসে উগ্রপন্থী ধরে নিয়ে যেত না।
পুলিশের এখন দু’টো কাজ। এক, কালীঘাটের বাড়ি পাহারা দেওয়া এবং বিজেপিকে আটকানো। মুখ্যমন্ত্রীকে বলে রাখি, যে পেট্রোল, ডিজেলের দাম নরেন্দ্র মোদি কমিয়েছেন, আপনি তা কমাতে বাধ্য হবেন। বিজেপি থামবে না। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ১২টা রাজ্যের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে জন সচেতনতা মূলক প্রচার চালাব আমরা। মানুষকে বোঝাবো কেন্দ্রের কর কত। কেন্দ্র কতটা শুল্ক কমিয়েছে। বাংলা ২৫ শতাংশ ভ্যাট নেয়। সেখান থেকে এক পয়সা কমায়নি। এসব আমরা লিখে গলায় প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে বেরোবো। গ্রাহকদের কিছু বলতে হবে না, ওনারা গলার প্ল্যাকার্ড পড়েই সবটা বুঝে যাবেন।’