বাংলার খবর
অমরনাথে নিখোঁজ হাওড়ার তিন মহিলা, উদ্বিগ্ন পরিবার
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: শুক্রবার অমরানাথে মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে ২৫ টি পূণ্যার্থী ক্যাম্প এবং কমিউনিটি কিচেন। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৪০ এরও বেশি নিখোঁজ বলে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে হাওড়ার বাসিন্দা শিলা সিং তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে অমরনাথে গিয়েছিলেন। শুক্রবারে দুর্ঘটনার পর থেকে তাঁদেরও কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলেই জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
জানা গিয়েছে, গত ২ জুলাই হিমগিরি এক্সপ্রেসে হাওড়া থেকে অমরনাথের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন শিলা সিং (৬৮) ও ঝুমা সিং (৪৩) প্রীতি মান্না (৪০)। যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের নিয়মিত ফোনে কথা হতো। শুক্রবার বিকালেও তাঁদের সঙ্গে পরিবারের ফোনে কথা হয়েছে। কিন্তু তারপর থেকেই তাঁদের সঙ্গে ফোনে আর কোনও যোগাযোগ করার সম্ভব হয়নি। দুর্ঘটনার কথা জানার পর থেকেই আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে শিলা সিংয়ের পরিবারের সদস্যরা।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বারবার ফোনে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও এখনও পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। কোনভাবেই ওই তিনজনকে ফোনে ধরা যাচ্ছে না। যার ফলে চরম উদ্বেগের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ‘সেখানে কী পরিস্থিতি, ওরা কোন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, কিছুই জানতে পারছি না। কেন যে তাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না সেটাও বুঝতে পারছিনা আমরা।’
এই বিপর্যয়ের ফলে অমরনাথে আটকে পড়েছেন রাজ্যের বহু পর্যটক। জলপাইগুড়ির ১১ থেকে ১২ জন পর্যটক আটকে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসন যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে। তাঁরা সকলেই নিরাপদে আছেন বলে জানা গিয়েছে। অমরনাথে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আটকে-পড়া পর্যটকদের বিষয়ে খবর নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই কন্ট্রোল রুম খোলার পাশাপাশি হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কন্ট্রোল রুম নম্বর 033-22143526-এ যে কোনও প্রয়োজনে যোগাযোগ করে অমরনাথের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি যেকোনও সহযোগিতা চাইতে পারেন।
অমরনাথে ঠাৎই মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে পুণ্যার্থীদের ২৫ ক্যাম্প। শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ অমরনাথ গুহা ও কালিমাতার মাঝে হড়পা বানে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১৬ জন পুন্যার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ প্রায় ৪০। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় ওই এলাকায় প্রায় দশ থেকে বারো হাজার পূণ্যার্থী ছিলেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকার্য শুরু করেছে এনডিআরএফ, এসডিআরএফ-এর দল।পৌঁছেছে ইন্দো টিবেটান সীমান্ত পুলিশবাহিনী। উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে হেলিকপ্টার। আহত পুণ্যার্থীদের চিকিৎসার জন্য আকাশপথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্থানীয় হাসপাতালে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে অমরনাথ গুহার উপর থেকে হঠাৎ করেই প্রবল বেগে জলস্রোত নামতে শুরু করে। ঘটনাটির একটি ভিডিয়ও প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা এএনআই। তাতে দেখা গিয়েছে প্রবল স্রোতে জল ঢুকছে পুণ্যার্থী শিবিরে। ঘটনার পরই স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে অমরনাথ যাত্রা। গোটা বিষয়টি এবং উদ্ধারকার্য নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কথা বলেছেন বলেও জানা গিয়েছে। তবে জলের তোড়ে অমরনাথ ক্যাম্পের কয়েকটি লঙ্গরখানা ভেসে গেলেও বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছেন কাশ্মীরের আইজিপি বিজয় কুমার।
করোনার কারণে গত দু’বছর বন্ধ থাকার পর গত ৩০ জুন থেকে শুরু হয়েছে এবারের অমরনাথ যাত্রা। এখনও পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি পূণ্যার্থী অমরনাথ দর্শন করে ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু প্রথম থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এবারের যাত্রা। খারাপ আবহাওয়ার জন্য দু’দিন আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল যাত্রা। পুণ্যার্থীদের পহলগাঁয়ের নুনওয়ান বেস ক্যাম্প থেকে আগে যেতে দেওয়া হচ্ছিল না বলেই স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বালতাল বেস ক্যাম্পেও আটকে দেওয়া হয়েছিল পুন্যার্থীদের। শুক্রবার আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় যাত্রার অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু, বিকালেই ঘটল এই দুর্ঘটনা। এবারের অমরনাথ যাত্রা শেষ হবে আগামী ১১ আগস্ট অর্থাৎ রাখির দিন।